প্রতিটি ঘরে আলো পৌঁছানোই আমার চ্যালেঞ্জ: রতন নাথ!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-অন্ধকার ভেদ করে এবার আলোর পথযাত্রী হয়েছেন রাজ্যের ২৭৪টি পাড়ার প্রায় ১০ হাজার পরিবারের প্রায় ষাট থেকে সত্তর হাজার মানুষ।দিনের পর দিন,মাসের পর মাস, বছরের পর বছর এরা কাটিয়েছেন অন্ধকারে। পূর্ণিমার চাঁদ আর কেরোসিনের আলোতেই তাদের জীবন কেটেছে।ভোট এসেছে।ভোট গিয়েছে। প্রতিশ্রুতিও ছিলো।কিন্তু ভোট শেষের পর এদের খবর আর কেউ রাখেনি।রাজ্যময় ছড়িয়ে থাকা এক-একটি গ্রাম যুগের পর যুগ থেকেছে বিদ্যুতের আলোবিহীন এক অন্ধকার যুগে।সরকারেরও হয়তোবা চেষ্টার ত্রুটি ছিলো না।কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে এইসব পাড়াগাঁয়ে বিদ্যুতের তার টানাও ছিলো এক দুঃসাধ্য কল্পনা।মূলত সে কারণেই রাজ্যের ২৭৪টি পাড়া রয়ে গিয়েছিল অন্ধকারে।এরা আর দলবেঁধে কোথাও গিয়ে মিছিল করতে পারেননি। ডেপুটেশনও দিতে পারেননি। ফলে এরা চির অবহেলিত, বঞ্চিতের দলে থেকে গিয়েছেন।এদের অন্ধকার জীবনে আলো নিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।আর প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নকে একের পর এক গ্রামে ফেরি করে বেড়াচ্ছেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী রতনলাল নাথ।রাজ্য মন্ত্রিসভার প্রবীণতম মন্ত্রী হয়েও পাহাড়ের চড়াই থেকে উতরাই, সমতল থেকে পাহাড়ে খুঁজে বেড়াচ্ছেন সেই অন্ধকারে থাকা গণদেবতাদের।পৌঁছে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী মোদির জনপ্রিয় প্রকল্প।বিদ্যুৎ দপ্তরের অধীনস্থ ত্রিপুরা পুনর্নবীকরণ শক্তি উন্নয়ন সংস্থার আধিকারিকদের নিয়ে অন্ধকারে থাকা গ্রামগুলিতে পিএম ডিভাইন প্রকল্পে মাইক্রো গ্রিড স্থাপনের মাধ্যমে ঘরে ঘরে আলো পৌঁছে দিচ্ছেন।এ জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে মোট ৮১ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন মন্ত্রী।তার বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিজীর আশীর্বাদধন্য এই রাজ্যে কোনও পরিবার অন্ধকারে থাকতে পারবে না।কোনও গ্রাম অনালোকিত থাকতে পারবে না।শহরের মতোই আলো জ্বলজ্বল করতে হবে প্রতিটি পাড়ায়, গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে।প্রধানমন্ত্রী ডেভেলপমেন্ট ইনিসিয়েটিভ ফর নর্থ ইস্টার্ন স্টেটস অর্থাৎ পিএম ডিভাইন প্রকল্পটি ২০২৩ সালের ২২ নভেম্বর এ রাজ্যে চালু হবার সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্যের বিদ্যুৎহীন ২৭৪টি গ্রামকেই আলোয় ভরিয়ে দেবার যাবতীয় উদ্যোগ নেন রতনবাবু।তিনি জানান, আগে এইসব পাড়ার জনজাতিরা শুধুমাত্র কেরোসিন তেল সংগ্রহ করার জন্য কম করেও কুড়ি কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে রেশনে গিয়ে এই কেরোসিন তেল সংগ্রহ করতেন।কখনও কখনও গ্রামে বাঁশের ভেতরে কাপড় ঢুকিয়ে মশাল জ্বালিয়ে রাখা হতো অন্ধকার দূর করার জন্য।এবার মাইক্রো গ্রিড স্থাপন করে প্রতিটি পরিবারকে শুধু আলোকিত করা নয়, তাদের বিনোদনের জন্য রেডিও কিংবা টিভি যাতে চালাতে পারেন, মোবাইল ফোন চার্জ যাতে করা যায়, সে ব্যবস্থা করাও শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৫টি পাড়ায় এই মাইক্রো গ্রিড স্থাপনের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। এইসব পাড়া এএন আলোময়। রতনলাল নাথ জানিয়েছেন, পাড়ার যে কোনও এক জায়গায় সোলার মাইক্রো গ্রিড বসিয়ে সেখান থেকে পাড়ার প্রতিটি পরিবারে সম্পূর্ণ সরকারী খরচে বিদ্যুতের লাইন পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।