প্রজন্ম বদল!!

 প্রজন্ম বদল!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ভারতের বৃহত্তম কমিউনিস্ট দল সিপিএমের ২৪ তম পার্টি কংগ্রেস মাদুরাইয়ে সম্পন্ন হয়েছে।গত ২ থেকে ৬ এপ্রিল পাঁচদিনব্যাপী মাদুরাই পার্টি কংগ্রেসে অনেক বিষয় আলোচনায় স্থান পেয়েছে।তবে সীতারাম ইয়েচুরির পর দলের উত্তরসূরী নিয়ে গত ৬ মাসের বেশি সময় ধরে পার্টিতে যে অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা চলছিল, মাদুরাই পার্টি কংগ্রেস সেই দিক থেকে দলের সংগঠনের রাশ কার হাতে যাবে, দলের নেতৃত্বে কে আসবেন- সেই অমীমাংসিত প্রশ্নের এক ইতিবাচক সমাধান খুঁজে পেয়েছে। দলের নতুন সাধারণ সম্পাদক পদে উঠে এসেছে কেরালা লবির বিশিষ্ট নেতা মারিয়াম আলেকজান্ডার বেবি।
সারা দেশে এখন সিপিএমের সাংসদ সংখ্যা মাত্র চার।কিন্তু একটা সময় ইউপিএ-১সরকারের শাসনে এই দলেরই সাংসদ সংখ্যা ছিল ৬০।ইতিহাসের হাত ধরে একটি রাজনৈতিক দলের অগ্রযাত্রা এবং অবক্ষয়ের ধারা কোন মাত্রায় যেতে পারে তার সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত সিপিএম তথা এদেশের বামপন্থীরা। এখন সংসদে সিপিএমের হাতে যে ৪টি আসন রয়েছে তার অন্যতম একটি হচ্ছে তামিলনাড়ুর মাদুরাই, আর এই মাদুরাই থেকেই বামেরা বকলমে সিপিএম নিজেদের শূন্যতা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর রশদ খুঁজতে গত ৫ দিন জোরকদমে রাজনৈতিক পাঠ ও মতাদর্শগত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোকপাত করেছে।দক্ষিণের একটি রাজ্যে সিপিএমের পার্টি কংগ্রেস আয়োজন নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ।যদিও এর আগে সিপিএমের পার্টি কংগ্রেস হয়েছে কোয়েম্বাটুর,কোঝিকোর, বিশাখাপত্তনম, হায়দ্রাবাদ এবং কান্নুরে। এবার অনুষ্ঠিত হল মাদুরাই এবং অবশ্যই এবার নিয়ে টানা ৬ বারের পার্টি কংগ্রেস হয়ে গেল দক্ষিণ ভারতে। আসলে কেরল রাজ্যে এখনও সিপিএমের নেতৃত্বে পরিচালিত এলডিএফ সরকার চালাচ্ছে। ভারতের আর কোথাও সেই অর্থে সিপিএমের শক্তিশালী উপস্থিতি নেই। অনেক আগেই বাংলা হাতছাড়া হয়েছে। ৮ বছর হয়ে গেছে, ত্রিপুরাতেও সেই লাল রাজত্ব নেই। এই দুই রাজ্যে নিজেদের শূন্যতা কাটানো বড়ই কঠিন বামেদের সামনে। এই অবস্থায় ত্রিপুরাতেই ও বাংলার বাইরে কেরল আর তামিলনাডু কিছুটা সাংগঠনিক শক্তি আছে সিপিএমের। বাদবাকি দেশে সেই অর্থে সিপিএমের প্রভাব অনেকটাই গৌণ।এই প্রেক্ষিতে রুগন একটি দল শতবর্ষের বয়সেই যেভাবে অস্তিত্বের সঙ্কটে ডুবে আছে তা থেকে দিশা খুঁজতে দলের ভার কার হাতে যাবে,কোন্ পথে দল এগোবে- এই সব প্রশ্নে সিপিএমের অন্দরে সমীকরন দানা বাঁধছিল গত ক’মাস ধরেই। আসলে গত দেড় দশক ধরে নির্বাচনি যুদ্ধে বামেদের রক্তক্ষরণ হয়েই চলেছে। গত ৫দিন মাদুরাইয়ে পার্টি কংগ্রেসে বামেদের বিভিন্ন শরিক দলের প্রতিনিধিত্বকারী নেতারা মঞ্চেও যে কথাটা বলার চেষ্টা করেছেন যে, সংসদে কিংবা বিধানসভায় বামপন্থীদের আগের মতো আর প্রতিনিধিত্ব নেই। কেন নেই তা নিয়ে আত্মসমীক্ষার কথা বলেছেন অনেকেই। জনসংযোগের ক্ষেত্রে পুরনো ভাবনা ছেড়ে নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করার কথাও আলোচনা হয়েছে। কীভাবে এগোতে হবে, তার জন্য নতুন ভাবনার প্রসঙ্গও এসেছে। তবে যে বিষয়টি লক্ষণীয়, আলোচনায় সিপিএমের কো-অর্ডিনেটর প্রকাশ কারাত তার বক্তব্যে কী ভাবে সিপিএম নির্বাচনি সাফল্যের পথে আসবে তার রোডম্যাপ না থাকলেও গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বহুমাত্রিক ফ্রন্টে লড়াই করা 6যা দরকার সেই নতুন ভাবনার কথা কিন্তু কংগ্রেসে6 গুরুত্ব পেয়েছে। নির্বাচনি লড়াই ছাড়াও হিন্দুত্ববাদী শক্তির বিরুদ্ধে আদর্শগত লড়াই, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে6 লড়াই চালাতে হবে সেই নতুন ভাবনাটি কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ। তবে সবচেয়ে বড় কথা, এম এ বেবির হাতে পার্টির ব্যাটন চলে আসার মাধ্যমে নতুন মুখের নেতৃত্বের জন্য একটি সম্পূর্ণ প্রজন্মের স্থান তৈরি হওয়ার পাশাপাশি এই পার্টি কংগ্রেস হয়তো একটি উল্লেখযোগ্য প্রজন্মগত পরিবর্তনের দিশারি হিসাবে কাজ করবে। একটি বিষয় পরিষ্কার, মাদুরাই পার্টি কংগ্রেস ভারতীয় রাজনীতিতে সিপিএমের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা, কৌশল ও প্রাসঙ্গিকতার প্রশ্নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার দিকে এগিয়ে যাবে। এম এ বেবির হাতে দলের নেতৃত্ব তুলে দেওয়ার মতো ঘটনা সেই পথেরই অনুসারী বলে মনে করা যেতে পারে। একই সঙ্গে বয়সের কারণে পলিটব্যুরো থেকে একসাথে ৬ সদস্যের সরে আসা বা বাদ পড়া নিঃসন্দেহে সিপিএমে প্রজন্ম বদলেরই বার্তা। প্রকাশ কারাত, বৃন্দা কারাত, সুভাষিণী আলি, মানিক সরকার,সূর্যকান্ত মিশ্র, জি রামকৃষ্ণনের এই বিদায় মাদুরাই পার্টি কংগ্রেসের উল্লেখযোগ্য একটা দিক।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.