এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

পুরোনো মুখে আস্থা রাখলো সিপিএম। রাজ্য সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠক শেষে জাম্বো কমিটি ঘোষিত হয়েছে। ঘোষিত কমিটিতে বেশিরভাগই প্রবীণ, পুরোনো।সিপিএমে এখনও তারুণ্যের জোয়ার নেতৃত্ব চোখে পড়ছে না। কেরল হোক বা বাংলা,কিংবা ত্রিপুরা – তিন রাজ্যেই সিপিএমের ভরসা সেই পুরোনো মুখ। দেশে বিজেপি জমানায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সিপিএমের। কংগ্রেসের দিকে গোটা জীবনই পথ চেয়ে বসে থাকা সিপিএম কংগ্রেসের সাথে নিজেও ডুবেছে বিজেপি জমানায়। কেরালায়ও কোনওরকমে জ্বলছে সিপিএম। কিন্তু কতদিন কেরালায় সিপিএম ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে তা বলা মুশকিল। একটা সময় দেশে সিপিএম বেশ শক্তিশালী ছিল।
এক সময় লোকসভায় ৬২ জন সাংসদও ছিল বামেদের। তাদের এই ‘অহং’ ভাব ইউপিএ-১ জমানায় বেশি বেশি করে পরিলক্ষিত হয়েছিলো। শেষে ইউপিএ জমানায়ও কংগ্রেসের সাথে পুরো মেয়াদ ঘর করতে পারেনি সিপিএম। যার খেসারত গোটা দেশে আজও দিতে হচ্ছে সিপিএম তথা বামেদের। এরপর বাংলার চৌত্রিশ বছরের মসনদ তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে ২০১১ সালে। এরপর ত্রিপুরায় ২০১৮ সালে সিপিএমের ২৫ বছরের সাজানো বাগান ধ্বংস হয়ে যায়। ফলস্বরূপ এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না বামেরা। ক্ষমতায় থাকাকালীনই বামেদের মধ্যে একটা নেতৃত্ব সঙ্কট তৈরি হয়। যেমন পশ্চিমবঙ্গে জ্যোতি বসু জমানার পর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এরপর সিপিএমের নেতা কে? সুজন চক্রবর্তী, মহম্মদ সেলিমরা উঠে এলেও, এর পরবর্তীতে হালে মীনাক্ষী, ঐশী, শতরূপারা রয়েছেন দলে। কিন্তু এরপরেও সিপিএম কোন আশা দেখাতে পারছে না। ত্রিপুরায়ও একই হাল। ২৫ বছরের মধ্যে ২০ বছর রাজত্ব চালালেন মানিক সরকার। দ্বিতীয় কোনও নেতা নেই। যার ফল হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে রাজ্য
নেতারা। আজও রাজ্য সিপিএম দ্বিতীয় কোন যুবনেতাকে মানুষের সামনে খাড়া করতে পারেনি।
গৌতম দাস, বিজন ধর-রা যতদিন জীবিত ছিলেন ততদিন ক্ষমতার স্বাদ নিয়েছেন। এর পরবর্তীতে অঘোর দেববর্মা, জিতেন চৌধুরী, মানিক দে, পবিত্র কর, নারায়ণ কর-রা ছিলেন। বিজন ধরের পরবর্তীতে পার্টি সম্পাদক হন জিতেন চৌধুরী। ২০২৩ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস-সিপিএম জোট করেও ক্ষমতায় ফিরতে ব্যর্থ হয়েছে। পরবর্তীতে তিপ্রা মথা সরকারে যোগ দেওয়ায় সিপিএম বিরোধী দলের মর্যাদা পায়। বিরোধী দলনেতা হন জিতেন চৌধুরী। অর্থাৎ জিতেন চৌধুরী একাধারে বিরোধী দলনেতা এবং দলের রাজ্য সম্পাদকও। অর্থাৎ এক ব্যক্তি দুই পদ। এবারের রাজ্য সম্মেলনে ধরে নেওয়া হয়েছিল যে, জিতেন চৌধুরী হয়তো রাজ্য সম্পাদক থেকে সরতে পারেন, যেহেতু তিনি বিরোধী দলনেতাও। কিন্তু না, সিপিএম জিতেন চৌধুরীকেই শেষ পর্যন্ত রাজ্য সম্পাদক পদে বাছাই করল পরবর্তী তিন বছরের জন্য। এবং শুধু তাই নয়, সিপিএমের রাজ্য কমিটির দিকে তাকালেই দেখা যায় যে, পুরোনো মুখেই তারা ভরসা করেছে। দলে তারুণ্যের ভারসাম্য আনা হয়নি। চারবারের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকেও রেখে দেওয়া হয়।
সিপিএম বরাবরই বুড়োদের পার্টি হিসাবে খ্যাত। অন্যান্য দক্ষিণপন্থী দলগুলির মতো নয়, সিপিএম দলে তরুণ নেতা-নেত্রীদের যেন দল একটু ভরসা কম করে। চুলে পাক না ধরলে সিপিএমে তেমন কোনও নেতৃত্বের যোগ্যতা তৈরি হয় না বলেই নেতৃত্বের মত। এই অবস্থায় সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকশেষে রাজ্য কমিটিতে ফের পুরোনোদেরই পুনর্বাসন মিললো। তুলনায় তরুণ প্রজন্ম নেই বললেই চলে। সিপিএমে রক্তক্ষরণ যেমন ঘটছে, সিপিএম নেতৃত্ব যদি অচিরেই নেতৃত্বে বড়সড় সংস্কার না আনে তাহলে এই রক্তক্ষরণ আগামীতে আরও বাড়বে। তা কেউ আটকাতে পারবে না। সিপিএম নেতৃত্ব কী চায় তা সিপিএমকেই ভাবতে হবে। দল কি ঘুরে দাঁড়াতে চায়? নাকি দল একের পর এক ভুলের মাশুল আরও দিতে চায় ভবিষ্যতে তা সিপিএমকেই ঠিক করতে হবে।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

