প্রত্যাখ্যানের বার্তা!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

প্রারম্ভে বিজেপির প্রত্যাবর্তন নিয়ে ভোট-পণ্ডিতেরা যতখানি সংশয়াতীত ছিলেন, নির্বাচনের পূর্বাহ্নর আগে তারাও কিঞ্চিৎ সুর বদলাচ্ছেন।এর একটি কারণ অবশ্যই প্রথম দুই পর্বে ভোটদানের নিম্নমুখী প্রবণতা। ভোটদানের হ্রাসের কার্যকারণ নিয়ে বিবিধ তর্ক হতেই পারে, তবে একটি সত্য এই যে, গোটা বিশ্বেই গণতন্ত্রের পায়ের নিচে মাটি আলগা হচ্ছে। তিন ‘ম’ অর্থাৎ মানি-মিডিয়া-মাসলম্যানের দাপট সরকার গড়ার নেপথ্যে এক্স ফ্যাক্টর হয়ে উঠছে। সেখানে প্রকৃত জনাদেশ কতখানি প্রতিফলিত হচ্ছে বলা মুশকিল। শুধু ভারত বলেই নয়,অন্যত্রও।জনমনে প্রভাব বিস্তার করতে ক্ষমতাসীন দলের যদৃচ্ছ কীর্তিকলাপ মানুষের একাংশে গণতন্ত্র সম্পর্কে বিরূপ ধারণার জন্ম দিলেও ভোটদানে ঔদাসীন্য আসতে পারে। তবে এতেও কোন ভ্রান্তি নেই যে, বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ ভোট নিয়ে এখনও শ্রদ্ধাশীল।প্রথম দুই পর্বে ভোটদানের ক্ষয়িষ্ণু হারে বিজেপি যে কিঞ্চিৎ ত্রস্ত,স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার অভিমুখ বদল অন্তত সেটাই ইঙ্গিত করে।হতে পারে এপ্রিলের তীব্র দহন তার আর একটি কারণ। তবে বিজেপির মতো অনুশাসিত দলের কার্যকর্তা এবং তাদের পরিবারবর্গ দহনের কারণে ভোটদানে বিমুখ থাকবেন, শুনতে কেমন বেমানান ঠেকে।এটা দলের চিরাচরিত ভোটব্যাঙ্কে উদ্ভুত ফাটলও হতে পারে। বিশেষত,শাসকের সর্বাধিক পোক্তা যে ঘাঁটি গো-বলয়, আরও নির্দিষ্ট করে বললে ভারতের হিন্দি বলয়ের দশটি রাজ্যে ভোটদানের কম হার
মোটেই স্বস্তির সূচক নয়। বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, ছত্তিশগড়,মধ্যপ্রদেশ, দিল্লী হরিয়ানা, রাজস্থান, হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ড।এই দশ রাজ্য নিয়েই দেশের হিন্দি বলয়। এই হিন্দি বলয়ে বিরাজ করে লোকসভার ২২৫টি আসন। পাঁচ বছর আগে এই বলয়ে রোমহর্ষক ফলাফল করেছিল বিজেপি। ২২৫টি মধ্যে ২০৩টি আসনে জয়ী হয়েছিল এনডিএ। অতীতেই লুকিয়ে থাকে ভবিষ্যতের প্রতিফলন। অতএব, গো-বলয় যে বিজেপির প্রাণভোমরা তাতে সন্দেহ কী!কিন্তু প্রথম দুই পর্বে উত্তরপ্রদেশে গতবারের চেয়ে আট শতাংশ ভোট কম পড়েছে।বিহার, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশের হিসাবও প্রায় তথৈবচ।নির্বাচন শুরুর আগে পর্যন্ত দশ বছরের তার সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি নিয়ে প্রচারে নেমেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। প্রথম দফায় ভোট কম পড়তেই উন্নয়ন ও বিকশিত ভারতের আখ্যান পর্ব থেকে সরে গিয়ে তিনি ‘ইসলামোফোবিয়া’ তথা মুসলমান জুজুকে সামনে নিয়ে আসেন। কংগ্রেস ও মুসলমানদের সমার্থক প্রতিপন্ন করতে, দেশবাসীর সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে মুসলমানদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার মতো কাল্পনিক অভিপ্রায়ের গল্প শোনান। পূর্বসূরি মনমোহন সিংয়ের বক্তব্যের অপব্যাখ্যাও করতে হয় তাকে। হয়তো এ তার ভোটের আসর গরম করার জিগির অথবা মুসলমান জুজু খাড়া করে হিন্দু ভোটের মেরুকরণের তাগিদ। কিন্তু বাস্তবে আমরা কী দেখলাম? দেখলাম, ধর্মীয় বিভাজনের চেনা ছকেও হিন্দুত্ববাদী ভোটের পালে হাওয়া উঠলো না। দ্বিতীয় দফার ভোটেও তুল্যমূল্য সাড়া দিল না। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রগুলিতে গতবারের তুলনায় ছয় শতাংশ ভোট কম পড়লো। ফলে ভোট নিয়ে মানুষের উৎসাহে যে ভাটা পড়েছে তা মানতেই হবে। অধিকন্তু, ভোটের কোনও ‘হাওয়া’ই তৈরি হয়নি, সেটিও ক্রমে প্রতীয়মান।
হাওয়া যে নেই তা প্রথম দফার ভোটের হার দেখেই মালুম হয়। হাওয়া তুলতে, মানুষকে ভোট দিতে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করতে প্রধানমন্ত্রী নিজেই আবেদন জানিয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশন গণমাধ্যমে হরেক রকম বিজ্ঞাপন দিয়ে ভোটদানের আবশ্যকতা বোঝাতে চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না। তবু ভোটার নিরুৎসাহী কেন? এর একটি ব্যাখ্যা হতে পারে, বেশি ভোেট না পড়ার অর্থ মোদির সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ নেই, হয়তো ভোটাররা ধরেই নিয়েছেন বিনা আয়াসে আয়েগা তো মোদি হি। তাই কট্টর সমর্থক ছাড়া অন্যদের ভোটদানে অনীহা তৈরি হয়েছে। হতে পারে ভোটাররা কিছুটা আত্মতুষ্টিতে ভুগছেন। যদিও পরবর্তী পর্যায়গুলিতে তা কাটানো দরকার। আবার এর পাল্টা ব্যাখ্যা হতে পারে, মোদিকে নিয়ে মানুষের উৎসাহ নিভে গেছে। সেই কারণে বিজেপির দুর্গ বলে পরিচিত কেন্দ্রগুলিতেও ভোটের হার নিম্নমুখী।

