প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবে অমিল!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

সর্বশিক্ষা শিক্ষকদের নিয়মিতকরণ আটকে দিয়ে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে যে সম্প্রতি এসএলপি দাখিলদকে রাজ্য সরকার সরকার ১০৩২৩-এর শিক্ষকদের চাকরিচ্যুতির মতো আরেকটি ঐতিহাসিক ভুল করতে যাচ্ছে?১০৩২৩ শিক্ষকদের চাকরিচ্যুতি মামলায় একই ভাবে আমলাদের পরামর্শে সরকার সিঙ্গেল বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডবল বেঞ্চে গিয়েছিলো।এরপর ১০৩২৩ শিক্ষকদের কী হাল হয়েছিলো তা সকলেরই জানা।পূর্বতন বাম সরকারের গোঁয়ার্তুমি এবং হামবড়া ভাবের কারণেই আজকের দিনে ১০৩২৩ শিক্ষকরা চাকরিচ্যুত।এদের অনেকেই এখন দুঃখকষ্টে আছেন। অনেকেই অসময়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।পূর্বতন বাম সরকার কতিপয় আমলাদের কথায় নির্ভর করে গৌহাটি হাইকোর্টের তদানীন্তন সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডবল বেঞ্চে যায়।ইত্যবসরে রাজ্যে পৃথক হাইকোর্ট হয়ে যায়।২০১৪ সালে এরপর এই মামলার রায় প্রদান করে তদানীন্তন বাম সরকারের চাকরিনীতিকে অবৈধ বলে আখ্যায়িত করেছিলো ত্রিপুরা হাইকোর্ট। পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে দুইবার শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ অ্যাড-হক হিসেবে বাড়লেও চাকরি আর স্থায়ী হয়নি। ২০২০ সালের ৩১ মার্চই ১০৩২৩ শিক্ষকদের চাকরির কফিনে শেষ পেরেকটি মেরে দেওয়া হয়।একই ভুলের পুনরাবৃত্তি কি রাজ্য সরকার করছে সর্বশিক্ষা শিক্ষকদের বেলায়?সর্বশিক্ষা শিক্ষকদেরও চাকরিতে নিয়মিতকরণের দাবি একটি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ইস্যু।২০১৭ সালে বাম সরকারের পতনের একেবারে শেষলগ্নে সর্বশিক্ষা শিক্ষকদের আন্দোলনকে একেবারে লুফে নিয়েছিলো তদানীন্তন সরকারে ‘আসবো আসবো’ করা বিজেপি।তখন সর্বশিক্ষা শিক্ষকরা ছিল বিজেপির কাছে নয়নের মণি।নির্বাচনে জিততে হলে শিক্ষকদের সমর্থন দরকার। এজন্য গালভরা সমস্ত কথা, আকাশকুসুম প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিলো ক্ষমতায় এলে সর্বশিক্ষা শিক্ষকদের নিয়মিত করা হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল রাজ্য সরকার উল্টো দিকে হাঁটছে। ত্রিপুরা হাইকোর্ট ২০২১ সালে একবার এবং ২০২৪ সালের জুলাই মাসে আরেকবার সর্বশিক্ষা শিক্ষকদের নিয়মিত করার পক্ষে রায় দিলেও রাজ্য সরকার এতে কর্ণপাতই করছে না। উল্টো কতিপয় আমলা, আধিকারিকদের কথায় মামলাটিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। সর্বশিক্ষা শিক্ষকদের নিয়মিতকরণ আটকাতেই কি সরকারের এই অভিসন্ধি? সর্বশিক্ষা শিক্ষকদের সাথে সরকারের এই বৈরিতা কেন? তারা কী অন্যায় করেছে? তাদের দাবি তো অনায্য নয়? হাইকোর্ট যেখানে রায় দিয়েছে সর্বশিক্ষা শিক্ষকদের নিয়মিত করতে গেলে টেট বা সি-টেটের কোনও প্রয়োজন নেই, আইনের পথে থেকে সরকার তাদের রেগুলার করতেই পারে।এতেতো কোনও বাধা নেই।হাইকোর্ট যেখানে বলে দিয়েছে সেখানে তো রাজ্য সরকার হাসতে হাসতে সর্বশিক্ষা শিক্ষকদের নিয়মিত করতেই পারত। সেক্ষেত্রে রাজ্যে তা ইতিহাস হয়ে থাকত।যেমনটা করেছে আসাম সহ বেশকিছু রাজ্য। সর্বশিক্ষা প্রকল্প কেন্দ্রীয় প্রকল্প।কেন্দ্রীয় সরকার এতে প্রায় পুরো অর্থই বহন করে। সেক্ষেত্রে শিক্ষকদের নিয়মিত করলে বরং শিক্ষকদের বেতনের টাকাও বাজেটে ঢুকে যেত।রাজ্য সরকার টাকা চাইলেই তা কেন্দ্র দিয়ে দিত, যেখানে কেন্দ্র রাজ্য ডবল ইঞ্জিন সরকার রয়েছে।এছাড়া কেন্দ্রীয় আইনেই বলা আছে, শিক্ষাক্ষেত্রে কোনও চুক্তিবদ্ধ শিক্ষক রাখা যাবে না। শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯ এবং জাতীয় শিক্ষানীতিতেও একই কথা বলা রয়েছে। একই স্কুলে শিক্ষকতা করছে রেগুলার টিচাররা, তারা যে চেয়ারে বসছে, সর্বশিক্ষা শিক্ষকরা একই চেয়ারে বসছে। শিক্ষা দপ্তরের এহেন কাজ নেই যে সর্বশিক্ষা শিক্ষকরা নির্বাহ করছেন না। তাহলে তাদের সাথে এই বিমাতৃসুলভ আচরণ কেন? বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রীই শিক্ষামন্ত্রী। তাকে কি ভুল বুঝিয়েই চলেছেন এক শ্রেণীর আমলা আধিকারিক। সর্বশিক্ষা শিক্ষকদের রেগুলার করলে আমলা আধিকারিকদের অসুবিধা কোথায়? তারা কেন বারবার বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন? শিক্ষকরাও তো এ রাজ্যেরই সন্তান। সবশিক্ষার শিক্ষকরা রেগুলার হলে এ প্রকল্পে কর্মরত কয়েক হাজার শিক্ষক কর্মচারী উপকৃত হবেন। তাদের পরিবার পরিজন উপকৃত হবেন। সরকার জেনেবুঝে যদি তা না করতে চায় তাহলে আলাদা কথা। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টেও যদি শেষমেষ কান কাটা যায় তাহলে কী হবে? সর্বশিক্ষা শিক্ষকদের অবস্থা কি শেষ পর্যন্ত ১০৩২৩’র মতো হবে? প্রশ্ন এখন এটিই।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

