ফোমো বিরোধী দিবস

 ফোমো বিরোধী দিবস
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ওটা ছাড়া এখন চলেই না । তাই অভ্যাস করার ইচ্ছে হয়েছে । অনেক ভেবে – চিন্তে , তবে এ সিদ্ধান্ত । গত প্রায় সাত বছর ব্যবহারে ক্লান্ত । পরিবেশকে নিয়ন্ত্রিত করার জন্য এ ব্যবহার , তাতে যেন সত্তার সঙ্গে আপস করতে হচ্ছে । বংশ পরম্পরায় এ পরিবর্তন চলতে থাকলে , সর্বনাশ । মারাত্মক সর্বনাশ । উমা ওটা বুঝেছে । তাই আজ ‘ ফোমো ’ বিরোধী দিবস । ‘ ফিয়ার অব মিসিং আউট ’ — এর বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে আজ সারাদিন মোবাইল ফোনটাকে পাওয়ার অফ অর্থাৎ স্যুইচ অফ করে রাখার সংকল্প নিয়েছে উমা ।

প্রথম প্রথম অজয় ওটা বুঝতে পারেনি । ‘ কী গো তোমার মোবাইল ফোনটা কোথায় ? স্যুইচ অফ বলছে । ‘
‘ আজ ওটা ব্যবহার করব না । ‘ ‘ পাগল হয়েছ ? এগারোটা বাজুক , এগজিকিউটিভ সাহেবের দাবড়ানি খেলে , তবে খুলবে । ‘ ‘ খুলবই না । আজ ফোমো বিরোধী দিবস । ‘ ‘ ওটা আবার কী ? ’ ‘ এটা একটা মানসিক রোগ নিরাময় দিবস । কোনও কিছু মিস হয়ে যাচ্ছে , তাই বারে বারে বোকা ছোট্ট বাক্সে হাত রাখা , টিপ দিয়ে দেখা , প্রতি মুহূর্তে সময় নষ্ট করার একাধিক এজেন্সির সতর্কর্তা , অ্যাডিকশনের ম্যানেজমেন্ট — সব আজ বন্ধ থাকবে । জীবনে অন্তত কিছুটা সময় অন্যের অধীনস্ত থাকতে হবে না । কিছু হারানোর , কোনও কিছু মিস করার তাড়া নেই । ‘

‘ অনেক বড় কথা হল । আজ ছুটির দিন নয় । ছেলে মাত্র স্কুলে গেল । অফিস আছে । ভাবিয়া করিও কাজ … ’ বলে অজয় শেভিং করতে চলল । মনে মনে ভাবছে , আজ ঝামেলা হবেই । তবে ওটা উমার নতুন কোনও অভ্যেস নয় । কিছুটা হুতাশে চলে । অন্যদিকে ভাবলে , এ যে ‘ মোবাইল ফোনের একাদশী ’ – এও স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল।
অজয়ের ফোন বাজছে । ধরে দেখা গেল , উমার বোন , অজয়ের শ্যালিকা ফোন করেছে । ‘ দাদাবাবু , ভাল আছেন ?
দিদিকে ফোনে পাচ্ছি না । ‘ ‘ আজ পাওয়া যাবে না । আজ ফোমো বিরোধী দিবস । ‘ ওটা আবার কী ? ’ ঊষার কর্কশ প্রশ্ন । ‘ তোমার দিদিকেই জিজ্ঞাসা করো । ” উমা বলছে , ‘ না আমি আজ ফোনে কথা বলব না । ’

ঊষা বোধহয় মনে মনে ভেবেছে , দিদির পাগলামি কী পর্যায়ে জানি আছে ! অজয়ের ফোন আবার বেজে উঠল .। স্বামী পূর্ণানন্দজী , ছেলের স্কুলের অধ্যক্ষ । ছেলের ব্যাপারে ফোন করেছেন । ম্যাডামকেও চাই । সবিনয়ে অজয় বলল , ‘ ম্যাডাম আজ উপোস করেছেন । ‘ অধ্যক্ষ মহারাজ আর কথা বাড়ালেন না । ফোন রাখলেন । আজ কেউ উমাদেবীকে ফোনে পাচ্ছে না । তাই তার স্বামীকে ফোন করে খোঁজ নিচ্ছেন ।
যথা সময়ে বাড়ির সাহায্যকারী মাসিকে ঘরে রেখে স্বামী – স্ত্রী অফিসে চলল । উমা আজ মাসিকে আরও ভাল করে সতর্ক করল , ছেলে আসলে কী কী করতে হবে বলল । এ যে অতি সতর্কতা । অজয় স্ত্রী – কে অফিসে ছাড়তে আসার সময় ঠিক পাঁচটা পঞ্চাশে নিতে আসবে বলে দশটা বাজার আগেই কামান চৌমুহনীতে চলল ।

