প্রশ্নচিহ্নে সমন্বয় !!

অনলাইন প্রতিনিধি :- ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটপর্ব শুরু হচ্ছে আগামী ১৯ এপ্রিল থেকে। প্রার্থী ঘোষণা, জোটসঙ্গীদের সাথে আসন সমঝোতা সহ গোটা ভোট ম্যানেজমেন্টের প্রশ্নেই বিজেপির তুলনায় অনেকটাই যেন পিছিয়ে কংগ্রেস শিবির। জোট গঠিত হওয়ার পর সঙ্গীদের মধ্যে আসন সমঝোতা মিটে গেলেও নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ে যেন কোনও একটা আড়ষ্টতা এখনও রয়ে গেছে। অথচ এনডিএ শিবির তুলনায় অনেকটাই প্রাণবন্ত। যদিও নামে এনডিএ হলেও বিজেপি যে এক্ষেত্রে মূল চালিকাশক্তির আধার, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই যখন লোকসভার নির্বাচনে দেশজুড়ে রাজনৈতিক পরিমণ্ডল, ঠিক তখনই নির্বাচনি ইস্তাহার তৈরি ও ঘোষণার ক্ষেত্রে বিজেপিকে অনেকটা অস্বস্তিতে ঠেলে দিয়েই অগোছালো কংগ্রেস শুক্রবার ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের দলীয় ইস্তাহার প্রকাশ করে দিল। শাসককে টেক্কা দিয়ে, ইডি-সিবিআহিয়ে জেরবার কংগ্রেসের এই ইস্তাহার প্রকাশ, নিঃসন্দেহে গেরুয়া শিবিরকে খানিকটা হলেও হতভম্ব করে দেওয়ার মতোই ঘটনা। এবার কংগ্রেসের ইস্তাহারের মূল থিমই হচ্ছে ‘ন্যায়’। তাই ইস্তাহারের নাম দেওয়া হয়েছে ন্যায়পত্র। দিল্লীতে দলের সদর দপ্তরে ইস্তাহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে দলীয় সভাপতি সহ গান্ধী পরিবারের তাবড় নেতা সকলেই উপস্থিত ছিলেন। যদিও এখনও পর্যন্ত ৫৪৩ আসনের লোকসভায় কংগ্রেস ২৩৫ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের জন্য বেশ কিছু আসন ছেড়ে রেখে। কংগ্রেস সর্বসাকুল্যে ৩২৫-এর মতো আসনে প্রার্থী দাঁড় করাবে। পরিসংখ্যানের নিরিখে, এটাই হয়তো সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে সর্বকালের কম সংখ্যক আসনে কংগ্রেসের লড়াই। ২০১৯ সালে সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে হাত শিবির ৪২১ আসনে লড়াই করেছিল। যদিও ইন্দিরা গান্ধীর সময়কাল পর্যন্ত দল প্রায় ৪৯০ এর মতো আসনে প্রার্থী দিত। তবে ইন্দিরার মৃত্যুর পর ১৯৮৪ থেকে টানা চারবার কংগ্রেস শিবির ৫০০-এর বেশি আসনে লড়াই করেছে। এই পরিসংখ্যানেই পরিস্কার, শতাব্দী প্রাচীন একটি দল তথা দেশের সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দল হিসাবে অস্তিত্বের বড়সড় সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে কংগ্রেসকে এবার লড়াই করতে হচ্ছে। এই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে কংগ্রেসের ইস্তাহার তথা ন্যায়পত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে শাসক শক্তিকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়া যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবাহী ঘটনা। ৪৮ পৃষ্ঠার কংগ্রেসের ইস্তাহারের মূল সুর প্রধানত তিনটি বিষয়কেই বারবার স্পর্শ করেছে। যেমন, কাজ-সম্পদ এবং কল্যান। তাই দলীয় ন্যায়পত্র-ন্যায়বিচারের যে পাঁচটি স্তম্ভকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তাতে যুব ন্যায়, নারী ন্যায়, কিষান ন্যায়, শ্রমিক ন্যায় এবং অধিকারের ন্যায়ের উপরই বার্তা দেওয়া হয়েছে। ইস্তাহার থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার, কংগ্রেস দেশে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্যে দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা মহিলাকে যেমন হাতিয়ার করেছে, তেমনি দেশে বেকার শিক্ষিত যুব সমাজকে আর্থিক স্বয়ম্ভর করতে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই ৫ বিষয়ই যে পাখির চোখ কংগ্রেস দলের প্রতিশ্রুতির গ্যারান্টির মধ্যেই তা পরিষ্কার। নারী ন্যায়ের মাধ্যমে মহিলা স্বশক্তি করণের কথা যেমন বলা হয়েছে, তেমনি নারী ন্যায়ের অধীনে মহালক্ষ্মী যোজনায় দরিদ্র পরিবারের মহিলাদের বছরে ১ লক্ষ টাকার আর্থিক সহায়তার কথাও রয়েছে। ‘আধি-আবাদি পুরো হক’ প্রকল্পে সরকারী চাকরিতে মহিলা সংরক্ষণ এবং শক্তি কা সম্মান-এর মাধ্যমে আশা, অঙ্গনওয়াড়ি মিড ডে মিল রান্না কর্মীদের মাসিক বেতন বৃদ্ধি করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এছাড়া অধিকার মৈত্রী এবং সাবিত্রী বাঈ ফুলে হস্টেল-নারী শক্তিকে সমৃদ্ধির দ্বার খুলে দেওয়ার কংগ্রেসের বার্তারই অঙ্গ মনে করা হচ্ছে। আসলে কংগ্রেস দলের ন্যায় প্রতিশ্রুতির প্রতিটি বিষয়ের সঙ্গেই আর্থিক প্রভাব জড়িয়ে রয়েছে সরাসরি সাধারণ মানুষের সাথে। মনে করা হচ্ছে, ২০১৯ সালে দেশে লোকসভা নির্বাচনের সময় কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতির একটি অন্যতম দিক ছিল ন্যূনতম আয় সহায়তা কর্মসূচি। এবার কংগ্রেসের প্যাঁচ ন্যায় কর্মসূচিতে যে মহালক্ষ্মী প্রতিশ্রুতির কথা বলা হয়েছে, তা হল সেই পূর্বতন ঘোষণার আরও ব্যাপকতর প্রসার মাত্র। বেকারদের ন্যায় দিতে ৩০ লক্ষ সরকারি চাকরি, মহিলাদের সরকারী চাকরিতে ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ, জাতিগত জনগণনার ভিত্তিতে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত জাতিভিত্তিক সংরক্ষণ, মোদির শাসনে চালু অস্থায়ী ‘অগ্নিবীর’ নিয়োগ কর্মসূচি বাতিল, ২৫ বছরের কমবয়সি স্নাতকদের ১ বছরের সবেতন ইন্টার্নশিল্প, কৃষকদের জন্য এমএসপি’র আইনি গ্যারান্টি কিংবা জম্মু কাশ্মীরকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া-সব গুলো ইস্যুতেই ইস্তাহার কংগ্রেস যে ন্যায়ের বন্যার কথা বলেছে, ভোটের বাক্সে এই মনমোহিনী প্রতিশ্রুতি কতটা প্রভাব ফেলবে। সেটা আগামীদিনই বলবে। তবে ইন্ডিয়া জোটে সঙ্গীদের মধ্যে সমঝোতা হলেও সমন্বয় যে এখনো অধরা সেটা কিন্তু বড় প্রশ্নচিহ্ন।
