প্রাক্তন- বর্তমান

 প্রাক্তন- বর্তমান
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর পদমর্যাদা লইয়া দিনে দিনে বিতর্ক বাড়িতেছে । বিতর্ক রহিয়াছে , এইবার প্রাক্তনকে কি দায়িত্ব সম্পাদন করিতে বলিবে দল ? এই প্রশ্নের জবাব জানিবার উপায় রাজ্যদলের কাহারো নাই । যিনি জানিতে পারিবেন বা পারেন তিনি তো আবার ইদানীং -দলের সর্বময় নেতৃত্বের নির্দেশে পদ ছাড়িয়াছেন । বস্তুত তাহাকে কী কারণে পদ ছাড়ানো হইলো তাহার কারণই আজ অবধি জানিলেন না নেতা কর্মীরা । তাঁহারা ততটাই জানিয়াছেন — রাজভবনে পদত্যাগ করিয়া বাহিরে আসিয়া বিপ্লব দেব যতটা বলিয়াছেন , ব্যস । বিপ্লববাবু বলিয়াছেন তিনি রাজ্যে দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিতে কাজ করিয়া যাইবেন ।দল তাহাকে যেই দায়িত্ব দেয় তিনি সেই পালন করিবেন । পরে দিনে দিনে বলিলেন , প্রজেনে প্রমুখের কাজও তিনি করিতে রাজি যদি দল সেই দায়িত্ব পাঠায়। দলের প্রতি তাহার আনুগত্য সর্বজন সুবিদিত । আজ যাহা বলিতেছে তাহাতে দিল্লীর সর্বময় কর্তৃক যে তাহার ওপর প্রীত থাকিবেন তাহাতে সন্দেহ নাই ।

আর এই ঘটনা দলের ভেতর এবং বাহিরের সাধারণ মানুষকে আবারও বিভ্রান্তিতে ফেলিতেছে । এমন কী কারণ ঘটিয়াছে যে তাহাকে প্রাক্তন তকনা পাইতে হইলো ? তাহার প্রতি বিশ্বাসের কারণে কয়েক মাস আগে দল ভাঙ্গিয়া যাওয়াকেও মানিয়া লইয়াছিলেন দিল্লীর নেতারা । আবার মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে এমন নি কোন কারণ আসিয়া গেল ? প্রশ্ন আসিতেছে যদি বিপ্লব কুমার দেবের সাংগঠনিক নেতৃত্বেই পরবর্তী নির্বাচন গাইতে চাহে দল তাহা হইলে রাজ্য সভাপতির আসনেই বা তাহাকে কেন স্থলাভিবিক্ত করা হইতেছে না । এই সকল প্রশ্নের জবাব খুঁজিলেও কাহারও পক্ষে জবাব পাওয়া সম্ভব নহে ।তাহা বলিয়া দলের সুবিধাভোগীরা কি চাটুকারিতা ছাড়িরা চুপ বলিয়া থাকিবেন ? তাঁহারা চুপ থাকিতে পারেন না , কারণ হিসাব আসিতেছে ২০২৩ – এর ভোট ২০২২ -এই আগাইয়া আসিতেছে । হয়তো ভোটের আর সাত মাসও বাকি নাই । তাই আবারও দলের টিকিট পাওয়া কিংবা অন্যান্য দলীয় সুযোগ সুবিধার সরবরাহ অব্যাহত রাখিতে বিপ্লব কুমার দেবকে স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গেও তুলনা শুরু হইয়াছে । কেহ কেহ বলিতেছেন , বিপ্লব কুমার দেবের নেতৃত্বেই ২০২৩ সালে বিজেপি সরকার পুনর্গঠিত হবে এবং মুখ্যমন্ত্রী হইবেন খোদ বিপ্লব দেব ।