প্রশাসন সংবেদী হইউক!!

 প্রশাসন সংবেদী হইউক!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

বন্যা লইয়া রাজ্য সরকারের ভূমিকা যথেষ্ট সহনশীল। গেল মাসের সর্বদলীয় বৈঠকই হউক কিংবা বিমকা যথেষ্ট সহনশীল।গেল মাসের -সকলখানেই বিরোধীদের প্রস্তাব, আলোচনা গ্রহণের ক্ষেত্রে ইতিবাচক মনোভাব তাহাদের রহিয়াছে।এই কথা স্বীকার বা অস্বীকারের পর্যায়ে নাই যে রাজ্যে এই বন্যার ভয়াবহতা অভূতপূর্ব এক ঘটনা।এই যে বিশাল ক্ষতি তাহার করাল থাবা হইতে উত্তরণের পথ এই রাজ্যের প্রশাসনের জানা নাই।তবে তাৎক্ষণিক অবস্থায় বন্যার্ত মানুষকে রক্ষায় এই প্রশাসন যে মতে ঝাঁপাইয়াছে তাহাতে প্রশাসনের সকল কর্মীকে ধন্যবাদ জানাইতেই হয়। আমরা ভয়াবহতার প্রাথমিকতা কাটাইতে পারিয়াছি ঠিকই, বন্যার আসল ধাক্কা আসিতেছে সামনে। ইহাকে মোকাবিলা করিতে হইবে এক লড়াই বা মিশনের মানসিকতায়। এই ক্ষেত্রে গোটা প্রশাসনকে সুসমন্বিত করিয়া স্পষ্ট লক্ষ্য স্থির করিয়া দিতে হইবে।
এই কথা ঠিক যে বন্যার জল সরিয়া গেলে রোগাক্রমণ শুরু হইয়া থাকে।এই রোগজীবাণু কেবল জলের নিচ হইতে উঠিয়া আসে না, জলের ওপর হইতেও আক্রমণ করিবে।পশু পাখির মৃত্যুতে জল দূষণজনিত রোগাক্রমণের পাশাপাশি সরকারী ত্রাণের ও পুনর্বাসনের টাকার প্রতি লোভজনিত আরও একপ্রকার ভাইরাস তখন দৌড়াদৌড়ি করিতে শুরু করে। ইহারা দুর্যোগের আদিকাল হইতেই রহিয়াছে। ইহাদের গতিবিধ বড় ভয়ঙ্কর। ইহাদের আক্রমণের শিকার হইয়া থাকেন প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ, যাহারা ত্রাণ, পুনর্বাসনের কাজে ন্যস্ত থাকেন।তাই ঐ সকল ব্যক্তিকে যেমন সাবধান থাকিতে হইবে তেমনি প্রশাসনের এই ব্যক্তিদের ওপর নজরদারি রাখাও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়িয়া থাকে।সরকারের সহনশীল ভূমিকা যাহা বিধানসভায় দেখা গেছে তাহাতে আশ্বস্ত হওয়া যায় যে সরকার বিরোধীদের প্রস্তাবগুলি গ্রহণ, ককরিয়া সর্বোতকৃষ্ট কোনও সিদ্ধান্ত তাহারা লইবে।বিরোধীরা বিধানসভায় যেই সকল প্রস্তাব রাখিয়াছেন মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে ট্রেজারি বেঞ্চের বরিষ্ঠ ও মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় মন্ত্রী হিসাবে কৃষি ও বিদ্যুৎমন্ত্রী রতন লাল নাথ সাগ্রহে প্রস্তাবগুলি গ্রহণ করিয়াছেন এবং এই সকল প্রস্তাব মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনার জন্য উত্থাপন করিবেন বলিয়া জানাইয়াছেন।বিরোধীরা যে সকল প্রস্তাব রাখিয়াছেন তাহার মধ্যে টাস্ক ফোর্স গঠন একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব। ত্রাণ, পুনর্বাসনের কাজে সর্বাগ্রে দরকার প্রশাসনিক সমন্বয়।এই সমন্বয় মহকুমা এবং ব্লক স্তরেই হওয়া দরকার। ইহার সহিত ত্রিস্তর পঞ্চায়েতকেও যুক্ত করা যাইতে পারে সম্ভবক্ষেত্রে।
