ফের বিতর্কে ইভিএম!!
বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতে লোকসভা ভোট মিটতেই ফের বিতর্কে ইভিএম।আর এই বিতর্ককে ঘিরে জাতীয় রাজনীতি ফের সরগরম হয়ে উঠেছে।যদিও ইভিএম নিয়ে দেশে এই বিতর্ক নতুন কিছু ঘটনা নয়।যবে থেকে ইভিএমে (ইলেকট্রনিক্স ভোটিং মেশিন)ভোট গ্রহণ শুরু করা হয়েছে,তখন থেকেই ইভিএমে ভোট গ্রহণ নিয়ে বিতর্ক চলছে।তা এখনও অব্যাহত আছে।এর আগেও বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন ভোটে ইভিএম নিয়ে বিতর্ক হয়েছে।অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ,দাবি পাল্টা দাবি নিয়ে রাজ্য এবং জাতীয় রাজনীতি তোলপাড় হয়েছে। এককথায় বিতর্ক কোনও ভাবেই পিছু ছাড়ছে না ইভিএমের।তবে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে, ইভিএমকে তার সততা, স্বচ্ছতা, এবং বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণ করার জন্য বারবার যাবতীয় পরীক্ষানিরীক্ষা, এমনকি অগ্নিপরীক্ষা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে।কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউই ইভিএম কারচুপি বা হ্যাক করে ফলাফল বদলে দেওয়া যায়,তা প্রমাণ করতে পারেনি।এযাবৎকাল পর্যন্ত ইভিএম নিয়ে যত বিতর্ক, যত আলোচনা হয়েছে সবই ধারণা এবং সন্দেহের উপর ভিত্তি করে।কিন্তু আসল কাজটি এখনও কেউ করে দেখাতে পারেনি। অথচ বিতর্ক কিন্তু থামছে না।
আমাদের সমাজে অতি প্রচলিত এবং জনপ্রিয় একটি প্রবাদ আছে।সেটি হলো ‘নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা’।এই প্রবাদ বাক্যের প্রকৃত অর্থ কী?সেটা সকলেই জানে।এখানে বিশদ ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।ইভিএম নিয়ে বিতর্ক, সেই প্রবাদকে স্মরণ করিয়ে দেয়।কেননা, যখন যে রাজনৈতিক দল ভোটে পরাজিত হচ্ছে, তাদেরকেই ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেখা গেছে।এবার লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফা ভোট শেষ হতেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী,তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইভিএম কারচুপির অভিযোগ তুলেছিলেন।মজার ঘটনা হলো,ফলাফল প্রকাশের পর মমতার মুখ থেকে ইভিএম কারচুপি নিয়ে একটি ‘টু’ শব্দও শোনা যায়নি।তার মানে ভোটে জয় হলে ইভিএম ঠিক আছে, পরাজয় হলেই ইভিএম খারাপ।
তবে সব রাজনৈতিক দলই যে এই পথে হাঁটছে,এমন কিন্তু নয়।সদ্য লোকসভা ভোটের সাথে দেশের চারটি রাজ্যেও একসাথে বিধানসভা ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে।এই চারটি রাজ্যের মধ্যে দুটি রাজ্যে সরকার বদল হয়ে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।ওই দুই রাজ্যে পরাজিত রাজনৈতিক দলগুলি বা দলের পক্ষ থেকে কোনও নেতা বা নেত্রী কিন্তু ইভিএম কারচুপির অভিযোগ তুলেনি। তবে এবার ইভিএম বিতর্ক আচমকা উস্কে দিয়েছেন বিদেশি টেসলা কর্তা অ্যালেন মাস্ক।রবিবার নিজের এক্স হ্যান্ডেলে ইভিএম নিয়ে মাস্ক একটি পোস্ট করেন।তাতে তিনি লেখেন, আমাদের ইভিএম ত্যাগ করা উচিত। কারণ মানুষ কিংবা এআই-এর দ্বারা এটিকে হ্যাক করার সম্ভাবনা বেশি’।মাস্কের এই পোস্টের পর ভারতীয় রাজনীতির পারদ তরতর করে চড়তে থাকে।শুরু হয়ে যায় বিতর্ক।সেই বিতর্কে কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী, সমাজবাদী নেতা অখিলেশ যাদব শামিল হয়ে ইভিএমের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। মাস্কের ইভিএম বিরোধী পোস্টের বিরোধিতা করে পাল্টা টুইট করেন বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন ইলেক্ট্রনিক এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর।তাঁর বক্তব্য, ‘একটা সরলীকৃত ধারণা রয়েছে যে, কেউ সুরক্ষিত ডিজিটাল হার্ডওয়্যার বানাতে পারবে না। এটা ভুল ধারণা। আমেরিকা কিংবা অন্য জায়গায় যে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রিত ভোটিং মেশিনে সাধারণ যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়, সেখানে মাস্কের এই বক্তব্য প্রযোজ্য হতে পারে।প্রাক্তন মন্ত্রীর আরও দাবি, ব্লুটুথ, ইন্টারনেট, ওয়াইফাই কোনও কিছু দিয়েই ইভিএমকে হ্যাক করা যায় না।কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘ইভিএম ভারতের ব্ল্যাক বক্স।কেউ সেটিকে পরীক্ষা করে দেখতে পারে না’।
এখন মূল বিষয় হচ্ছে, স্বচ্ছতার প্রশ্নে এর আগেও ইভিএম একাধিকবার পরীক্ষা দিয়েছে।সব পরীক্ষাতেই সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছে ইভিএম।তারপরেও ইভিএমকে নিয়ে বিতর্ক থামেনি।ভবিষ্যতেও থামবে, এমন নিশ্চয়তা বা গ্যারান্টি দেওয়া যায় না।গণতান্ত্রিক ভারতে “ইভিএম’ রাজনীতির অন্যতম একটি উপাদান। সেটা ভুলে গেলে চলবে কী করে?তা না হলে আমেরিকার বাসিন্দা অ্যালেন মাস্ক হঠাৎ করে ভারতের ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন কেন?তিনি ইভিএম হ্যাক করে সকলের সামনে প্রমাণ করে দিলেই তো সব বিতর্কের অবসান হয়ে যায়।সেটা করবেন কি?