প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর আবাসন বিতর্ক, আইন বলছে বৈধ
রাজ্য বিধানসভার আইন মোতাবেক রাজ্যের কোনও বিধায়াক যদি একটানা চার বছর বা তার বেশি সময় মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন থাকেন, তাহলে তিনি আজীবন বিনামূল্যে সরকারি আবাসন(বাড়ি) পাওয়ার যোগ্য। শুধু তাই নয়, মৃত্যুর পরও পরিবারের সদস্য-সদস্যারা তিন মাস পর্যন্ত ওই সরকারি আবাসনে থাকতে পারবে। এখানেই শেষ নয়, ওই সরকারি আবাসনে যদি অন্য কোনও স্টাফ কোয়ার্টার, বিল্ডিং, বাগান যা কিছুই থাকে তা সবকিছুই ভগ করতে পারবে। আবাসন সংস্কারের জন্য প্রতিমাসে ২৮৮০ টাকা করেও সরকারের কাছ থেকে পাবে, যতদিন এই বাড়িতে (আবাসনে) থাকবে।
আইনটি হচ্ছে, “The Salaries, Allowances, pension and other benifits of the Ministers, Speaker, Deputy Speaker, Leader of opposition, Governmment Chief Whip and the Members of the Legislative Assembly (Tripura) Act 2008. এই আইনটি অনেক আগে থেকেই কার্যকর রয়েছে। ২০০৮ সালে পূর্বতন বাম সরকার আইনটিতে কিছু সংশোধনী আনে। সেই আইনই এখনও চালু আছে। এই আইনের ১৫ নং ধারার ৪(এ) উপধারায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে “The person who had held the office of the Chief Minister for a Period of four years or more shall be entitled without and payment of the rent to the use and maintenance of an unfurnished residence throughout his lifetime”.
এই ধারারই (বি) উপধারায় উল্লেখ আছে, “In the event of the death of such a person refferd to in clause (a) his family shall be entitled without any payment of rent to use and maintenance of the residence occupied by him for a period of three months immediately after his death.”
এই আইনের ১৯ নং ধারার (১) উপধারায় উল্লেখ আছে “There shall be paid a special allowance of Rupees 2880/- per month to the person who held the office of The Chief Minister for a period of Union Terriotory or the State hood.”
বিধানসভা ও মহাকরণসূত্রে খবর নিয়ে জানা গেছে, সরকারীভাবে ত্রিপুরা রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর আবাসন (বাড়ি) বলতে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত কোনও আবাসন বা বাড়ি নেই। যেমন আছে গভর্নর হাউস (রাজভবন), প্রধান বিচারপতির আবাসন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর আবাসন বলতে সরকারীভাবে কোনও চিহ্নিত আবাসন নেই। মহাকরণ সূত্রে জানা গেছে, খুব শীঘ্রই রাজ্য সরকার মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি আবাসন হিসাবে একটি বাড়িকে চিহ্নিত করে তা সরকারীভাবে ঘোষনা করবে। এ নিয়ে যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে আরও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি বিপ্লব কুমার দেব মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করার পরও তিনি যে সরকারী আবাসনে আছেন, সেটি কেন তিনি ছেড়ে দেননি? এ নিয়ে নানা বিতর্ক তৈরি হয়। বিরোধী দলগুলো থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহল থেকেই এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এই বিতর্কের পর সরকারও বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসে। বর্তমানে যে আবাসনটিকে মুখ্যমন্ত্রীর আবাসন বলে দাবি করা হচ্ছে, আদতে সরকারী নথীপত্রে বা সরকারীভাবে যেমন কোনও তথ্য নেই, তেমনি এমন কোনও ঘোষণাও নেই। ইচ্ছে করলে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আজীবন বর্তমান আবাসনটিতে থাকতে পারেন। যেহেতু তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে চার বছর অতিক্রম করেছেন, সরকার তাকে বিনামূল্যে একটি আবাসন দিতে বাধ্য। যেমন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার সরকারি আবাসনে আছেন। এর জন্য মানিকবাবুকে সরকারী কোষাগারে কোনও অর্থ প্রদান করতে হয় না। মানিকবাবু আজীবন এই সরকারী আবাসনে থাকতে পারবেন। আইনে তাই উল্লেখ আছে। এখন দেখার, রাজ্য সরকার কোন বাড়িটিকে মুখ্যমন্ত্রীর সরকারী আবাসন হিসেবে সরকারীভাবে ঘোষণা করে।