বঙ্গময়ীর ভাগ্যাকাশে
খাদের কিনারায় চলিয়া আসিয়াছে বঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস । মন্ত্রী সভার দুই নম্বর মন্ত্রী পার্থ চটাজির গ্রেপ্তারি এবং ইডির আবদার মতন পশ্চিমবঙ্গ হইতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রীকে ভুবনেশ্বরের হাসপাতালে ভর্তি করাইতে আদালতের অনুমতির পর সকল ধোঁয়াশা কেমন নিকষ অন্ধকারে পরিণত হইলো । বর্তমানের রাজনীতিতে রাজনীতিকদের বাজারদর কোথায় গিয়া নামিয়াছে তাহা বলাই বাহুল্য । আবার ইডি , সিবিআই গোত্রের সংস্থাসকল যে এই সময়ে প্রায় নগ্ন হইয়া শাসক দলের হাতের অস্ত্ৰ বনিয়া গেছে ইহাও সকলেরই জানা ।
তথাপিও আপাত স্বচ্ছ , বঙ্গের মন্ত্রীর বান্ধবীর আস্তানা হইতে কোটি কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনায় চমকিত বঙ্গবাসী । দুর্নীতি , ঘুষখোরি যে ওই রাজ্যের প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাসা করিয়া লইয়াছিল সেই কথা সেই রাজ্যের মানুষ আগেই জানিয়া গিয়াছিলেন । কিন্তু এরপরও মমতার প্রতি তাঁহার আস্থা রাখিয়াছিলেন । এমনকি পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেপ্তারের পরেও মানুষ বুঝিতে চাহিয়াছিলেন , মমতা কী বলেন । কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিনদিন পরেও নীরব রহিলেন । শোনা যায় গ্রেপ্তারির আগে তিন তিন বার মমতাকে ফোনও করেছিলেন পার্থ । কিন্তু ফোন তুলেন নি । সে না হয় অভিমানে , রাগে তুলেননি ।
কিন্তু সেই রাজ্যের লক্ষ কোটি মানুষ যাহারা মমতার প্রতি বিশ্বাস রাখিয়া তাহার মুখাপেক্ষী হইয়া রহিয়াছেন , তাহাদের কী হইবে ? ওই রাজ্যের মধ্যবিত্তজন কিন্তু পথেঘাটে এবার প্রকাশ্যে মুখ খুলিতেছেন , যাহা এর আগে দেখা যায় নাই । গরিব মানুষই মমতার অস্ত্র । তাহারাই খেলা হবে শ্লোগানে মাঠে নামিয়াছিলেন এবং খেলা সম্পূর্ণ করিয়াছিলেন মোদি , অমিত শাহ এবং শুভেন্দুদের বিজেপির বিরুদ্ধে । জয় শ্রীরামের বিপরীতে জয় বাংলার স্লোগানে মথিত করিয়াছিলেন বাংলার নিজ স্বাভিমানের প্রশ্নে । কিন্তু সেই স্বাভিমান , আত্মমর্যাদা আর বাঙ্গালির ইমেজ আজ কোথায় লইয়া গিয়াছেন তৃণমূলের নেতারা ?
একটি ফ্ল্যাটে ২০ কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আরও শত বা কয়েক শত কোটির আশঙ্কা স্পষ্ট হইয়া সামনে আসিয়াছে । যদি ধরিয়া লইতে হয় যে ইডি কেন্দ্রীয় সরকার কিংবা বিজেপির নির্দেশে এই অভিযান চালাইয়াছে , তাহা হইতেই পারে । কিন্তু এই সিইসি এই টাকাগুলি তো নিশ্চয়ই ইডি আনিয়া আগে হইতে স্তূপ করে নাই । বিশেষ করিয়া পার্থবাবুর বান্ধবী যখন জানাইলেন , সকল টাকাই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের তখন ইহাকে অগ্রাহ্য করিবে কে ? অগ্রাহ্য করিতে পারে নাই কেহ । অন্তত বঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস তো অগ্রাহ্য বা খণ্ডন করে নাই ।
আবার মুখ্যমন্ত্রী মমতাও এই ঘটনা লইয়া একেবারেই নিশ্চুপ বসিয়া রহিয়াছেন । স্বভাবসুলভভাবে ইডি কিংবা বিজেপি কিংবা প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সম্পর্কে তাহার কোনও বিষোদগার নাই । তাহা হইলে তিনি কি ইডির অভিযোগ মানিয়া লইতেছেন কিংবা ঘটনা হইলেও হইতে পারে বলিয়া আশঙ্কা করিতেছেন ? তৃণমূল কংগ্রেস রক্ষণাত্মক ভূমিকা লইয়াছে । অথচ মদন মিত্রের ক্ষেত্রে এমন ছিল না । তারা চরম আক্রমণাত্মক ছিল । আবার এই ঘটনা লইয়া রাজ্যের বিরোধী দলগুলিও তেমন সরব হয় নাই । সিপিএম জেলায় জেলায় প্রতিবাদ জানাইয়া কুশপুতুল পোড়াইয়াছে ।
বিজেপি পার্থ চ বাড়ি এলাকায় মিছিল করিয়াছে । কংগ্রেসের মিছিল পথে নামিয়াছে জনা কয় লোকজন লইয়া । কিন্তু সেই সকল মিছিলে তেমন কোনও তাপ উত্তাপ নাই , আগুন থাকা তো দুরের কথা । মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় মন্ত্রীর কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা উদ্ধারের দৃশ্য নিঃসন্দেহে শাসকদল , বিরোধী দল সকলেরই লজ্জার । আর সবচাইতে লজ্জার হইলো সাধারণ মানুষের । কিন্তু এই লজ্জাজনক ঘটনায় সকল আগুন দেখা গেল কেবল সামাজিক মাধ্যমে । বেকারের চোখের জল , বেরোজগারের হাহাকার , প্রতিবাদী কবির কবিতা রচনা আর সর্বোপরি পার্থ চাটুজ্জের শারীরিক গঠন এবং তাহার বান্ধবীভাগ্য লইয়া সামাজিক মাধ্যম আগুন জ্বালাইতেছে , আগুন পোহাইতেছে । আবার কোর্টের নির্দেশে পার্থ চাটুজ্জেকে ভুবনেশ্বরের হাসপাতালে লইয়া যাওয়া হইলে হাসপাতাল তাহাকে সুস্থও করিয়া দিতেছে রাতারাতি , যাহাতে ইডি জেরা করিতে পারে । এই সকল ঘটনায় ক্রমেই একটি আশঙ্কা হইতেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পার্টি পার্থ চাটুজ্জেকে শেষ পর্যন্ত বলির পাঁঠা বানাইয়া নিজেকে বাঁচাইতে চাহিবে না না তো ? আবার প্রশ্ন আসিতেছে , এইভাবে কি বাঁচিয়া যাওয়া সম্ভব ?