প্রত্যাশার পারদ!!

 প্রত্যাশার পারদ!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

শুরু হতে চলেছে বাজেট অধিবেশন। আগামী ৩১ জানুয়ারী সংসদের দুই কক্ষ লোকসভা এবং রাজ্যসভার যৌথ অধিবেশনে বক্তব্য রাখবেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। পরদিন ১ ফেব্রুয়ারী কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন তার বাজেট পেশ করবেন। এবারের বাজেটে অধিবেশনের প্রথম ভাগ ৩১ জানুয়ারী থেকে শুরু হয়ে চলবে ১৩ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত। আবার দ্বিতীয় পর্যায়ে ১০ মার্চ থেকে শুরু হয়ে চলবে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত। এবার নিয়ে আটবারের মতো আগামী অর্থ বছরের জন্য বাজেট পেশ করবেন নির্মলা সীতারামন। এর মধ্যে ছয়বার সম্পূর্ণ বাজেট এবং দুবার অন্তর্বর্তী বাজেট পেশা করছেন অর্থমন্ত্রী। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মোরারজী দেশাই সবচেয়ে বেশিবার বাজেট পেশ করার রেকর্ড গড়েছিলেন। এবার নির্মলা সীতারামণ সৌভরেকর্ডকেও ছাপিয়ে যাবেন।২০১৭ সাল থেকেই লাগাতার কেন্দ্রীয় বাজেট ১ ফেব্রুয়ারীতে পেশ হয়ে আসছে। গত জুলাইতে তৃতীয়বার মসনদে বসার পর মোদি সরকারের এটিই প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট। এবারের কেন্দ্রীয় বাজেট বিভিন্ন দিক দিয়েই গুরুত্বপূর্ণ। বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা ও অন্তর্দেশীয় চাহিদার অধোগতির মধ্যেই পেশ হতে চলেছে ২০২৫ এর বাজেট। অন্তত কেন্দ্রীয় সরকারের বেশ কিছু রিপোর্ট ও পরিসংখ্যান থেকেই বিষয়টি স্পষ্ট। এই অবস্থায় সাধারণ মানুষের ভোগ্যব্যয় বাড়ানো এবং মধ্যবিত্তের করের বোঝা কমানো এই দুইটি বিষয়ই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই বাজেটকে ঘিরে বিভিন্ন মহলে প্রত্যাশার পারদ ও বাড়ছে। মনে করা হচ্ছে কৃষিখাতেও থাকবে এবারের বাজেটে বেশ কিছু চমক। মাত্র কিছুদিন আগেই কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান কৃষিখাতের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সাথে আলোচনা করেছেন, কৃষকদের আয় বৃদ্ধি এবং কৃষিখাতকে আরও শক্তিশালী করার পন্থা পদ্ধতি নিয়ে। তবে বাজেটকে ঘিরে সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশায় পারদ চড়ছে আম-আদমির মনে। কারণ মূল্যবৃদ্ধি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে। সমস্ত জিনিসের দামই আকাশছোঁয়া। খাদ্যপণ্য, নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী, ভোগপণ্য সব ক্ষেত্রেই সংকট যেন আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রেখেছে সাধারণ মানুষকে। এই প্রেক্ষিতে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার বাজেটে কি দিশা দেখায় তা নিয়ে আগ্রহ চরমে। পাশাপাশি বেকার সমস্যা বর্তমান সময়ে দেশের অন্যতম প্রধান জ্বলন্ত সমস্যা। কর্মসংস্থানহীনতা, বেকারত্ব গোটা দেশের যুব সমাজকে সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এই ইস্যুতে বিভিন্ন সময়ে কংগ্রেস এবং বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে মোদি সরকারকে। তাই এবারের বাজেটে কর্মসংস্থান নিয়ে সরকার কোন বড় ঘোষণা করবেন কি না সেই দিকেও আগ্রহ বাড়ছে। আবার মধ্যবিত্তরা দীর্ঘ কয়েকবছর ধরেই কেন্দ্রীয় বাজেটের দিকে তাকিয়ে আছেন আয়করে
অন্তত ভালো একটা সুরাহা পাবেন। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে মধ্যবিত্তের এই প্রত্যাশা বাজেটে পূরণ করা হয়নি। গত কিছুদিন ধরেই গুঞ্জন চলছে মোদি সরকার এবারের বাজেটে আয়করের ক্ষেত্রে বিপুল ছাড় দিতে পরেন, যা সাধারণের উপর আয়করের বোঝা লাঘবে সাহায্য করবে। কারণ বর্তমান পরিস্থিতিতে আয়কর থেকে জিএসটি, একের পর এক করের বোঝায় নাজেহাল মানুষ। বাজেটে তার কতটা সুরাহা কেন্দ্র করতে পারবে, সেটাও একটা চ্যালেঞ্জ। ইতিমধ্যেই বিশেষজ্ঞরা আয়কর ছাড়ের উর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে মধ্যবিত্তকে অবিলম্বে সুরাহা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করেছে। বলা হয়েছে আয়কর ছাড়ের সীমা বাড়িয়ে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা উচিত কেন্দ্রের। আবার আর্থিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে বর্তমানে যে জিএসটি কাঠামো চালু আছে তা খুব একটা স্বচ্ছ নয়। যা বিনিয়োগকারীদের জন্য উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ। তাই জিএসটির হার সরলীকরণ যেমন অপরিহার্য, তেমনি পরিকাঠামোগত বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতা আনা বেশি প্রয়োজন। সব মিলিয়ে আসন্ন বাজেটকে ঘিরে বিলাসিতার চাইতেও প্রয়োজনীয়তা ও প্রত্যাশার আকাঙক্ষা এত বেশি তীব্র হয়ে উঠেছে যে রোজগার, কর্মসংস্থান, ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি এই ন্যূনতম শর্তগুলো পূরণ সরকারের প্রাথমিকতার অন্যতম মাপকাঠি হওয়া আবশ্যিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার কিভাবে জনগণের এই দাবিকে মূল্যায়ন করেন সেটাই এবারের বাজেটের বড় গুরুত্বপূর্ণ দিক।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.