বাংলায় একটি অতিপ্রচলিত এবং জনপ্রিয় প্রবাদ রয়েছে। সেটি হলো ‘চোরের মায়ের বড় গলা’।এই প্রবাদ বাক্যের মূল সারমর্ম এখানে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। কেননা,এই প্রবাদের সারমর্ম এবং ব্যবহার সম্পর্কে কমবেশি সকলেই ওয়াকিবহাল।শুরুতেই এই প্রবাদবাক্যটি উল্লেখ করার পিছনে প্রধান কারণ হলো, সোমবার পশ্চিমবঙ্গে নজিরবিহীন চাকরি দুর্নীতি মামলায় কোলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের ঐতিহাসিক রায় ঘোষণার পর, ওই রাজ্যের ক্ষমতাসীন সরকার এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্বের ভূমিকা এখন ওই প্রবাদ বাক্যের মতোই। সব অংশের পাঠকদের কথা চিন্তা করে এবং একটি দায়িত্বশীল সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকার কথা মাথায় রেখে এই মুহূর্তে বঙ্গের ক্ষমতাসীন সরকার ও দলটির বিরুদ্ধে বি এর থেকে ভালো বিশেষন আর খুঁজে পেলাম না। তাই এই প্রবাদবাক্যটিই উল্লেখ করতে হয়েছে।
গত প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরেই পশ্চিমবঙ্গে এই নজিরবিহীন চাকরি দুর্নীতি মামলার শুনানি চলেছে কোলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে।সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই কোলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি শবুর রশিদিকে নিয়ে গঠন করা হয়েছিল এই ডিভিশন বেঞ্চ।চাকরি দুর্নীতি নিয়ে দায়ের করা মোট ১৯ টি মামলা একসাথে করে শুনানির জন্যই এই ডিভিশন বেঞ্চ গঠন করার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।সেই মতো বেঞ্চ গঠন করে শুনানি শুরু হয়।মামলার শুনানিকালে গত সাড়ে তিন মাসে গঙ্গা গিয়ে বহু জল গড়িয়ে গেছে।
বহু চাপানউতোর পরিলক্ষিত হয়েছে।দীর্ঘ শুনানিশেষে অবশেষে সোমবার কোলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বহুচর্চিত চাকরি দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করেছে।রায় কী হয়েছে? সেটা ইতিমধ্যে দেশবাসী জেনে গেছে।বাতিল হয়ে গেছে ২৫,৭৫৩ জনের চাকরি।পশ্চিমবঙ্গে স্কুল সার্ভিস কমিশন বিভিন্ন পদে এই চাকরিগুলি প্রদান করেছিল ২০১৬ সালে এবং পরে।
আদালতের এই রায় ঘোষণা হওয়ার পরই বঙ্গ রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়। যাকে বলে একেবারে ভূমিকম্প। গোটা ভারতবর্ষে সম্ভবত এর আগে এতবড় চাকরি দুর্নীতি আর হয়নি। হরিয়ানাতে এর আগে চাকরি দুর্নীতি হয়েছিল।
এর জন্য ওই রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে ওম প্রকাশ চৌতালা সহ মোট ৫৫ জনকে ১০ বছর জেল খাটতে হয়।হরিয়ানাতে মাত্র ৩২০৮ জন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে চরম দুর্নীতি হয়েছিল।আর পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যাটা ২৫,৭৫৩ জন। এর আগে আমাদের ত্রিপুরা রাজ্যেও পূর্ববর্তী বামফ্রন্ট সরকারের বেআইনি কার্যকলাপের কারণে ১০,৩২৩ জন শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়েছে। ওই চাকরি আজও ফিরে পাননি তারা।
