ফসলের রোগ ও পোকা দমন

 ফসলের রোগ ও পোকা দমন
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

উদ্ভিদ রোগের শ্রেণীবিন্যাসঃ উদ্ভিদ রোগের অবস্থিতি, লক্ষণ, বিস্তারের মাধ্যম, রোগের প্রকার, পোষক উদ্ভিদের প্রকার, রোগের আবির্ভাব এবং অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতি করার ক্ষমতার তারতম্য অনুসারে নিম্নলিখিতভাবে বিভক্ত করা যায় । উদ্ভিদ রোগের অবস্থিতির উপর নির্ভর করে অর্থাৎ যখন উদ্ভিদের রোগ শুধুমাত্র কোনও বিশেষ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে সীমাবদ্ধ থাকে সেই সকল রোগকে বলা হয় স্থানীয় রোগ। আবার গাছের রোগজীবাণু যখন শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে রোগের লক্ষণ প্রকাশ করে সেগুলিকে বলে সর্বাঙ্গবাহী রোগ। উদ্ভিদ রোগের লক্ষণ অনুসারে অর্থাৎ ঝলা রোগ, ধসা রোগ, মরিচা রোগ, ঝুলে কালো রোগ, পচন রোগ, ঢলে পড়া রোগ ইত্যাদি ভাবে বিভক্ত করা যায়।রোগের বিস্তারের মাধ্যম অনুসারে উদ্ভিদ রোগগুলিকে বীজবাহী রোগ, মৃত্তিকা, বাহী রোগ, বায়ুবাহী রোগ ইত্যাদি গ্রুপে বিভক্ত করা যায় । রোগের প্রকার অনুসারে অর্থাৎ ছোঁয়াচে রোগগুলি যেমন ভাইরাস জনিত কুটে রোগকে বলা হয় সংক্রামক রোগ। আবার খাদ্যের অভাব জনিত রোগ, শারীর বৃত্তীয় রোগ ইত্যাদিকে বলা হয় অসংক্রামক রোগ । পোষক উদ্ভিদের উপর নির্ভর করে উদ্ভিদ রোগকে বিভিন্ন নামে ব্যক্ত করা যায়- যেমন তণ্ডুল জাতীয় শস্যের রোগ, ডাল জাতীয় ফসলের রোগ, তৈল বীজের রোগ, শাক সবজির রোগ, বাগিচা ফসলের রোগ ইত্যাদি।আবার উদ্ভিদ রোগের আবির্ভাব, প্রকোপ এবং অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতি করার ক্ষমতার তারতম্য অনুসারে ফসলের রোগকে মুখ্যত তিনভাগে বিভক্ত করা যায়।
১। আঞ্চলিক উদ্ভিদ রোগঃ যে সকল উদ্ভিদ রোগ কোনও নির্দিষ্ট।অঞ্চলে বা এলাকায় প্রায় সারা বৎসর ধরিয়া বিরাজ করে
অর্থনৈতিকভাবে ফসলের ক্ষতির
পরিমাণ খুবই নগণ্য তাদেরকে বলে আঞ্চলিক উদ্ভিদ রোগ । ২। ইতস্তত বা বিক্ষিপ্ত উদ্ভিদ রোগঃ কতকগুলি উদ্ভিদ রোগ বৎসরের কোন কোন সময়ে ইতস্ততঃ বা বিক্ষিপ্তভাবে মাঝে মাঝে মাঠে দেখা দেয় এবং ফসলের মাঝারি ধরনের ক্ষতি করে সেগুলিকে ইতস্ততঃ বা বিক্ষিপ্ত উদ্ভিদ রোগ বলা হয় । ৩। মহামারি উদ্ভিদ রোগঃ মহামারি উদ্ভিদ রোগ বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ফসলে আক্রমণ করে এবং ফলনের প্রভূত ক্ষতিসাধন করে। উদ্ভিদের মহামারি রোগ সাধারণত কোন কোন বৎসর অথবা ২-৩ বৎসর পর পর উদ্ভিদের বৃদ্ধির প্রতিকূল এবং রোগজীবাণুর দ্রুত বংশবিস্তারের অনুকূল পরিবেশে দেখা যায় ৷ উদ্ভিদের রোগ জীবাণু