প্রতিটি পাড়ায় একটু পরপর সোলার প্যানেল বসিয়ে গ্রামকেও আলোকিত করা হচ্ছে। বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে জল উত্তোলক পাম্প,যাতে জলের অসুবিধাও তাদের দূর হয়ে যায়। প্রতিটি পরিবারে তিনটি করে লাইট পয়েন্ট ও একটি বোর্ড পয়েন্ট থাকবে, সেই বোর্ড পয়েন্ট থেকে টিভি রেডিও চালানো কিংবা মোবাইল চার্জ দেওয়া যাবে। তথ্য দিয়ে মন্ত্রী জানান, এই প্রকল্পের আওতায় ২ কিলো ওয়াট থেকে শুরু করে ৩০ কিলোওয়াট পর্যন্ত পাওয়ার প্ল্যান্ট বসানোর সুবিধা রয়েছে।যেসব পাড়ায় ছয় থেকে সাতটি পরিবার রয়েছে, যেখানে দুই কিলোওয়াটের প্ল্যান্ট বসানো হচ্ছে।১০ থেকে ১৫ পরিবার হলে ৩ কিলোওয়াটের প্ল্যান্ট হবে। ২৭৪টি পরিবারের প্রত্যেকের জন্য বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন হয়ে গেলে সূর্যালোক থেকে মোট ৩.৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে, যা প্রতি বছর ৩.০৪ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। মন্ত্রী এদিন বেশ কয়েকজন ভোক্তার সঙ্গেও তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলেছেন। এমনই এক ভোক্তরর নাম কর্তা হরি মলসম। উত্তর বড়মুড়া ভিলেজ কমিটির অন্তর্গত আগাছা ইমারুয়া গ্রামের লুথার পাড়ার বাসিন্দা তিনি। সংবাদ প্রতিনিধিকে তিনি আবেগ মথিত কণ্ঠে বলেন, কত মানুষ এলেন গেলেন। বিদ্যুৎ আর পাননি কোনওদিন। ভাবেননি এই জীবনে কোনওদিন বাড়িতে বিদ্যুতের আলো দেখবেন। কিন্তু ডবল ইঞ্জিনের সরকারের সময়ে বিদ্যুৎমন্ত্রী রতনলাল নাথের উদ্যোগে তার বাড়ি শুধু নয়, গোটা পাড়া এখন আলোয় আলোকিত। তিনি সবচেয়ে খুশি, দিনের মতো আলো রাতেও পাচ্ছেন। তার বক্তব্য, বাড়িতে লাইট জ্বলার পর কয়েকদিন তিনি ঘুমোতে পারেননি। তার মনে হয়েছে, এখনও রাত হয়নি। অনেকদিন লাইট বন্ধ করেননি রাতের বেলায়। তার কাছে নাকি দিনের আনন্দ লাগতো রাতেও। সেজন্য রাতভর লাইট জ্বালিয়ে তাকিয়ে থাকতেন এদিক-ওদিক। এখনও নাকি তার ভাবলে অবাক লাগে, রাতে কীভাবে অন্ধকার ভেদ করে এত আলো সবকিছুকে স্পষ্ট করে দেয়। এজন্য মোদিকে তিনি ভগবানের সঙ্গে তুলনা করেন। এমন আশ্চর্য আলোয় আলোকিত আরও একজন। তিনি নতুনবাজারের ভোমরাছড়া এডিসি ভিলেজের সুন্দরবন পাড়ার রঞ্জিত মাস্টার। তিনি রেগা মাস্টারের কাজ করেন বলে এলাকার মানুষ তাকে মাস্টার বলেই ডাকেন। বলেন, এ এক আশ্চর্য প্রকল্প। যে গ্রামে কোনওদিনই বিদ্যুৎ পৌঁছানোর কথা ছিলো না, সেই গ্রাম এখন বিদ্যুৎময়। শুধু আলো আর আলো। গত তিন-চার মাস আগে রতনলাল নাথের উদ্যোগে তাদের পুরো গ্রাম আলোকিত হয়েছে। এজন্য রতনবাবুর কাছে তিনি তার কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন।বলেন, এ রাজ্যে অনেক বিদ্যুৎমন্ত্রী এসেছেন আবার গিয়েছেন। কিন্তু কেউই তাদের কথা ভাবেননি।একমাত্র
ভাবলেন রতনবাবু। তাও আবার সম্পূর্ণ বিনে পয়সায় বিদ্যুৎ পেলেন। এরজন্য কোনও বিলও দিতে হবে না। বিদ্যুৎমন্ত্রী রতনলাল নাথ জানিয়েছেন, ২৭৪টি গ্রামে যেদিন মাইক্রো গ্রিড বসানোর কাজ শেষ হয়ে যাবে, প্রতিটি পরিবারে আলো জ্বলবে, প্রতিটি পাড়া রাতেও অন্ধকার ভেদ করে হাসতে থাকবে, তখন তার শান্তি। বলেন, বিদ্যুৎমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর যখন দপ্তরের কর্মীরা জানিয়েছেন, এখনও ২৭৪টি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছানো যায়নি, তখনই শপথ করেছিলাম, যেকোনও মূল্যে এই অনালোকিত গ্রামগুলোকে আলোয় ভরিয়ে দেব। এটা আমার চ্যালেঞ্জ। সেই প্রকল্পই এখন বাস্তবায়নের কাজ চলছে জোরকদমে। ইতিমধ্যে ১০টি গ্রামে আলো পৌঁছানোর কাজ শেষ হয়েছে। তার বক্তব্য, আমি চাই এই গ্রামগুলোতেও দোকানপাট গড়ে উঠুক। ছেলেমেয়েরা বিদ্যুতের আলোয় রাত জেগে পড়াশোনা করুক। পরিবারে পরিবারে রাতের বেলায়ও তাদের হস্তশিল্পের বিভিন্ন সামগ্রী উৎপাদন হোক। বসে যাক ছোটখাটো যন্ত্রপাতি। অনাবাদী জমিতেও পাম্পের মাধ্যমে জলের ব্যবস্থা করে শুরু হোক চাষাবাদ।সরকার সম্পূর্ণভাবেই তাদের পাশে থাকবে।এখানেই ডবল ইঞ্জিনের সাফল্য।মোদি মন্ত্রে বাজিমাত এখানেই।