বিধানসভায় রতনবাবুর যে জবাবি বক্তব্য শোনা গিয়াছে তাহাতে রাজ্যে আট জেলায়ই কমবেশি কৃষকেরা সর্বস্বান্ত হইয়াছেন।একদিকে তাহাদের দিন গুজরান যেমন আজ প্রশ্নের মুখে আসিয়া গিয়াছে তেমনি তাহাদের অধিকাংশেরই চাষজমি পলি বা বালির চরার নিচে চলিয়া গিয়াছে।জমি হইতে এই চরা বা বালি যত তাড়াতাড়ি সরানো যায় ততই মঙ্গল, অর্থাৎ তত তাড়াতাড়ি পরবর্তী ফসলের দিকে তাহারা অগ্রসর হইতে পারিবেন।এই কাজগুলি একা এক কৃষকের পক্ষে সম্ভব নহে।তাই এই সময়ে প্রয়োজন এমজিএন রেগার মত প্রকল্পের।কৃষকের অন্নসংস্থানের ব্যবস্থার পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে যেমন অর্থের জোগান হইবে তেমনি তার চাষের জমি, যাহা প্রকারান্তরে রাষ্ট্রের সম্পদ বা প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির অস্ত্র ইহার পুনরুদ্ধার ঘটিবে।
কিন্তু এমজিএন রেগার কাজ দিতে গেলে স্বাভাবিক ক্ষেত্রে নিয়মে বাঁধন রহিয়াছে।সেই বাঁধন লঘু করা সম্ভব যদি রাজ্যকে প্রাকৃতিক দুর্যোগগ্রস্ত বলিয়া ঘোষণা করা হইয়া থাকে।সেই ক্ষেত্রে বিরোধীরা রেগার কাজ চালুর যে প্রস্তাব রাখিয়াছে তাহা এই রাজ্যের আর্থিক অবস্থানের দিক হইতে সঠিক।দেশে এই আইনের বিকল্প কোনও পথ নাই গ্রামীণ কর্মসংস্থানের জন্য। বিধানসভায় বিরোধী সদস্যরা অন্য যে সকল প্রস্তাব রাখিয়াছে তাহার দীর্ঘ তালিকার মধ্যে একটি অতি প্রয়োজনীয় হইলো ঋণ।প্রায় প্রত্যেক কৃষকেরই ঋণ রহিয়াছে।আমন ধানের জন্য যাহারা ঋণ লইয়াছিলেন তাহাদের টাকা সকলই জলে ভাসিয়া গিয়াছে।সেই ঋণ অধিকাংশই বেসরকারী লগ্নি সংস্থা বা ব্যাঙ্কের।বেসরকারী লগ্নি সংস্থার লোকজন এখনো কৃষকের উঠানে যাইতেছে না, কারণ উঠান পলি ও জলে কর্দমাক্ত। তবে ইহারা অচিরেই যে ঋণের তাগদায় গ্রামে ঢুকিবে ইহাতে সন্দেহ নাই। বন্যায় সর্বস্বান্ত এই সকল ঋণগ্রস্ত কৃষকদের জন্য সরকারের ভাবনা থাকিতে হইবে। অর্থাৎ কেবল সহনশীলই নয়, ত্রিপুরাকে এই চরম বিপর্যয়ের হাত হইতে তুলিয়া ধরিতে সরকারকে সংবেদীও হইতে হইবে। অন্যথায় মানুষ প্রতিদিন একটু একটু করিয়া মরিতে থাকিবে।
বিরোধীরা এই ক্ষেত্রে ঋণ মুকুবের প্রস্তাব রাখিয়াছে। সরকারী ঋণ মুকুব সম্ভব, বেসরকারী ঋণের জাল কীভাবে ছিন্ন করিবে বন্যার্ত মানুষের দল?এই লইয়া সকল স্তরের ভাবনা দরকার। তবে এই সময়ে এইটুকু সরকারকেই করিতে হইবে, রাজ্য সরকারের অনুমোদন লইয়া যে সকল বেসরকারী লগ্নি বা ব্যাঙ্ক সংস্থা গ্রামের মানুষকে সহজ শর্তে চড়া সুদে ঋণ দিয়াছে এবং গত দীর্ঘকাল ধরিয়া রাজ্যে তাহাদের ব্যবসা চালাইয়া আসিতেছে এই বন্যার পর তাহাদের ঋণ পরিশোধের সময়কাল শিথিল করাইতে হইবে।অন্যথায় সরকারী পুনর্বাসনের অক্সিজেনেও বাঁচিবে না বন্যার্ত মানুষ। এর প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সরকারের মঞ্জুরি বৃদ্ধির কথাও হইতে পারে। তবে এই কথা এখন অপ্রাসঙ্গিক। এখনো ত্রাণ-পুনর্বাসনের কাজ শুরুই হয় নাই।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.