প্রিন্সিপালশূন্য ১৬ ডিগ্রি কলেজ, লাটে পড়াশোনা।।

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্য
সরকারের সাধারণ ডিগ্রি কলেজে প্রিন্সিপাল পদে নিয়োগ বিশবাঁও জলে। দু’বছর আগে রাজ্য সরকারের পঁচিশটি সাধারণ ডিগ্রি কলেজে প্রিন্সিপাল পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। তবে এর মধ্যে নয়টি পদে প্রিন্সিপাল নিয়োগ হলেও ষোলটি সাধারণ ডিগ্রি কলেজে প্রিন্সিপাল পদে নিয়োগ অধরা। এক অদৃশ্য কারণে সাধারণ ডিগ্রি কলেজে প্রিন্সিপাল পদে নিয়োগ হচ্ছে না। যদিও প্রায় তিন বছর আগে রাজ্য সরকারের পঁচিশটি সাধারণ ডিগ্রি কলেজের মধ্যে মাত্র দুটি কলেজে প্রিন্সিপাল ছিলেন। এরপর তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত হলো, সবগুলি কলেজে প্রিন্সিপাল পদে নিয়োগ করা হবে। যা এখন পর্যন্ত হলো না ফলে সাধারণ ডিগ্রি কলেজের মান তলানিতে এসে ঠেকেছে।
শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ষোলটি সাধারণ ডিগ্রি কলেজে প্রিন্সিপাল না থাকলেও রাজ্যেও নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতি চালু হয়ে গিয়েছে। এমনকী নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি মোতাবেক পঁচিশটি সাধারণ ডিগ্রি কলেজে চার বছরের স্নাতক ডিগ্রি কোর্সে পঠনপাঠন চালু হয়েছে।
শিক্ষা দপ্তরের ব্যর্থতায় প্রিন্সিপাল না থাকার দৌলতে ডিগ্রি কলেজের প্রশাসনিক কাজ মুখ থুবড়ে পড়েছে। সাধারণ ডিগ্রি কলেজে নিয়মিত পঠনপাঠন পর্যন্ত হচ্ছে না। ফলে যে কোনও মুহূর্তে একাংশ কলেজের অনুমোদন বাতিল হতে পারে। এরপও শিক্ষা দপ্তরের হুঁশ নেই।যদিও ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং এমবিবি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত এই পঁচিশটি সাধারণ ডিগ্রি কলেজে রাজ্য সরকারের অধীনে রয়েছে।আর প্রিন্সিপাল নিয়োগ না করার দৌলতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নীতিমালা লঙ্ঘন হচ্ছে রাজ্যে।শুধু তাই নয়, সরকারী ডিগ্রি কলেজগুলির পড়াশোনার মানও তলানিতে এসে ঠেকেছে।অথচ রাজ্যে শিক্ষা বিপ্লবের প্রচার চলছে। অন্যদিকে, স্নাতকস্তরের পরীক্ষায় তিন বছর ধরে প্রায় আটচল্লিশ শতাংশ ছাত্রছাত্রী ফাইনাল পরীক্ষায় ফেল করছে। এরপর ছাত্র বিক্ষোভের চাপে ফেল করা ছাত্রছাত্রীদের রাতারাতি পাসও করানো হচ্ছে। এটাই রাজ্যের উচ্চশিক্ষার বাস্তব চিত্র। অভিযোগ প্রিন্সিপাল নেই। তাই নিয়মিত পড়াশোনা বন্ধ ডিগ্রি কলেজে। তার খেসারত দিচ্ছেন রাজ্যের প্রায় পঞ্চাশ হাজার ছাত্রছাত্রী।শিক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর, প্রায় দু’বছর আগে মাত্র দশজনকে প্রিন্সিপাল পদে নিয়োগ করা হয়। তবে এর মধ্যে একজন প্রিন্সিপাল পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অভিযোগ এনে চাকরিতে যোগ দিলেন না। কারণ প্রথম প্রকাশিত তালিকায় মাত্র তিনজনের নাম ছিল। এরপর রাতারাতি তালিকায় দশজনের নাম প্রিন্সিপাল পদের জন্য এসে যায়। তবে যারা প্রথম তিনের তালিকায় ছিলেন তারা আবার রাতারাতি নবনির্বাচিত প্রিন্সিপালদের তালিকার জন্য পেছনের দিকে চলে যান। বর্তমানে ষোলটি ডিগ্রি কলেজে প্রিন্সিপাল নেই। ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কলেজগুলি
চলছে। শুধু তাই নয়, প্রিন্সিপাল নেই, এর প্রভাবে ইউজিসির সেমেস্টার পদ্ধতির নিয়ম অনুযায়ী কলেজগুলিতে শ্রেণীকক্ষে ১৮০ দিন ক্লাস হচ্ছে না। এক্ষেত্রেও পিছিয়ে রয়েছে রাজ্য। বিজ্ঞান বিভাগে পাঠরত ছাত্রছাত্রীদের সবচেয়ে করুণ অবস্থা। কারণ একটি সেমেস্টারেও পড়ুয়াদের প্র্যাকটিকেল ক্লাস সঠিক অনুপাতে হচ্ছে না। আর রাজ্যের জেলা, মহকুমার কলেজগুলিতে প্র্যাকটিকেল ক্লাসই বন্ধ। অনার্স ও পাস কোর্সের ক্লাসেরও একই হাল। কলা ও বাণিজ্য বিভাগে সেমেস্টারে বিরানব্বইদিনও ক্লাস হচ্ছে না। বিষয়টি দেখার কেউ নেই। কলেজে প্রশাসনিক কাজ পর্যন্ত বন্ধ।তাই একটি স্বাক্ষরের জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপালদের উচ্চশিক্ষা দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ করতে হচ্ছে।অন্যদিকে, আর্থিকভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষক শিক্ষিকা সহ সকলস্তরের শিক্ষা কর্মীরা।
অথচ প্রিন্সিপাল নিয়োগ না হলেও কোনও পরিকাঠামো ছাড়া রাতারাতি নতুন শ্রী অরবিন্দ সরকারী ডিগ্রি কলেজ, সরকারী ডিগ্রি কলেজ পুরাতন আগরতলা, পানিসাগর সরকারী ডিগ্রি কলেজের সূচনা হয়েছে। আরও অবাক করার বিষয় হলো যে সব কলেজের ছাত্রসংখ্যা তিনশো থেকে সর্বোচ্চ ৮৮৮ জন। এসব কলেজে নিয়মিত পদে প্রিন্সিপাল রয়েছেন।অথচ রাজ্যের রাজধানী শহর আগরতলার রামঠাকুর কলেজ, বিবিএম কলেজ, ওমেন্স কলেজে নিয়মিত প্রিন্সিপাল নেই। এই তিনটি কলেজে প্রায় পনেরো হাজার ছাত্রছাত্রী পঠনপাঠন করছে।
জানা গিয়েছে, শিক্ষা দপ্তরের ব্যর্থতার জন্য ক্ষুব্ধ অ্যাসোসিয়েট প্রফেসররা রাজ্যের চাকরি ছেড়ে বহি:রাজ্যের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর পদে যোগদান করছেন। কারণ রাজ্য সরকারের পঁচিশটি সাধারণ ডিগ্রি কলেজে প্রফেসর পদ পর্যন্ত নেই। যদিও শতাধিক অ্যাসোসিয়েট প্রফেসরের বর্তমানে প্রফেসর পদে পদোন্নতির যোগ্যতা রয়েছে। প্রফেসর পদ নেই তাই কলেজ থেকে পিএইচডি কোর্সের সুযোগও বন্ধ। ফলে ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিলের পরিসংখ্যানেও কলেজের মান নিম্নমুখী।শিক্ষা দপ্তর সূত্রে আরও জানা যায়, এ মুহূর্তে ছাত্রছাত্রী অনুপাতে কলেজগুলিতে হাজারও ইউজিসি স্বীকৃত অভ্যাপক অধ্যাপিকা প্রয়োজন রয়েছে। ২০১৮ সালে উ পূর্বতন সরকারের ১৮২টি পদে অধ্যাপক অধ্যাপিকা নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে দিয়েছিল সরকার। এরপর দু’বছর নিয়োগ বন্ধ। বিগত প্রায় সাত বছরে মাত্র বিরানব্বইজন অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর নিয়োগ করা হয়। অন্যদিকে নেট, স্লেট, পিএইচডি উত্তীর্ণ যুবক যুবতীদের আরও অভিযোগ, এ মুহূর্তে ডিগ্রি নিয়ে দেড় উ ভাজার যুবক যুবতী রাজপথে ঘুরছে। তাদের নিয়োগ নেই।ফলে বয়স উত্তীর্ণ বেকার বাড়ছে রাজ্যে।

