প্রথমবার বাদুড় নিয়ে গবেষণার অনুমতি দিল কেন্দ্রীয় প্রাণী বিজ্ঞান দফতর!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-নিছকই আপাত নিরীহ একটি প্রাণী মনে হতে পারে।অন্ধকারে কীটপতঙ্গ ধরে খায় আর গাছের উঁচু ডালে বা গুহার ভেতরে অদ্ভুতভাবে ঝুলে, ঘুমিয়ে কাটায়।কিন্তু এই আপাত নিরীহ বাদুড়ের ‘সুপার পাওয়ার’ হল,এরা অনেকদিন বাঁচে।আর বিভিন্ন রকম ভাইরাস,ব্যাকটিরিয়াকে নিজের শরীরে অনায়াসে বহন করে বেড়াতে পারে।অথচ এই জীবাণু বাদুড়ের শরীরের কোনও ক্ষতি করতে পারে না।করোনাকালে বা অতিমারির সময়ে তাই গবেষকদের মধ্যে এই বাদুড় নিয়ে আলোচনা বারবার ঘুরে-ফিরে এসেছে।করোনার ভাইরাস এরা মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছিল কিনা তা নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে,নিশ্চিত কিছু প্রমাণ মেলেনি।তবে শুধু করোনা তো নয়,বিশ্বের বিজ্ঞানীরা মনে করছেন নিপা,হেন্ড্রা,ইবোলার মতো মারাত্মক ভাইরাস শরীরে অনায়াসে বহন করে বেড়াতে পারে বাদুড়।আরও আশঙ্কার কথা,এই বাদুড় অ্যান্টিবায়োটিককে প্রতিরোধ করতে পারে এমন ‘অপকারী’ ভাইরাসকে ও নীরবে নিজের শরীরে বয়ে বেড়ায়, যা মানুষ তথা প্রাণীকুলকে সঙ্কটে ফেলতে পারে।

এই প্রথমবার বাদুড় নিয়ে বিস্তারিত গবেষণার উদ্যোগ নিয়েছে কলকাতার বেলগাছিয়ার রাজ্য প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়।কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ‘সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ বোর্ড’ ইতিমধ্যেই তিন বছরের গবেষণার জন্য প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেছে।বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা মনে করছেন, আমাদের আশপাশে এমন অনেক প্রাণী আছে, যাদের সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান অত্যন্ত সীমিত।যারা মানুষের অস্তিত্বের নিরিখে ঝুঁকিপূর্ণ এবং ত্রাস সৃষ্টিকারী।বাদুড় এমনই একটা প্রাণী। গ্রামবাংলায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বসবাস করে।সে করোনা, নিপা, হেন্ড্রা, ইবোলার মতো মারাত্মক ভাইরাসকে দেহে জমিয়ে রাখে।প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে, খাদ্য এবং বাসস্থানের সঙ্কট হলে, এদের দেহ থেকে নিঃসৃত লালা ও মল-মূত্রের মধ্যে দিয়ে এই সমস্ত ভাইরাস পরিবেশে চলে আসে।বাদুড়ের চাটা বা আধখাওয়া খেজুরের রস, আম, পেয়ারা, জামরুলের মতো ফলে ভাইরাস চলে আসে।আক্রান্ত হয় মানুষ ও প্রাণীকুল।প্রাথমিক গবেষণায় জানা গিয়েছে, ভাইরাস ছাড়াও একগুচ্ছ জীবাণু ছত্রাক একইভাবে পরিবেশে মিশে যায়।চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ক্ষতিকর ব্যাকটিরিয়াকে।যা বাদুড় তার শরীরে নীরবে ধারণ করে মানুষ তথা প্রাণীকুলকে কতটা সঙ্কটে ফেলতে পারে।এই তথ্যতালাশ পেতেই গবেষণামূলক প্রকল্প হাতে নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের প্রাণী মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষক-গবেষকেরা।সম্প্রতি ভারত সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তরের অধীনস্থ সংস্থা সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিরিয়ারিং বোর্ডের অনুমতি পাওয়া গিয়েছে। তাদেরই অর্থানুকূল্যে আগামী ৩ বছর এই গবেষণা প্রকল্পটি ড. ইন্দ্রনীল সামন্ত ও অধ্যাপক সিদ্ধার্থ জোয়ারদারের তত্ত্বাবধানে হতে চলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে।গবেষকদের আশা, মানুষ, প্রাণী ও পরিবেশে কীভাবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটিরিয়া চলাচল করছে, এই গবেষণার ফলে সেই চিত্রটাও কিছুটা পরিষ্কার হবে। সংক্রামক রোগ চিকিৎসা আরও নতুন দিশা পাবে।প্রাণী ও পরিবেশের স্বাস্থ্যভাবনা বদলে যেতে পারে এই গবেষণায়।বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা মনে করছেন, আগামী ৩ বছর এই গবেষণা চালানোর সুবাদে বাদুড় থেকে মানুষে সংক্রমণ ছড়ানো নিয়ে অনেক অজানা তথ্য সামনে আসবে।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

11 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

11 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

1 day ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

2 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

2 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

2 days ago