বঙ্গের ভোট উৎসব।

 বঙ্গের ভোট উৎসব।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

বাংলায় ফের ভোটের বাদ্যি বেজেছে। এবার পঞ্চায়েত ঘিরে বাংলায় রাজনৈতিক পারদ তরতর করে চড়ছে। যুযুধান ২ শিবির তৃণমূল এবং বিজেপি। রয়েছে সিপিএম, কংগ্রেসও। তবে সিপিএম, কংগ্রেস গত বিধানসভা ভোটের মতো পঞ্চায়েত ভোটে জোট করে লড়বে কিনা তা জানায়নি।২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর পশ্চিমবঙ্গে এই প্রথম কোনও নির্বাচন হচ্ছে। বাংলায় ভোট মানেই একটা টান টান উত্তেজনা এবং রাজনৈতিক হিংসা।এবারের পঞ্চায়েত ভোটটা অবশ্য শাসকদল তৃণমূলের কাছে অনেকটা অ্যাসিড টেস্টের মতো। অন্যদিকে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির কাছেও তা ঝালিয়ে নেবার সুযোগ। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনকে তৃণমূল এবং বিজেপি ২ শিবিরই পাখির চোখ করেছে। বিশেষ করে শাসক তৃণমূলের কাছে এবারের পঞ্চায়েত ভোট বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় শাসক শিবির যথেষ্ট অস্বস্তিতে রয়েছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেপ্তারির পর থেকে এবং এরও আগে থেকে হাইকোর্টের বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে রাজ্য বেজায় অস্বস্তিতে।এর উপর কয়লা, গরু পাচার কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে তৃণমূলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত মণ্ডলও এখন জেলে। বীরভূমের একদা বাদশা অনুব্রত ছাড়াই এবার পঞ্চায়েত ভোটে লড়তে হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসকে। অন্যদিকে, তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও সিবিআই, ইডির বর্শাফলার মুখে রয়েছে। যেকোনও সময় সিবিআই, ইডি তাকে তুলে নিতে পারে— এমন -একটা খবরও চারিদিকে চলছে। এ অবস্থায় পঞ্চায়েত ভোটে শাসক তৃণমূল কতখানি সুবিধা করতে পারবে তা বলা মুশকিল।তৃণমূল কংগ্রেস যেবার বাংলায় ক্ষমতাসীন হলো অর্থাৎ ২০১১ সালের আগে ২০০৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাংলায় ব্যাপক সাফল্য পেয়েছিল তদানীন্তন বিরোধী দল তৃণমূল কংগ্রেস। পঞ্চায়েত ভোটে সেবার তৃণমূল কংগ্রেস প্রায় ৫০% আসন নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিল। এর সুফল মিলেছিল পরের বছর লোকসভা নির্বাচনে। এরপর এই দুই নির্বাচনের সাফল্যের উপর ভিত্তি করে বামেদের ভিত নাড়িয়ে ২০১১ সালে ক্ষমতাসীন হয় তৃণমূল কংগ্রেস। অর্থাৎ পঞ্চায়েত ভোট হল মূল ভিত্তি, যেখানে গ্রামের নাড়ি টের পাওয়া যায় যে মানুষ কী চাইছেন।এ জন্যই পঞ্চায়েত ভোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ কোনও রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে। কিন্তু বাম জমানায় এই পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধীদের মনোনয়ন জমা নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ উঠত। বিরোধীদের মনোনয়ন জমা করতেই দেওয়া হতো না অধিকাংশ ক্ষেত্রে। তৃণমূল জমানায়ও একই চিত্র। বিরোধীদেরও একই অভিযোগ।কিন্তু এবারের পঞ্চায়েত ভোট আগের মতো নয়। এবার নিজেরাই অস্বস্তিতে রয়েছে তৃণমূল শিবির। বিজেপি যদি সেই সুযোগ নিতে পারে তাহলে তারা ভালো ফল করতে পারে।এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার অনেকটা চমক দিয়ে রাজ্যের নবনিযুক্ত নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা (যিনি প্রাক্তন মুখ্যসচিব) রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটের নির্ঘন্ট জারি করেছেন। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো মনোনয়ন জমা দেবার সময়সীমা রাখা হয়েছে মাত্র ৬ দিন।এ নিয়ে আপত্তি তোলেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। পঞ্চায়েত ভোটে এমনিতেই শাসকদলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ থাকে যে বিরোধীদের মনোনয়ন জমা করতে দেওয়া হয় না। এর উপর মনোনয়ন জমা করার সময়সীমা এতো কম দেওয়ায় শাসকদলের দিকে আঙুল উঠেছে। দেখা গেছে, নির্বাচন কমিশনার পদে যোগ দিয়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তিনি পঞ্চায়েত ভোটের নির্ঘন্ট জারি করেছেন। তাহলে তিনি পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি কীভাবে খতিয়ে দেখলেন, কার চোখ দিয়ে তিনি দেখলেন— প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। উল্লেখ্য, পঞ্চায়েত ভোট হবে আগামী ৮ জুলাই। একদিনেই হবে ভোট। জিলা পরিষদের মোট আসন ৯২৮, পঞ্চায়েত সমিতি ৩৪১টি। গ্রাম পঞ্চায়েতের ভোট হবে ৩৩১৭টিতে।বিরোধীরা একে ষড়যন্ত্র হিসাবেই দেখছেন। ইতিমধ্যেই মনোনয়ন জমা দেবার সময়সীমা বাড়ানোর দাবি উঠেছে। গণতন্ত্রে সব দলের অংশগ্রহণ নির্বাচনে জরুরি। মানুষ সুচিন্তিত মতামত দেবে। এটাই কাম্য। কিন্তু বাংলায় অবাধ এবং সুষ্ঠু ভোট হবে কিনা বিশেষ করে এই পঞ্চায়েত নির্বাচনে তা — নিয়েই এখন যত প্রশ্ন, উৎকণ্ঠা। তৃণমূল এত তড়িঘড়ি নির্বাচন করাতে চাইছে কেন ? ডাল মে কুছ কালা তো নেহি হ্যায় !

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.