ফ্যাক্টর চার ‘ম’!
অনলাইন প্রতিনিধি :-সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে নতুন বছরের মার্চ-এপ্রিলে হতে পারে লোকসভা নির্বাচন।সেই মেগা ইভেন্টকে সামনে রেখে শাসকদল বিজেপি ইতিমধ্যেই জবরদস্ত প্রস্তুতি নিয়ে নিয়েছে।ওই প্রস্তুতির অঙ্গ হিসেবে আজ থেকে সাতদিন আগে,অর্থাৎ গত শুক্রবার নয়াদিল্লীতে বিজেপির সদর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে দুদিন ব্যাপী দলীয় কর্মকর্তাদের বৈঠক।সেই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদি দলের জাতীয় কর্মকর্তাদের ২০২৪ লোকসভা ভোটের স্লোগান এবং প্রচারের সুর বেঁধে দিয়েছেন।এবার পদ্ম শিবিরের স্লোগান হচ্ছে ‘আব কি বার,৫০ শতাংশ ভোট পার’।গত লোকসভা নির্বাচনে স্লোগান ছিলো, ‘আব কি বার মোদি সরকার’।এবার তৈরি করলেন নয়া স্লোগান।এ নিয়ে তৃতীয়বার মোদির নেতৃত্বে নির্বাচনি ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছে গেরুয়া শিবির।গত শুক্রবার দিল্লীতে অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় কর্মকর্তাদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দিতে গিয়ে বলেছেন,আসন্ন নির্বাচনে যত ভোট পড়বে, তার অন্তত ৫০ শতাংশ বিজেপির পাওয়া প্রয়োজন। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে গেরুয়া ঝুলিতে পড়েছিল ৩৭.৩৬ শতাংশ ভোট। বিজেপি একাই পেয়েছিল ৩০৩টি আসন।খবরে প্রকাশ, ঘণ্টা চারেক ধরে চলা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদি একাই বক্তব্য রেখেছেন টানা দেড় ঘণ্টা ধরে।ওই দেড় ঘণ্টা ভাষণ ছিল আদতে ভোটের রণকৌশল কী হবে?তা দলের কার্যকর্তাদের তোতাপাখির মতো বুঝিয়ে দেওয়া।মোদির মতে, বিজেপি যদি একাই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পায়, তাহলে জয় আরও নিশ্চিত হবে।বিজেপি একাই ৩৫০ টির বেশি আসনে জয়ী হবে। কীভাবে এত ভোট পাওয়া যাবে,তাও দলীয় কার্যকর্তাদের বাতলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।মূলত চারটি বিষয়ের উপর জোর দেওয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।সেগুলো হলো- মহিলাদের জন্য মোদি সরকার কী কী করেছে। কৃষকদের আর্থিক উন্নয়নে সরকার কী কী প্রকল্প রূপায়ণ করেছে।যুব সমাজের কর্মসংস্থানে সরকার কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং দারিদ্র দূরীকরণে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ।এই চারটি বিষয়কে মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে।এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, জাতপাতের রাজনীতি নয়, দারিদ্রকে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জাতি হিসেবে প্রচার করতে হবে।বিরোধীদের নেতিবাচক প্রচারের ফাঁদে পা দিয়ে উন্নয়নের প্রচারের অভিমুখ থেকে সরে গেলে চলবে না।প্রচারের ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়াকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে,মোদির রণকৌশল এবং নির্দেশিত পথে ইতিমধ্যে দলীয় কার্যকর্তরা সারা দেশেই প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। গেরুয়া শিবিরে যখন এই ছবি,তখন ঠিক উল্টো ছবি বিরোধী শিবিরে।বিজেপি বিরোধী জোট এখনও ছন্নছাড়া।জোট জোট করে জোটের নেতা- নেত্রীরা বারবার ফটোসেশন করলেও, এখনও পর্যন্ত আসন সমঝোতার আসল কাজটি করে উঠতে পারেননি।শুধু তাই নয়,জোটের অন্যতম কাণ্ডারি এবং যিনি নিজেকে মোদি বিরোধী প্রধান মুখ হিসেবে দাবি করেন,বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর সিদ্ধান্ত ঘিরে ইতিমধ্যে জোট রাজনীতিতে নতুন করে জট পাকিয়েছে।এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আদৌ শেষপর্যন্ত ইন্ডিয়া জোট হবে কিনা?নাকি নামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে? এমন সম্ভাবনাই প্রবল বলে মনে করা হচ্ছে।এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে,২০২৪ লোকসভা নির্বাচন হতে যাচ্ছে চারটি ‘ম’ এর উপর ভিত্তি করে।এই চার ‘ম’ হলো মোদি-মন্দির- মহিলা-ময়দান।এই মুহূর্তে দেশে প্রধানমন্ত্রী মোদির জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতী’। জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে তাঁর ধারেকাছেও কেউ নেই।শুধু দেশেই নয়,আন্তর্জাতিক স্তরেও মোদি এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন। ২০২৪ লোকসভা ভোটে মোদির এই জনপ্রিয়তা গেরুয়া ভোট বাক্সে একটা প্রভাব পড়বেই।আগামী ২২ জানুয়ারী অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধন হবে।এই উদ্বোধনকে ঘিরে শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও এই আবেশকে গেরুয়া শিবির এমন উচ্চতায় নিয়ে গেছে এবং নিয়ে যাচ্ছে, তাতেও ভোটের সাফল্য দেখছেন রাজনীতির পণ্ডিতরা।ট্রিপল তালাক এবং ৩৩ শতাংশ মহিলা সংরক্ষণ বিল, মহিলাদের কাছে বিজেপি এবং মোদিকে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।যার প্রভাব পড়বে ভোট বাক্সে। আর চতুর্থত হচ্ছে ‘ময়দান’। মানে রাজনীতির ময়দান খালি।মোদিবিরোধী অর্থাৎ মোদির বিকল্প বিরোধী শিবিরে কে?দেশের আম জনতার একাংশ, যারা বিজেপি ও মোদি বিরোধী, তারা কাকে ভোট দেবেন? বিকল্প কেউ আছে কি ? রাজনৈতিক পণ্ডিতদের মতে, মোদির বিকল্প কেউ নেই। ময়দান পুরোপুরি খালি।ফলে ক্ষোভ এবং অপছন্দের ভোটও গেরুয়া ভোট বাক্সে যেতে পারে।তাই ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে গেরুয়া হ্যাটট্রিক আটকাতে হলে সবার আগে এই চার ‘ম’-কে মোকাবিলা করতে হবে।যা এই মুহূর্তে কঠিন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।