এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

বিশ্বশ্বব্যাঙ্কের তথ্য বলছে, ভারতের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কর্মসংস্থান হল পরিষেবায়। পরিসংখ্যান বলছে, সংখ্যাটি প্রায় ১৪ কোটি।উত্তরপ্রদেশ বাদ দিলে বাকি দুই জনবহুল রাজ্য মহারাষ্ট্র ও পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। এর মধ্যে জমি-বাড়ির দালালি থেকে শুরু করে শিল্পসংস্কৃতি, কল সেন্টার,তথ্য প্রযুক্তি ইত্যাদি হল পরিষেবা ক্ষেত্র। বিদেশে পরিষেবা দেয় এমন তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পে লাখ-পঞ্চাশেক মানুষ কাজ করেন। তবে এর বাইরে সংবাদমাধ্যম ও শিল্পসংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত পরিষেবায় খুবই সামান্য কর্মসংস্থান।তবু কিছু তো আছেই। খুব বেশি হলে ১৪ থেকে ৪ কোটি বাদ দিলেও পড়ে থাকে ১০ কোটি কর্মী, যারা ভারতে প্রতিনিয়ত অন্য মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভালো-মন্দ নানা পরিষেবা দিয়ে চলেছেন।

আপনি যে প্রতিনিয়ত মার্কেটিংয়ের ফোন পান, সেটা এরাই করেন। ক্রেতাপরিষেবায় ফোন করলে এরা ধরেন, বাড়ি ভাড়া নিতে গেলে যে দালাল ধরেন, তিনিও এর মধ্যেই পড়বেন।

তবু পরিষেবা সংস্থাগুলি মুনাফার অঙ্ক কষে চলেছে যে, কত কম কর্মী দিয়ে কত বেশি লক্ষ্মীলাভ করা যায়। তাতে দোষের কিছু নেই কারণ এটি সমাজসেবা নয়। আবার এদের কাছে খদ্দের হিসেবে আপনি মূল্যবান, কারণ পরিষেবা গছাতে হবে আপনাকেই। আপনাকে বোঝানোটা এদের পক্ষে জরুরি। নইলে ব্যবসা টিকবে না। ফলে, যিনি ভালো বোঝাতে পারেন তিনিই এই সমস্ত জায়গায় চাকরি পান। বোঝানোর দক্ষতার সঙ্গে কর্মসংস্থানের একটা সরাসরি সম্পর্ক আছে। এই সূত্রেই বাজার অর্থনীতিতে ভাষার অনুপ্রবেশ। কারণ, ভাষা ছাড়া মানুষকে বোঝানোর কোনও পদ্ধতি এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। আপনি যদি ফোন ধরে উল্টোদিকের লোককে বিজাতীয় ভাষায় কথা বলতে শোনেন এবং ফোন রেখে দেন, তা হলে ব্যবসা লাটে উঠবে।আর আপনি যদি খুব উদার হন, বিজাতীয় ভাষা শুনে,কোনও মতে “ঠিক- হ্যায়-আচ্ছা-হ্যায়’ বলে ঠেকা দিয়ে যান, আমার ভাষা ওরা না বুঝলে আমি ওদের ভাষা বুঝব না কেন বলে দরদ দেখান, সেই দর্শনের ও প্রভাব আছে কর্মসংস্থানে। পরিষেবা সংস্থাদের মনে হবে, এই তো একটা ভাষার লোক দিয়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে দিব্যি কাজ চলে যাচ্ছে। ফালতু অন্য আরেকটা লোককে কাজ দিয়ে কী লাভ! ফলে আপনার ভাষার লোককে আর চাকরি দেওয়া হবে না, যেহেতু তিনি আর অন্য অঞ্চলের ভাষা অত ভালো বলতে পারেন না এবং তারাও ততটা উদার নন। ফলে পরিষেবায় আপনার এলাকার, আপনার ভাষার লোকের সংখ্যা ক্রমশ কমবে এবং কমছেও।১০ কোটির মধ্যে হয়তো ২ কোটি আপনার ভাষার লোক থাকার কথা, কমে ১ কোটি, পঞ্চাশ লাখ, এমনকী ভবিষ্যতে ১০টি লোকেও এসে ঠেকতে পারে। এটা নির্ভর করছে, এই জনগোষ্ঠীর কত লোক ওই বিজাতীয় ভাষা শুনে মেনে নেওয়ার এবং বোঝার চেষ্টা করার মতো উদার, তার উপর।আদতে এটি একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা। আগ্রাসী ‘হিন্দিত্ব’ দিয়ে অখণ্ড বাজার তৈরি যার একমাত্র লক্ষ্য। জিএসটি যেমন একটা বাজার, ভাষা আরেকটি বাজার। ভারতীয় দূরদর্শন এই বাধ্যতামূলক ভাষাশিক্ষার প্রকল্পটি শুরু করে গত শতকের আটের দশকে। মোটামুটি বছর কুড়ি পর থেকে ফল ফলতে শুরু করে। জিএসটির ভাবনাও একই কালখণ্ডে। এখন যে আপনি বলিউডি সঙ্গীতকে মাতৃভাষার গানের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন, বলিউডের তারকাদের আত্মার আত্মীয় মনে করেন, এর পিছনে কাজ করেছে তীক্ষ্ণ মগজাস্ত্র। আদতে পুরোটাই একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার অংশ।এক্ষণে মনে রাখা জরুরি, ভাষা বিষয়টি স্রেফ শখের জিনিস নয়। আপনাকে অন্য ভাষায় দেওয়া প্রতিটি পরিষেবা, বাংলাভাষীর কর্মসংস্থান কমিয়ে আনছে।সিনে তারকাদের সঙ্গে আপনার প্রতিটি কল্পিত নিজস্বী, ভাষাগত লেনদেন হিন্দিত্ব’ প্রকল্পটিকে আরও জোরালো করে চলেছে। আপনি ঔদার্য, অথবা সময়ের তাগিদে কিংবা স্রেফ অভ্যাসবশত এই গড্ডলে ভেসে থাকতে চাইবেন কি না, একান্তই আপনার বিষয়।ভারতের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কর্মসংস্থান পরিষেবায়। সংখ্যাটা ১৪ কোটির মতো। আনুপাতিক হিসেবে বাংলাভাষীর সংখ্যা হওয়া উচিত অন্তত ১ কোটি। সারা বিশ্বজুড়েই পরিষেবা ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান বেড়ে চলেছে। আগামীতে এটা আরও বাড়ার কথা। কিন্তু ব্যবস্থাটা এইরকম থাকলে বাংলাভাষীরা আরও পিছিয়ে পড়বেন। এমতাবস্থায় ‘হিন্দিত্ব’কে আপনি প্রেম না আগ্রাসন কোনটা ভাববেন, সে সিদ্ধান্ত একান্তই আপনার।

