প্রকৃতির রোষ!!

 প্রকৃতির রোষ!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-২০১৬ সালের উত্তরাখণ্ড। ২০২৩ সালে হিমাচল প্রদেশ এবং সর্বশেষ সিকিম। পর্যটনখ্যাত পাহাড়ি রাজ্যগুলি কেন পরপরই প্রকৃতির রোষে পড়ে—এ প্রশ্ন নিশ্চয়ই ভাবাচ্ছে প্রকৃতিবিদদের। প্রকৃতির রোষানল থেকে বাদ যাচ্ছে না দেব।দেবতাদের পবিত্র ভূমিও।কিন্তু কেন ?

সম্প্রতি সিকিমে যে ভয়াবহ বিপর্যয়ের চিত্র প্রকাশ্যে এসেছে তা এককথায় ভয়ঙ্কর।ছোট এই পাহাড়ি রাজ্যে এ ধরনের বীভৎসতা এর আগে চোখে পড়েনি।বরাবরই কেন পাহাড়ি রাজ্যগুলি প্রকৃতির রোষের শিকার হচ্ছে?এর কারণ যদি দেখা যায় তাহলে প্রথমেই বলা যায় ক্রমবর্ধমান নগরায়ন এর জন্য মূলত দায়ী।প্রকৃতিকে নির্বিচারে ধ্বংস করে অতিরিক্ত মুনাফা আদায়ের চেষ্টাই মূলত দায়ী। তাই প্রকৃতি সুযোগ পেলেই বদলা নিচ্ছে।

