এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

সরকারীভাবে ঢাকঢোল পিট হিয়া সদৎসরের মতন এই সময়েও বৃক্ষ রোপণ চলিতেছে। সরকারীভাবে এই বৃক্ষরোপণকে বনমহোৎসব বলার রীতি রহিয়াছে অনেককাল ধরিয়া। উদ্দেশ্য বৃক্ষরোপণ করিয়া আমাদের এই ছোট্ট রাজ্যটিকে শ্যামলসুন্দর করিয়া রাখা। এই সময়ে বারিধারায় ধরা তৃপ্ত থাকে তাই এই সময়ই রোপণের প্রকৃত সময়। এই বর্ষাতেই শান্তিনিকেতনে কবিগুরু হলকর্ষণ উৎসব চালু করিয়াছেন। গাছ আমাদের লাগাইতে হয়। কারণ বৃক্ষরাজি আমাদের পরিবেশ নির্মল রাখে আবার বিশ্ব উষ্ণায়নের বিপরীতে দাঁড়াইয়া কথা বলা যাইবে জাতীয় বিশ্ব পরিসরের মঞ্চে। ভৌগোলিকভাবে এই রাজ্যের মোট ৬০ শতাংশ জুড়িয়া রহিয়াছে বনাঞ্চল। এমন কথা নাই বনাঞ্চল মানেই বন থাকিবে। এই বনাঞ্চলের যে সমস্ত এলাকায় বন নাই সেখানে বসতিও আছে। রহিয়াছে বৈধ- অবৈধ বাগিচা। যদি সবুজায়ন লইয়া কথা বলিতে হয় তাহা হইলে বনাঞ্চলে বাগিচা থাকিলে অসুবিধা নাই। সেই ভূমি সবুজই রহিল। তাহা ছাড়া বন দপ্তর বনাঞ্চলে যে বন রোপণ করিয়া থাকে তাহাও বাগিচার মতনই। মাইলের পর মাইল জুড়িয়া মনোকালচার। সেগুন গাছ কিংবা শাল গাছের বনই আমাদের চোখে পড়ে। মিশ্র বন আর দেখিতে পাওয়া যায় নাই।

বন বলিতে আমাদের বুঝিতে হয় মিশ্র প্রাকৃতিক বন। এই বনেই বাঁচিয়া থাকে বন্য প্রাণী, পশুপাখি। মিশ্র বনে পাখ পাখালির কলতান থাকে। মনোকালচারে ঝিঝি পোকারাও থাকিতে পছন্দ করে না। মনো কালচারের যে বন তাহা বন্যপ্রাণীদিগের পছন্দ নহে কারণ এই বনে তাহাদের খাবার থাকে না। তাহাদের বসবাসের জন্যও অনুকূল নহে। ফলে বন্যপ্রাণী ক্রমশ কমিয়া যাওয়া বা নিশ্চিহ্ন হইবার পেছনে মিশ্র বনভূমির বিপন্নতাও একটি কারণ হইতে পারে। মনে রাখিতে হইবে, আমাদের রাজ্যে পাহাড়ি এলাকার মূলনিবাসী মানুষেরা স্বভাবগত ভাবে বননির্ভর। আজ হইতে পাঁচ-সাত দশক আগে আমাদের রাজ্যে বন দপ্তরের যে বনায়ন শুরু হইয়াছিল সেই সময়েও সেই সকল বননির্ভর বনবাসী মানুষের কথা সেইভাবে চিন্তা করা হয় নাই। ফলে বন্য শাকসবজিরও আকাল দেখা দেয়। এই কথা আমাদের বনবাসীরা সম্যক জানেন।