Dainik Digital

Recent Posts

বহিঃরাজ্যে গেল “ধানি লঙ্কা”ওরফে ধান্না মরিচ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ত্রিপুরায় উৎপাদিত" অর্গানিক বার্ড আই চিলি " স্হানীয় ভাষায় যাকে বলা হয় ধানি…

8 hours ago

কুম্ভ ইকনমি

২২জানুয়ারী,২০২৪।এক বছরের ব্যবুধানে ২০২৫ সালের ১৩ জানুয়ারি।গত বছরের মেগা ইভেন্টের আসর বসেছিল অযোধ্যায়। এবার মেগা…

8 hours ago

২০২ কোটি ব্যয়ে আরও একটি নয়া বিল্ডিং আইজিএমে : মুখ্যমন্ত্রী।।

অনলাইন প্রতিনিধি :-আগরতলাগভর্নমেন্ট কলেজের আসন সংখ্যা ৫০ থেকে বেড়ে ৬৩ করা হয়েছে ইতিমধ্যেই। আইজিএম হাসপাতালে…

8 hours ago

এক আগরতলা শ্রেষ্ঠ আগরতলা গড়ে তোলার জন্য সংকল্প নিন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-শারদউৎসব সম্পন্ন হওয়ার পর সামান্য দেরি হলেও বৃহস্পতিবার অনাড়ম্বর এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে…

9 hours ago

প্রতিবেশীর সম্পর্ক।।

ভারত বাংলাদেশের মধ্যে সামরিক সম্পর্ক বদলায়নি। তবে। দুই দেশের মধ্যেকার কূটনৈতিক আদানপ্রদান কমিয়াছে। ফলে দুই…

1 day ago

বিগত সরকারের দ্বিচারিতা প্রকাশ্যে আনলেন অর্থমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যে এই সময়ে কুড়ি হাজার শিক্ষক কর্মচারী অবসরে চলে গেছেন। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে…

1 day ago