পশ্চিমবঙ্গে যা হয়েছে, তাকে শুধু দুর্নীতি বললে ভুল হবে। একেবারে দিনে ডাকাতি, পরিকল্পিতভাবে সংঘবদ্ধ হয়ে সাংঘাতিক ধরনের অপরাধ সংঘটিত করা হয়েছে।যা রীতিমতো শিউরে ওঠার মতো। হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ তিনশ পাতার রায়ে প্রতিটি ছত্রে ছত্রে সাংঘাতিক ধরনের মোটর সতেরটি দুর্নীতির পর্দা ফাঁস করেছে। যার সাথে বঙ্গের ক্ষমতাসীন সরকার, সরকারের গোটা মন্ত্রিসভা এবং ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতা-নেত্রী সরাসরি এই নজিরবিহীন কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত। মোটা টাকা ঘুষের বিনিময়ে চাকরি, পরীক্ষা না দিয়ে চাকরি, সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি, যোগ্যদের নম্বর পাল্টে অযোগ্যদের চাকরি, প্যানেলে নাম নেই এমন প্রার্থীদের চাকরি, ওএম আর শিট পাল্টে দেওয়া- বাদ যায়নি কিছুই।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, জনগণের ভোটে জয়ী একটি সরকার জনগণের সাথে এতবড় কুকীর্তি, এতবড় প্রতারণা, এত বড় বিশ্বাসঘাতকতা, এতবড় অপরাধ সংঘটিত করে কী করে? সব থেকে বিস্ময়কর ঘটনা হলো, এত বড় কেলেঙ্কারি ও সংঘবদ্ধ অপরাধের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর বঙ্গের ক্ষমতাসীন সরকার ও দল নিজেদের মুখ ঢাকতে, উল্টো হাইকোর্টের ঘাড়ে দায় চাপাচ্ছে। বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্টতই বলেছেন, এই রায় নাকি বেআইনি। তিনি এই রায় মানেননা।তিনি বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধেই আঙুল তুলেছেন।ভাবখানা এমন যেন হাইকোর্ট এই রায় দিয়ে, সরকার ও দলের নজিরবিহীন দুর্নীতিকে সামনে এনে বিরাট বড় অপরাধ করেছে। শুধু তাই নয়, পুরো বিষয়টিকে বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী রাজনীতিকরণে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আদালতের এই রায়ের নেপথ্যে তিনি বিজেপির হাত দেখছেন। কিন্তু এতসব করেও কি দুর্নীতির দায় থেকে পার পাওয়া যাবে? রায় ঘোষণার পর থেকেই বঙ্গ রাজনীতিতে যেমন তোলপাড় শুরু হয়েছে, তেমনি বঙ্গবাসীর মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। বিরোধীরা একযোগে সুর চড়িয়েছে। বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে। লোকসভা ভোটের আবহে চাকরি দুর্নীতি মামলার রায় যে ক্ষমতাসীন সরকার ও দলকে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতেই এখন…. বড় গলা করে পাল্টা সুর চড়িয়ে চাকরিচ্যুতদের পাশে আছি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এতে কতটুকু কাজ হবে সেটা অবশ্যই সময়েই বোঝা যাবে।
অনলাইন প্রতিনিধি :-বিভিন্নঅঞ্চলে সবজি চাষিদের ফসলে নানা ধরনের পোকার আক্রমণ হচ্ছে। বামুটিয়া কৃষি মহকুমাধীন এলাকার…
অনলাইন প্রতিনিধি :-চুলে পাকধরার আগ পর্যন্ত কোনও মূল্যই থাকে না কমিউনিস্টদের ঘরে।জাতীয় যুব দিবসের এক…
অনলাইন প্রতিনিধি :-নাট্যভূমির উদ্যোগে নাট্যপ্রেমীদের আকাঙিক্ষত চন্দন সেনগুপ্ত স্মৃতি জাতীয় নাট্য উৎসব আগামী ১৫ জানুয়ারী…
গত বছরের মে মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কাউন্সিলে গৃহীত হয় গত বছরের মে মাসে ইউরোপীয় ই…
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে আরও সংখ্যা বাড়িয়ে,তিনশোর বেশি আসন নিয়ে বিজেপির ক্ষমতায় ফেরার পরে অনেক রাজনৈতিক…
অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যসরকার হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসা পরিষেবা ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনায় রোগীর দুর্ভোগ কমাতে সচেষ্ট হয়েছে…