Dainik Digital

Recent Posts

এ কে-৪৭ ও প্রচুর কার্তুজ সহ ৬ বৈরী ধৃত মিজোরামে, চাঞ্চল্য!!

অনলাইন প্রতিনিধি:- বাংলাদেশ থেকে কাঞ্চনপুর মহকুমার ভারত- বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে মিজোরামে যাওয়ার পথে মামিত জেলার…

19 hours ago

ফাইফরমাশ খাটছেন টিএসআর জওয়ানরা !!

অনলাইন প্রতিনিধি :- নিরাপত্তার কাজে নয়, টিএসআর জওয়ানদের খাটানো হচ্ছে আর্দালি হিসাবে। পুলিশ আধিকারিকদের ও…

19 hours ago

ইন্ডিগো আরও একটি দিল্লীর বিমান চালু করছে!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- ইন্ডিগো আগরতলা- দিল্লী রুটের উভয় দিকে যাতায়াতে আরও একটি বিমান চালু করছে।…

19 hours ago

ইন্দ্রপ্রস্থে ভোট!!

দিল্লীর বিধানসভা ভোট নিয়ে সরগরম দিল্লী। দিল্লীতে এবার এক আঙ্গিকে বিধানসভা ভোট হচ্ছে। গত পরিস্থিতির…

19 hours ago

বহিঃরাজ্যে গেল “ধানি লঙ্কা”ওরফে ধান্না মরিচ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ত্রিপুরায় উৎপাদিত" অর্গানিক বার্ড আই চিলি " স্হানীয় ভাষায় যাকে বলা হয় ধানি…

2 days ago

কুম্ভ ইকনমি

২২জানুয়ারী,২০২৪।এক বছরের ব্যবুধানে ২০২৫ সালের ১৩ জানুয়ারি।গত বছরের মেগা ইভেন্টের আসর বসেছিল অযোধ্যায়। এবার মেগা…

2 days ago