এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

মা এই থলেটা নাও তো’।

ব্যাগটা মায়ের হাতে তুলে দিয়েই হনহন করে কলতলায় চলে গেল সুকেশবাবু। শহর থেকে অনেকদিন পর গ্রামের বাড়িতে এসেছেন তিনি। প্রাথমিক বিভাগের শিক্ষক সুকেশ বাবু এই গ্রাম থেকেই লেখাপড়া শিখে বড় হয়েছেন। বর্গাচাষী বাবা হরিহর সরকার সাংসারিক নানা অভাব অনটন ও টানাপোড়েনের মধ্যেও ধারদেনা করে ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে খাইয়ে পড়িয়ে বড় করেছেন।

এরপর গ্রামের তৎকালীন শাসকদলীয় নেতাদের ধরে যেভাবেই হোক একটা প্রাইমারি শিক্ষকতার চাকরি জুটিয়েছেন সুকেশবাবু । বাবা – মা সেদিন খুব খুশিই হয়েছিলেন । ধর্মপরায়ণ নিরীহ হরিহর সরকার ও তার স্ত্রী ঠাকুরের চরণে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম নিবেদন করে করজোড়ে বললেন , ‘ ঠাকুর তুমি আমাদের রক্ষা করেছ । তুমি মুখ তুলে চেয়েছ ঠাকুর ! ‘ এদিকে শিক্ষকতার চাকরি পেয়ে কিছুদিন যেতে না যেতেই শহর সন্নিকটস্থ এক সুন্দরী মেয়ের প্রেমে পড়েন সুকেশবাবু। তারপর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ওই সুন্দরী প্রেমিকার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যান সুকেশবাবু।

শুরু হয় নতুন জীবন- নতুন সংসার । তারপর সুন্দরী প্রেমিকা বধুকে নিয়ে শহরেই ভাড়া থাকতে শুরু করলেন সুকেশবাবু । এখন গ্রামের বাড়িতে শুধু বয়স্ক বাবা মা । অপর দুই বোনেরও বিয়ে হয়ে গেছে । দুই – তিন মাস পর পর অবশ্য বাড়িতে আসেন সুকেশবাবু । তবে চাকরি পেয়ে বাবা – মায়ের মুখে হাসি ফোটানোর মতো এখন আর তেমন কিছু করেন না তিনি । এতে অবশ্য বাবা – মা কারোর কাছে আজ পর্যন্ত কোনও অভাব – অভিযোগ কিংবা দুঃখ প্রকাশ করেননি । তবে বাবা – মায়ের চেহারা ছবি দেখে মনে মনে একটু বিরক্ত বা একটু প্রচ্ছন্ন ক্ষোভ অনুমান করা যায় । সেদিন সুকেশবাবুর হাত থেকে থলেটা নিয়ে তার মায়ের মুখে কিছুটা কৌতূহলী খুশির ঝিলিক দেখা গিয়েছিল । তারা ভেবেছিলেন ছেলে হয়তো তাদের জন্য ভাল – মন্দ খাবার কিংবা অন্য ভাল কিছু জিনিস এনেছে । কারণ এইবার ছেলে অনেক দিন পর বাড়িতে এসেছে । সুকেশবাবু যখন তার হাতের থলেটা ঘরের দাওয়া থেকে তার মাকে ডাক দিয়ে হাতে তুলে দিচ্ছিলেন তখন তার বয়স্ক বাবাও কৌতূহল ভরে খুশি খুশি মনে তার মায়ের পিছু পিছু রান্না ঘরের কড়িডোরটায় চলে এলেন দেখার জন্য । তারপর থলে থেকে পলিথিনে মোড়ানো দু’টি প্যাকেট এক – এক করে বের করলেন তার মা । এবার প্যাকেটগুলি খুলে তার মা দেখতে পেলেন একটি প্যাকেটে আম , কাঁঠাল ও অন্যান্য ফলের জমানো খোসা আর অন্য প্যাকেটে চাউলের খুদ ও গমের ভুসি । এরই মধ্যে সুকেশবাবু ভেজা হাতমুখ মুছতে মুছতে বাবা – মায়ের সামনে খোলা প্যাকেটের ফলমূলের খোসা আর গমের ভুসিগুলি দেখিয়ে বললেন , ‘ এগুলো গরুর গামলাতে দিয়ে দাও । দুধের গাভীটার জন্য এনেছি । শহরে তো এগুলি ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হয় । ফেলে লাভ কী তাই জমিয়ে নিয়ে এলাম । গাভীটা খেলে দুধ দেবে বেশি করে । শিক্ষক ছেলের কথা শুনতে শুনতে তার দিকে ফ্যালফ্যাল চোখে নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন বাবা-মা।

——–জহরলাল দাস

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

হৃদরোগে হঠাৎ মৃত্যু: কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বর্তমান যুগে হৃদরোগ জনিত সমস্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে।এর মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক ও জীবনঘাতী…

20 hours ago

প্রশ্নের মুখে বৈধ সীমান্ত বাণিজ্য, আমদানির তুলনায় রপ্তানি নামমাত্র, পরিস্থিতি চিন্তাজনক!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বর্তমানে রাজ্যেনয়টি ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন রয়েছে।কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই নয়টি ল্যান্ড কাস্টম স্টেশনকে…

20 hours ago

আঠাশের বিধানসভা নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ থাকার বার্তা প্রদ্যোতের!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-২০২৮ সালে বিধানসভা নির্বাচনেও আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারলেই, আমাদের…

20 hours ago

হার্ভেকে নকআউট করে তপনের সেমিতে সংহতি!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-তপন স্মৃতি নকআউট ক্রিকেটের দ্বিতীয় দল হিসাবে সেমিফাইনালে হার্ভেকে নকআউট করে তপনের সেমিতে সংহতি!!খেলার…

21 hours ago

সতর্কতাই বাঞ্ছনীয়!!

নজিরবিহীন গরমের মুখোমুখি রাজ্য। মার্চ মাসের শেষ দিকে গরমের এই প্রকোপ এককথায় নজিরবিহীন।এজন্য আবহাওয়া দপ্তরকে…

21 hours ago

খুশির ঈদ উদযাপন

অনলাইন প্রতিনিধি :-"ঈদুল ফিতর" যার অর্থ হলউপবাস ভাঙার আনন্দ। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটো ধর্মীয় উৎসবের…

2 days ago