অজয় অফিসে পৌঁছে , নিয়ম করে ঘণ্টাখানেক পর উমাকে ফোন করবেই , ওটা আজ আর হল না । একটা বিপত্তি এসেছে । অফিসের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার উমাকে ফোনে না পেয়ে অজয়কে ফোন করেন । ‘ আরে উমা ম্যাডাম কোথায় ? ‘ তা অফিসেই আছে । ‘ না , না , ফোন করলে স্যুইচ অফ বলছে । ‘ অজয়ের ভারী রাগ হল , আরে স্যুইচ অফ মানে কি কেউ অফিসে নেই ! আশ্চর্য ! স্ত্রী – র সিনিয়রকে ওটা বলা যায় না । দু’জনেই দু’জনকে ধন্যবাদ জানিয়ে এ যাত্রা শেষ করল । ‘ ফোমো ’ নিয়ে উমাদেবী , পূর্ত দপ্তরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সারাটা দিন কাটালেন । অফিসে কেউ টের পেলেন না । সম্পূর্ণ ডিটাচড বাড়ি থেকে , উমা তাই পাঁচটা পঞ্চাশের আগেই অজয়ের জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে রইল ।

প্রতিটা সেকেন্ডকে মিনিট মনে হচ্ছে । ছেলের খবর অফিসে এসে আর নেওয়া হয়নি । এটা অজয় প্রতিদিন করে থাকে । তবুও যেন একটা শূন্যতা । অন্যদিন কাজের চাপেও অন্তত চারবার কথা হয় । ছেলে পাপুর খবর নিতে ভুল হয় না । সাহায্যকারী মাসিকে পুরোনো ফোনটা দেওয়া আছে । মাসিও খুব খুশি । ইতিমধ্যে নেটের সুবিধা না থাকলেও পাপু মাসির ফোনে হাত পাকাচ্ছে । টমটম , অটোরিক্সাগুলি সাংঘাতিক বিরক্তিকর । পাঁচটা সাতচল্লিশ । সন্ধ্যার কাকটা ঘরে ফিরতে যেন ‘ কা ! কা ! ’ করে রহস্য করছে । উমা যে ‘ ফোমো ‘ নিয়ে ব্যস্ত , তা ওই কালা ব্যাটা জানবে কী করে । অধীর আগ্রহের শেষ , অজয় গাড়ি নিয়ে এসে উমা ম্যাডামকে গাড়িতে তুলে নিল । ঘরে যাওয়ার মুখে এ যেন দু’জনের বহুদিনের অপেক্ষার দেখা , মনে হল ।

সবটাই মানসিক । মানসিক দূরত্ব কমিয়েছিল ‘ মোবাইল ফোন ’ । অজয় একটু নীচু গলায় বলল , ‘ ফোমো , তোমার উপবাস ভালই হল ? ’ পাশে বসা ড্রাইভার কালু কিছুই বুঝতে পারলেন না । এরই মধ্যে তাদের ঘর চলে আসে । ‘ ফোমো ’ – র চক্করে উমাদেবীর সমস্তটা দিন অন্তত টেনশন থেকে মুক্ত হল । দৌড়ঝাঁপ নেই । দু’জনে মিলে , স্বামী – স্ত্রী ঘরে ঢুকলে পাপু একটু রাগ করে মা – কে কথা না বলার কারণ জিজ্ঞাস করল । ‘ তুই বুঝবি না , ফোমো … আরও বলার ছিল । একটু বড় হলেই পাপু সব বুঝতে পারবে । তবে , ওটা ছাড়া বরং ভালই চলল । বোবা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে ভাবল উমাদেবী ।

————নির্মল অধিকারী

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.