প্রশ্নের মুখে টিআরইএসপি প্রকল্প, ঘুমোচ্ছে উপজাতি কল্যাণ দপ্তর বিশ্বব্যাঙ্কের টার্গেট পূরণে ব্যর্থ।।

 প্রশ্নের মুখে টিআরইএসপি প্রকল্প, ঘুমোচ্ছে উপজাতি কল্যাণ দপ্তর বিশ্বব্যাঙ্কের টার্গেট পূরণে ব্যর্থ।।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-২০২৪-২৫ আর্থিক বছরে বিশ্ব ব্যাঙ্কের দেওয়া টার্গেট পূরণে পুরোপুরিভাবে ব্যর্থ টিআরইএসপি। এর নেপথ্যে রয়েছে দুর্বল প্রশাসন পরিচালনা। অভিযোগ, টিআরইএসপির প্রকল্প অধিকর্তা এবং ওই প্রকল্পের চিফ অপারেটিং অফিসারের অকর্মণ্যতায় মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ। ওই দুই আমলার যুগলবন্দিতে রাজ্যের উপজাতিদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে টিআরইএসপির মাধ্যমে ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরের বরাদ্দ অর্থ ব্যয়ে পুরোপুরিভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে রাজ্যের উপজাতি কল্যাণ দপ্তর। ১৪০০ কোটির টিআরইএসপি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় বছরে। সেই হিসাবে ২৩৩ কোটি টাকা প্রতি বছর প্রকল্পের বাস্তবায়নে ব্যয় হওয়ার কথা।কিন্তু দেখা গেছে ওই প্রকল্প শুরুর এক বছর `পর রাজ্য উপজাতি কল্যাণ দপ্তর প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারিত অর্থের কুড়ি শতাংশ অর্থ ব্যয় করতে পুরোপুরিভাবে ব্যর্থ।যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় দেখানো হয়েছে তাতে এর অধিকাংশই টিআরইএসপির কর্মচারীদের বেতন বাবদ চলে গেছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে খবর, বিশ্ব ব্যাঙ্ক থেকে ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরে ৩২৫টি প্রযোজক গোষ্ঠীর (পিজি) জন্য বাবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি করে ওই প্রযোজক গোষ্ঠী (পিজি) গুলিকে এককালীন ৬.৫০ লক্ষ টাকা তহবিল প্রদানের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছিল রাজ্য উপজাতি কল্যাণ দপ্তরের অধীনে পরিচালিত টিআরইএসপি-এর কর্তৃপক্ষকে।সেই জায়গায় টিআরইএসপি মাত্র পঞ্চাশটি প্রযোজন গোষ্ঠী (পিজি) ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। অর্থাৎ বিশ্ব ব্যাঙ্কের দেওয়া টার্গেটের মাত্র পনেরো শতাংশ পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। জেলা, ব্লক এবং সিএলএফ স্তরে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা সময়মতো তৈরি না হওয়ার ফলে বিশাল সংখ্যক প্রযোজক গোষ্ঠী (পিজি) ওই ব্যবসায়িক তহবিল পায়নি বলে অভিযোগ। সবচেয়ে মারাত্মক যে বিষয়টি সামনে এসেছে তা হলো, ত্রিপুরা উপজাতি কল্যাণ দপ্তর পঞ্চাশটি প্রযোজক গোষ্ঠী (পিজি) এর মধ্যে ৩.২৫ কোটির জায়গায় ৫.৭৫ কোটি টাকা টিআরএলএমকে ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে প্রদান করে দিয়েছে। অর্থাৎ প্রযোজক গোষ্ঠীর (পিজি) ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরির আগেই টিআরএলএমকে ত্রিপুরার উপজাতি কল্যাণ দপ্তরের টিআরইএসপি থেকে অতিরিক্ত দুই কোটি টাকা দিয়ে দিয়েছে। সূত্রের মতে টিআরইএসপি-এর অধীনে বিশ্ব ব্যাঙ্কের তহবিল ব্যবহার করে ষোলটি স্কুল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, যার মধ্যে তেরোটির জন্য বিস্তারিত প্রকল্প প্রতিবেদন (ডিপিআর) প্রস্তুতও করা হয়েছে। কিন্তু দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে মাত্র চারটি স্কুলের কাজের জন্য। ওইগুলির নির্মাণকাজ চললেও বাকিগুলির কাজ অধরা। ধীরগতিতে কাজের ফলে ষোলটি বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজ সময়মতো সম্পূর্ণ হয়নি। এর জন্য পূর্ত দপ্তরকে ইতিমধ্যে ১,০৪২ লক্ষ টাকা প্রদান করেছে বলে খবর। প্রয়োজনীয় অর্থ পাওয়া সত্ত্বেও রাজ্যের পূর্ত দপ্তর ধীর গতিতে কাজ করলেও এ নিয়ে উপজাতি কল্যাণ দপ্তরের কোনো হেলদোল নেই। অভিযোগ, প্রতিমাসে মোটা অঙ্কের বেতনে টিআরইএসপির বাস্তবায়নে ১৫০-এর অধিক কর্মচারী নিয়োগ করা হলেও ওই সকল কর্মচারীরা সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে না। ফলে পর্যাপ্ত অর্থের সংস্থান থাকা সত্ত্বেও ওই সকল কাজ অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগেই বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিদের নেকনজরে পড়ার প্রহর গুনছে। অভিযোগ, এই সবকিছুর মূলে রয়েছে টিআরইএসপির প্রকল্প অধিকর্তার দুর্বল প্রশাসন পরিচালনা। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে প্রকল্পের এক যুগ্ম অধিকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সচিবের দায়িত্ব পরিবর্তন করলেও অধিকর্তা বদলে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে। আর এতে রাজ্যের উপজাতিদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে শুরু হওয়া টিআরইএসপি বাস্তবায়নের কাজ একপ্রকার থমকে রয়েছে। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের অভিমত, টিআরএসপির সফল বাস্তবায়ন করতে হলে প্রথমেই ওই প্রকল্পের বর্তমান প্রকল্প অধিকর্তাকে সরিয়ে অন্য কাউকে প্রকল্পের অধিকর্তা পদে দায়িত্ব দেওয়া দরকার। পাশাপাশি টিআরইএসপির বাস্তবায়নে নিযুক্ত যেসকল কর্মচারীরা নিজেদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ তাদের বিরুদ্ধেও অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। তবেই আগামীদিনে টিআরইএসপির মাধ্যমে কাঙিক্ষত সাফল্য আসবে। অন্যথায় বিশ্ব ব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তায় শুরু হওয়া টিআরইএসপির স্থান হবে ইতিহাসের পাতায়।এমনটাই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.