ফের অস্বস্তি কংগ্রেসে

 ফের অস্বস্তি কংগ্রেসে
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

একের পর এক ধাক্কা আছড়ে পড়ছে কংগ্রেস শিবিরে। যা শুধু জাতীয় রাজনীতিতেই নয়, রাজ্যে রাজ্যে কংগ্রেস সংগঠনেও এই নিয়ে অশ্বস্তি বেড়েছে। ‘ নদীর এক কূল ভাঙে তো আরেক কূল গড়ে’। কংগ্রেস দলের অবস্থা এখন ওই নদীর কূল ভাঙা গড়ার মতোই। একদিকে সংগঠনকে শক্তিশালী করে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রয়াস জারি। তো অন্যদিকে দল ছেড়ে যাওয়ার প্রবণতায় কংগ্রেসের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রয়াস বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।
সম্প্রতি রাজস্থানের উদয়পুরে কংগ্রেসের চিন্তন শিবির অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দলেরই নজর ছিল কংগ্রেসের ওই চিন্তন শিবিরের দিকে। শুধু তাই নয়, দেশব্যাপী কংগ্রেসের লক্ষ লক্ষ কর্মী, সমর্থক, নেতা-নেত্রীদেরও নজর ছিল দলের ওই চিন্তন বৈঠকের উপর। বৈঠক থেকে দলকে অক্সিজেন জোগাতে সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ‘ভারত সংযোগ সংকল্প যাত্রা’ করার ঘোষণাও করেছিলেন। একই সাথে রাহুল গান্ধী কংরেসকে শক্তিশালী করতে জোট রাজনীতির নয়া কৌশলের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। মোদ্দাকথা, বিজেপি বিরীধী রাজনীতির অঙ্গনে কংগ্রেস এবার অন্য পথ নিতে চলেছে। রাহুলের মতে, কোনও আঞ্চলিক দলই এককভাবে অথবা সম্মিলিতভাবে বিজেপিকে পরাস্ত করতে পারবেনা। এটা সম্ভব একমাত্র কংগ্রেসের পক্ষেই। কংগ্রেসই পারবে বিজেপির বিরুদ্ধে একটানা লড়াই করতে। ফলে কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে কোনও জোটই এই লক্ষ্য পূরণ করতে পারবেনা।

রাহুলের এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, দেশে বিজেপি বিরোধী জোট রাজনীতিতে এক বিশেষ বার্তা দিয়েছে কংগ্রেস। বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে কংগ্রেসের আঞ্চলিক দলগুলিকে পাশে পাওয়া যেমন দরকার , তেমনি আঞ্চলিক দলগুলির স্বার্থ আছে কংগ্রেসকে পাশে পাওয়ার। কমগ্রেসকে বাদ দিয়ে যে জোট হতে পারে না, অথবা বিজেপি বিরোধী লড়াইও দানা বাঁধা সম্ভব নয়, সে কথা সরাসরি মুখে না বললেও রাহুল গান্ধী সেই বার্তাই দিয়েছেন বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
কিন্তু কংগ্রেসের এই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রয়াসের মধ্যেই ওল্টো দিক থেকে একের পর এক ধাক্কা আছড়ে পড়ছে। সদ্য হারানো পাঞ্জাব থেকে এসেছে জোড়া ধাক্কার খবর। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পাঞ্জাব কংগ্রেস নেতা নভজ্যোত সিং সিধুর এক বছর জেল হাজতবাস হয়েছে। অন্যদিকে, কংগ্রেসের সাথে প্রায় পঞ্চাশ বছরের সম্পর্ক ত্যাগ করে বিজেপি দলে যোগ দিলেন পাঞ্জাব কংগ্রেসের বিশিষ্ট নেতা তথা প্রাক্তন সভাপতি সুনীল জাখর। বৃহস্পতিবার দিল্লীতে গিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার হাত ধরে বিজেপিতে শামিল হয়েছেন।
তার আগেরদিন বুধবার গুজরাট থেকে আসে আরেক ধাক্কা। এদিন কংগ্রেস ছাড়লেন দলের গুজরাট প্রদেশ কার্যকরী সভাপতি হার্দিক প্যাটেল। আগামী ডিসেম্বরেই বিধানসভা ভোট হবে গুজরাটে। এই ভোট এগিয়েও আসতে পারে। ভোটের মুখে গুজরাটে হার্দিকের মতো হ্যাভিওয়েট নেতার দল ছেড়ে দেওয়ায় রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি হয়। শুধু তাই নয়, দলের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে লেখা পদত্যাগ পত্রে হার্দিক প্যাটেল যে সব অভিযোগ তুলেছেন, তাতে কংগ্রেসের অস্বস্তি আরও বেড়েছে। সরাসরি আঙুল তুলেছেন রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধেও। একইসাথে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন বিজেপির একাধিক সিদ্ধান্তের। সেই অযোধ্যায় রাম মন্দিরই হোক, কিংবা ৩৭০ ধারা, অথবা জিএসটির বাস্তবায়ন। হার্দিকের মতে এই সব ইস্যুতে কংগ্রেস শুধু পথের কাঁটা হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সমাজ এবং দেশবাসীর স্বার্থবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করে চলেছে কংগ্রেস। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, হার্দিকের গেরুয়া শিবিরে যোগদান শুধু সময়ের অপেক্ষা। একটা বিষয় স্পষ্ট, ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই আগামীদিনে কতটা শক্তিশালী করবে কংগ্রেসকে, সেটা হয়তো সময়ই জানাবে। তবে এই মুহূর্তে পাঞ্জাব ও গুজরাট থেকে ধেয়ে আসা ধাক্কা যে লড়াইকে প্রভাবিত করবে, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.