হোলিতে বিস্ফোরণ অমৃতসরের মন্দিরে !!

শুক্রবার গভীর রাতে অমৃতসরের খান্ডওয়ালার ঠাকুরদ্বারা মন্দিরের বাইরে বিস্ফোরণ ঘটে। জানা যায়, দু'জন বাইক আরোহী…

21 hours ago

বাংলাদেশের সংস্কৃতি!!

ধর্ষণ নারী নির্যাতন লইয়া এই উপমহাদেশে অধিকাংশ দেশে একই অবস্থানে চলিয়া যায় দেশের শাসক। একই…

21 hours ago

সংবাদপত্রে টেণ্ডারের বিজ্ঞাপন, সংক্রান্ত অর্থ দপ্তরের বিতর্কিত সার্কুলার ঘিরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া!!

অনলাইন প্রতিনিধি ;-রাজ্যের বর্তমানবিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিক বান্ধব বলে মুখে মুখে প্রচার…

3 days ago

বাংলাদেশের নির্বাচন!!

বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসন চলিতেছে। একটি গণ অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সেই দেশে…

3 days ago

স্মার্ট সিটি প্রকল্পের কাজে ফের বিপর্যয়, দুর্ভোগে মানুষ!

অনলাইন প্রতিনিধি :-আবারও ক্ষতি হলো পাইপলাইন গ্যাসের পরিবহণ ও সরবরাহ ব্যবস্থার।আবারও বিপর্যয় ঘটলো আগরতলায়।বিপাকে পড়লো…

3 days ago

৪ কোটি টাকা দিলেই মন্ত্রিপদ, অমিত শাহের ছেলে সেজে বিধায়কদের ফোন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-মণিপুরে বিরাট প্রতারণা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ছেলে সেজে বিধায়কদের সাথে প্রতারণার ফাঁদ।…

4 days ago