যাহারা অপ্রয়োজনে এই সকল চাটুকারিতা করিতেছেন তাঁহারা ভালোই জানেন গত চার সাড়ে চার বছরে তাঁদের যে পারফরম্যান্স তাহাতে পরেরবার তাহাদের টিকিট পাওয়া অনিশ্চিত । বিপ্লব দেব দয়া করিলেই কেবল টিকিট পাইতে পারেন । ফলে তাঁহারা নিজ স্বার্থসিদ্ধি করিতে গিয়া বারবার ভুলিয়া যাইতেছেন মুখ্যমন্ত্রীর মর্যাদাপূর্ণ আসনে এই সময়ে অন্য একজন আসীন । তিনি জননির্বাচিত না হইলেও গাঙ্গের জলে তো ভাসিয়া আসেন নাই । তিনি বিপ্লব দেবের পছন্দের হইলেও তাহার মুখ্যমন্ত্রিত্ব আসিয়াছে দিল্লীর সর্বময় নেতৃত্বের ইচ্ছায় । দেখা গিয়াছে গত সাত আট দিনে যেই সকল সরকারী অনুষ্ঠানে বিপ্লব দেব মঞ্চে ছিলেন সেই মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার ছবি লাগানো থাকিলেও তাহার নাম কোনও বক্তাই বিশেষ উচ্চারণ করিতেছেন না । বিপ্লব দেব ভজনাতেই তাহারা কাতর থাকিতেছেন । ঘটনা যতক্ষণ পর্যন্ত বিজেপির দিল্লী হেডকোয়ার্টার আর আগরতলার কার্যালয়ের অভ্যন্তরে আবদ্ধ থাকিতেছে ততক্ষণ বিষয়খানা বিজেপির অন্দরের বলিয়া মানিতে হইবে এবং তাহাদের দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় লইয়া কথা বলাটা অনেকাংশে অনধিকার চর্চা বলিয়া গণ্য হইবে । কিন্তু সরকারী মঞ্চে যখন আসিয়া যায় তখন তাহা খাস সম্পত্তির মতন সর্বজনীনতা পায় । মানুষ দেখিতেছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব আর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের পদমর্যাদা একই রকম । ইহা কী করিয়া হইতে পারে ? প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবের প্রাক্তনকে কিন্তু মানুষ ২০ বৎসর ধরিয়া মুখ্যমন্ত্রী পাইয়াছিলেন । গত সাড়ে চার বছর ধরিয়া তাহারা প্রাক্তনী পদমর্যাদাও দেখিয়া চলিয়াছেন । আবার কুড়ি বৎসরের মুখ্যমন্ত্রীর আমলেও তাঁহার প্রাক্তনের পদমর্যাদা তাহাদের স্মৃতি হইতে পুরাপুরি মুছিয়া যায় নাই ।বিরোধী দলসকল এই লইয়া সরব হইতেছে দিনে দিনে । কাহারো প্রশ্ন , রাজ্যে কি সমান্তরাল প্রশাসন চলিতেছে ? প্রাক্তন নাকি সরকারী আধিকারিকদের নির্দেশ পাঠাইতেছেন কোথায় কোথায় তাঁর সভার জন্য সরকারী মঞ্চ গড়িতে হইবে । আবার তাহার এসকর্টের বহর সরকারী আবাস ব্যবহার লইয়া বিরোধীরা ক্ষমতার অপব্যবহার বলিতেছেন । আদালতে যাইবার কথা বলিতেছেন । প্রশ্ন তুলিয়াছেন , প্রাক্তনের কপ্টার ভাড়া লইয়া । এই সকল বিভ্রান্তি আর বিতর্কের সমাধান করিবে কে ? নিশ্চয়ই এই দায়িত্ব তাহাদেরই , যাহারা বি লব দেবকে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়াছিলেন এবং এক রকম বিনা নোটিশে দায়িত্ব কাড়িয়া লইয়াছেন । তবে প্রসূতিদের পুষ্টি প্রকল্পে আসন্ন প্রসবাকে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে সাধভক্ষণের কার্যক্রম আরও চালাইয়া যাওয়া কিনা এই লইয়া প্রাক্তনের নিজেকেই ভাবিতে হইবে । কারণ দেশীয় সংস্কৃতিতে ইহা একটি ঘরোয়া মেয়েলি অনুষ্ঠান , যেই অনুষ্ঠানে পুরুষের প্রবেশাধিকার থাকে না ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.