সংসদীয় গণতন্ত্রের চিরায়ত প্রথা এই যে, বিরোধীদের চেয়েও শাসকের প্রত্যাবর্তনের তাগিদ অধিক থাকে। এই যুক্তিতে ভোটদানের ক্ষয়িষ্ণু হার, মুখ্যত হিন্দি বলয়ে ‘ট্রেন্ড’ হয়ে উঠলে এমন প্রশ্ন উঠবেই যে তবে কি আমজনতার মধ্যে প্রচ্ছন্নে প্রত্যাখ্যানের বার্তা দেওয়া শুরু হল?

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

খুশির ঈদ উদযাপন

অনলাইন প্রতিনিধি :-"ঈদুল ফিতর" যার অর্থ হলউপবাস ভাঙার আনন্দ। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটো ধর্মীয় উৎসবের…

12 hours ago

সাব ইনস্পেক্টর অব এক্সাইজ নিয়োগে, সরকারের নিয়োগনীতি কার্যকর করছে না টিপিএসসি, ক্ষুব্ধ বেকাররা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-২০১৮ সালে নতুন নিয়োগনীতি চালু করেছে রাজ্য সরকার। ২০১৯ সাল থেকে রাজ্য সরকারের…

12 hours ago

কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যাপক প্রচার সত্ত্বেও,হাসপাতালে জনঔষধির সস্তা ওষুধ সংকটে রোগীরা বঞ্চিত!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-কেন্দ্রীয় সরকার ঢাকঢোল পিটিয়ে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সস্তায় ভালো গুণমানসম্পন্ন জনঔষধি তথা জেনারিক মেডিসিন…

13 hours ago

শান্তিরবাজারে ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন জগন্নাথ পাড়া!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-শান্তিরবাজারে সিনিয়র টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হলো জগন্নাথপাড়া প্লে সেন্টার টিম। রবিবার বাইখোড়া ইংলিশ…

13 hours ago

বামফ্রন্টের রেখে যাওয়া ১২,৯০৩ কোটি সহ,রাজ্যে বর্তমানে ঋণের পরিমাণ ২১,৮৭৮ কোটি টাকা: অর্থমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-২০২৩-২৪ অর্থ বছর পর্যন্ত রাজ্য সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২১.৮৭৮ কোটি…

14 hours ago

ক্রাইম ব্রাঞ্চের শক্তিবৃদ্ধিতে গুচ্ছ পদক্ষেপ : মুখ্যমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বিগত ছয় মাসে ত্রিপুরা পুলিশ ক্রাইম ব্রাঞ্চকে ২২টি মামলা হস্তান্তর করা হয়েছে।২০২৪ সালের…

14 hours ago