খুশির ঈদ উদযাপন

অনলাইন প্রতিনিধি :-"ঈদুল ফিতর" যার অর্থ হলউপবাস ভাঙার আনন্দ। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটো ধর্মীয় উৎসবের…

12 hours ago

সাব ইনস্পেক্টর অব এক্সাইজ নিয়োগে, সরকারের নিয়োগনীতি কার্যকর করছে না টিপিএসসি, ক্ষুব্ধ বেকাররা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-২০১৮ সালে নতুন নিয়োগনীতি চালু করেছে রাজ্য সরকার। ২০১৯ সাল থেকে রাজ্য সরকারের…

13 hours ago

কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যাপক প্রচার সত্ত্বেও,হাসপাতালে জনঔষধির সস্তা ওষুধ সংকটে রোগীরা বঞ্চিত!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-কেন্দ্রীয় সরকার ঢাকঢোল পিটিয়ে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সস্তায় ভালো গুণমানসম্পন্ন জনঔষধি তথা জেনারিক মেডিসিন…

13 hours ago

শান্তিরবাজারে ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন জগন্নাথ পাড়া!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-শান্তিরবাজারে সিনিয়র টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হলো জগন্নাথপাড়া প্লে সেন্টার টিম। রবিবার বাইখোড়া ইংলিশ…

13 hours ago

বামফ্রন্টের রেখে যাওয়া ১২,৯০৩ কোটি সহ,রাজ্যে বর্তমানে ঋণের পরিমাণ ২১,৮৭৮ কোটি টাকা: অর্থমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-২০২৩-২৪ অর্থ বছর পর্যন্ত রাজ্য সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২১.৮৭৮ কোটি…

14 hours ago

ক্রাইম ব্রাঞ্চের শক্তিবৃদ্ধিতে গুচ্ছ পদক্ষেপ : মুখ্যমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বিগত ছয় মাসে ত্রিপুরা পুলিশ ক্রাইম ব্রাঞ্চকে ২২টি মামলা হস্তান্তর করা হয়েছে।২০২৪ সালের…

14 hours ago