ছত্রাক : উদ্ভিদের বেশির ভাগ রোগই ছত্রাক দ্বারা সৃষ্টি হয়। ছত্রাক সুক্ষ্ম নিম্ন শ্রেণীর উদ্ভিদ। উচ্চ শ্রেণীর উদ্ভিদের ন্যায় ছত্রাকের দেহে ক্লোরোফিল বা সবুজ কণা না থাকায় ইহারা নিজের খাদ্য নিজে প্রস্তুত করিতে পারে না। তাই বেশির ভাগ ছত্রাক পরভোজী হয়। কতকগুলি পরভোজী ছত্রাক অন্যান্য জীবন্ত উদ্ভিদ বা প্রাণীর দেহ থেকে নিজের প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহ করিয়া বাঁচিয়া থাকে। এই ধরনের ছত্রাককে বলে সম্পূর্ণ পরজীবী ছত্রাক। আবার কতকগুলি ছত্রাক মৃত উদ্ভিদ বা প্রাণীর পচনশীল দেহাবশেষ থেকে নিজ খাদ্য সংগ্রহ করিয়া বাঁচিয়া থাকে
তাদের বলে মৃতজীবী। কখনো কখনো আবার কতকগুলি ছত্রাকের জীবনচক্রের কিছুটা সময় জীবিত উদ্ভিদ দেহে এবং বাকি সময় মৃত উদ্ভিদ দেহে থাকিয়া জীবনচক্র সমাপ্ত করে, তাদেরকে অর্ধ পরজীবী এবং অর্ধ মৃতজীবী ছত্রাক বলা হয় ৷
বেশির ভাগ ছত্রাকের দেহ একপ্রকার সূক্ষ্ম সুতার ন্যায় জালিকা দ্বারা গঠিত। এই সূতার ন্যায় ছত্রাক দেহ জালিকাকে বলে মাইসেলিয়াম বা অণুসূত্র জালিকা। অণুসূত্র জালিকার বহু শাখা প্রশাখা থাকে। এই প্রশাখা সূত্রকে বলে হাইপা বা অণুসূত্র। এই অণুসূত্রগুলি ছত্রাকের প্রকারভেদে পাতলা পর্দা দ্বারা বিভক্ত বা অবিভক্ত হইতে পারে। এইরূপ পর্দা দ্বারা বিভক্ত অণুসূত্র প্রকোষ্ট বা অংশকে বলা হয় অণুসূত্র কোশ বা হাইপেল সেল। অবিভক্ত অণুসূত্রের প্রোটোপ্লাজম, অসংখ্য নিউক্লিয়াস এবং ভ্যাকুওল বা গহ্বর অবিচ্ছিন্ন’ থাকে। প্রকোষ্ট বিহীন অণুসূত্রকে বলে সিনোসাইট অণুসূত্র। আবার ছত্রাকের প্রত্যেক কোশ প্রকোষ্টে এক বা একাধিক নিউক্লিয়াস থাকিতে পারে। ছত্রাকের কোষ প্রাচীর কাইটিন নামক একপ্রকার পদার্থ দ্বারা নির্মিত। তবে অনেক নিম্ন শ্রেণীর ছত্রাকের কোশ প্রাচীর সেলুলোজ দ্বারা গঠিত হয়। ছত্রাকের কোশের মধ্যে সঞ্চিত পদার্থরূপে গ্লাইকোজেন নামক শর্করা এবং তৈল বিন্দু দেখা যায়। উদ্ভিদ রোগ সৃষ্টিকারী ছত্রাককে মোটমুটি চারটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায় : ১। ফাইকোমাইটিস্ উদাহরণ ফাইটোপথোরা ইনফ্যাসটেন্স, আলুর নাবি ধসা রোগের ছত্রাক।
২। অ্যাসকোমাইসিটিস উদাহরণ – – ইরিসিফি পোলিগোনি, মটরের পাউডারী মিলভিউ রোগের কারণ ছত্রাক। (চলবে)

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.