যার খেসারত দিতে হচ্ছে মানুষকে।নিরীহ নাগরিকের মৃত্যু হচ্ছে। সরকারী বেসরকারী সম্পত্তি বিনষ্ট হচ্ছে।হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি নষ্ট হচ্ছে। এগুলি পুনরায় গড়তে প্রচুর সময় ব্যয় হচ্ছে।দেবভূমি উত্তরাখণ্ড,হিমাচল প্রদেশ কিংবা পাহাড়ি রাজ্য সিকিম,দার্জিলিংয়ের মতো পর্যটন স্থানগুলি হিমালয়ের কোলের শৈলশহর। একটা সময় প্রকৃতির মুখে হাসি সব সময়ই লেগে থাকতো ওই সমস্ত অঞ্চলে,কেননা পরিবেশ ছিল মনোরম, উপভোগ করার মতো।সারা বছরই মনোরম আবহাওয়া আর শীতের ২/৩ মাস বরফের চাদরে ঢাকা পড়ত শৈলশহরগুলি।এগুলি ছিল প্রাকৃতিক বৈচিত্রেরই অঙ্গ। কিন্তু এখন আর শৈলশহরগুলির সারা বছর মনোরম আবহাওয়া নেই। প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা চলে হিমালয়ের কোলে বাস করা এই পর্যটন গুলিতে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায় আমাদের পাশের রাজ্য মেঘালয়ের রাজধানী শিলংও টুরিস্টদের অন্যতম গন্তব্য ছিল একটা সময়।সারা বছর মনোরম আর আরামদায়ক প্রকৃতি ছিল।এদিকে মে,জুন, জুলাই মাসে লেপ, কম্বল, টুপি,সোয়েটার চাপিয়ে ঘুরতে হত শিলংতো।কিন্তু আজকের শিলংয়ের প্রকৃতি কী? শিলং-এর বাড়ি বাড়ি সিলিং ফ্যান, ফ্রিজ, এসি, স্ট্যান্ড ফ্যান ইত্যাদি এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তু।কেননা আবহাওয়া আর আগের মত নেই।মে জুন মাসে বেশ অস্বস্তিকর গরম।স্বভাবতই টুরিস্টদের আকর্ষণ কমছে শিলং থেকে।দার্জিলিংয়ের প্রায় একই অবস্থা।ক্রমবর্ধমান নগরায়নই এর জন্য মূলত দায়ী।দেবভূমি উত্তরাখণ্ডে ও পর্যটনস্থল কম নেই।কিন্তু ২০১৬ সালের ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেবভূমিকে আজও অনেকটা পিছিয়ে রেখেছে।সে বছর ভয়াবহ বন্যা, ভূমিধসের ভয়াবহ চিত্র গোটা বিশ্ব দেখেছে।গোটা বিশ্ব দেখেছিলো এত বন্যার পর মহাদেব বসে রয়েছেন ঠায় জলের মধ্যে।কেদারনাথ মন্দিরও অক্ষত।দেবভূমি উত্তরাখন্ড আজও খাদের কিনারায়।ক্রমাগত বাঁধ নির্মিত হচ্ছে, খনন হচ্ছে, বড় বড় প্রজেক্ট হচ্ছে।ফলে পাহাড় ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে। ফলস্বরূপ মাঝে মধ্যেই প্রাকৃতিক বিপর্যয় তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে বাড়িঘর, হোটেল, রাস্তাঘাট থেকে সরকারী সম্পত্তি, বেসরকারী সম্পত্তি ইত্যাদি। প্রকৃতির উপর যে বেজায় অত্যাচার করা হচ্ছে প্রকৃতি তা আর সইতে পারছে না। প্রকৃতি মাঝেমধ্যে বদলা নিচ্ছে।রোষের শিকার হচ্ছেন মানুষজন। কিছুদিন আগে হিমাচল প্রদেশেও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে।সরকারী, বেসরকারী সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।পর্যটনের ব্যবসা ব্যাপকভাবে মার খেয়েছে। সেভাবে পর্যটনের ব্যবসাকে চাঙ্গা করতে বড় বড় ইমারত গড়া হচ্ছে, হোটেল শিল্প গড়ে উঠছে তাতে পাহাড়ি রাজ্যগুলিতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারিয়ে যাচ্ছে। এর জন্যই মাঝেমধ্যেই পাহাড়ি রাজ্যগুলিতে অতিবর্ষণ। কিংবা অতি তুষারপাত ইত্যাদির মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে।সর্বশেষ সংযোজন হিমালয়ের কোলের আরেক রাজ্য সিকিম।সিকিম গত কয়েক বছরে পর্যটন শিল্পে ব্যাপক মনোনিবেশ করেছে। শুধু তাই নয়, কর কম থাকায় সিকিমে গিয়ে ব্যবসা নিয়ে বসছে বহু দেশি বিদেশি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলি।ফলে কারখানা হচ্ছে। বড় বড় হোটেল হচ্ছে, ইমারত গড়ে উঠছে।পর্যটক টানতে হোটেল ব্যবসার জুড়ি নেই।কিন্তু ক্রমাগত পরিবেশকে ধ্বংস করে, ইকো সিস্টেমকে বিনষ্ট করে সিকিমের মতো ছোট্ট পাহাড়ি রাজ্যে প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে।সাম্প্রতিক ব্যাপক ধ্বংসলীলা সিকিমে পরিলক্ষিত হয়েছে।রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে বিভিন্ন জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, বাড়িঘর, সেনা ছাউনি তাসের ঘরের মতো ভেঙেছে।বহু মানুষের প্রাণহানি হয়েছে।সরকারী সম্পত্তি, বেসরকারী সম্পত্তি মিলিয়ে হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি ধ্বংস হয়েছে। সবই প্রকৃতির উপর অত্যাচারের কুফল।মানবসভ্যতার ক্রমশ অগ্রগতি, মানুষের জীবনযাত্রার মান দিনকে দিন উন্নত হচ্ছে।এর জন্য প্রকৃতিকে নির্বিচারে ধ্বংস করা হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান নগরায়ন প্রকৃতির তাণ্ডবের জন্য দায়ী।সুতরাং মানবসভ্যতার এই দিকটি নিয়ে ভাববার সময় এসে গিয়েছে।পরিবেশবিদরা এনিয়ে অবশ্য বারবার সতর্ক করছেন।কিন্তু কে শোনে কার কথা।অচিরেই যদি পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি না ভাবা হয় তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড়সড় বিপদ অপেক্ষা করছে মানবসভ্যতার জন্য।রলতে হচ্ছে তাই আরও একবার “দাও ফিরে সে অরণ্য, লহ এ নগর।”

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.