অতঃপর যে বন রহিল তাহাও আর বনভূমির চেহারা রহিল না। আমাদের দেশের স্বার্থে যখনই পরিকাঠামোগত উন্নয়নের প্রসঙ্গে আসে তখনই সংকুচিত হয় কৃষিভূমি, বনভূমি। রেল সম্প্রসারণ, জাতীয় সড়ক হইলে তো কথাই নাই। এইগুলির বাহিরেও তিনদিকে আন্তর্জাতিক সীমানা লইয়া রাজ্যটির ভৌগোলিক অবস্থান থাকায় যখনই কাঁটাতারের বেড়ার প্রসঙ্গ আসিয়াছিল, উচ্ছেদের পর প্রচুর বাড়িঘর বনভূমির জমিতে মাথা তুলিল। আর তাহার সঙ্গে সঙ্গে আসিয়াছিল বন ধ্বংসের এক প্রেক্ষিত। ওই সময় হইতে শুরু করিয়া আজ অবধি রাজ্যে বনের কাঠ চুরি আর কোনও দফাতেই বন্ধ হইল না। দেখিতে গেলে আজ বনের অস্তিত্ব জাগিয়া রহিয়াছে কেবল জাতীয় সড়ক, মূল সড়ক বরাবর কয়েকশো মিটার এলাকা ধরেই ভেতরে ভেতরে সকলই ফাঁপা। আবার বন দপ্তর এই সময়ে যে অবস্থায় আসিয়া দাড়াইয়াছে তাহাকে নিধিরাম সর্দার বলিলেও অত্যুক্তি হইবে না। প্রয়োজনীয় লোকলস্করের অভাব বন দপ্তরে। বনরক্ষীর সংখ্যা কমিতে কমিতে এমন অবস্থায় আসিয়াছে যে যাহারা রহিয়াছে তাহাদের বিরল বলিতে হয়। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়া কমিয়াছে প্রয়োজনীয় যানবাহন ইত্যাদির সংখ্যা। ফলে কাঠ পাচারকারীদের ধরিবার সাধ্য আর নাই বন দপ্তরের। ইচ্ছাও আছে কিনা সন্দেহ। এত কিছুর পরেও আমাদের বাঁচিয়া থাকিতে হইলে গাছ বাঁচাইতে হইবে, গাছ লাগাইতে হইবে। হয়তো এই কারণেই গাছ এখন শহরে বন্দরে, জনাকীর্ণ এলাকাতেই অধিক লাগানো হয়। কিন্তু এই সব এলাকায় এত সরকারী জমি কই? বেসরকারী জমিতে গাছ লাগাইতে পারেন কেবল সেই জমির মালিক। অন্য কেহ নয়। জনাকীর্ণ যে এলাকার গাছ লাগানো হইয়া থাকে সেই সমস্ত গাছ এক সময় আকাশের দিকে মাথা তুলিতে তুলিতেই আর এক সন্ত্রাসের শিকার হইতে থাকে।
না আমাদের প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে সমন্বয় প্রায় নাই বলিলেই চলে। বন দপ্তর যখন রাস্তার ধারে গাছ লাগায় তখন ভাবা হয় না গাছটি মাথা তুলিলেই বিদ্যুৎ পরিবাহী তারকে ছুঁইয়া ফেলিবে। বছর দুই পর গাছখানা বিদ্যুতের তার ছাড়াইয়া আরও ওপরে ডালপালা মেলিয়া ধরে। আর কালবৈশাখীর এক সন্ধ্যারাতে বিদ্যুৎ দপ্তরের লোকেরা আসিয়া গাছটিকে ন্যাড়া করিয়া দিয়া যায়। এই ন্যাড়া পর্ব ততদিন চলিতে থাকিবে উন্নয়নের নতুন প্রকল্পে গাছটি যেইদিন কাটিয়া। ফেলিবার নির্দেশ না আসিবে। এক সময় সারা আগরতলা জুড়িয়া হরিম গাছের বাহার ছিল। রাজন্য আমলের এই বিশাল গাছগুলি প্রথমে এলে একে এরপর একসঙ্গে কাটিয়া ফেলা হইলো। কারণ আগরতলা রাস্তাঘাট প্রশস্ত করিতে হইবে। তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারে সময়ে আগরতলা যত গাছ কাটা পড়িয়াছে উন্নয়নের সন্ত্রাসে তাহ এক দশক পরও আগরতলা শহরের সেই সংখ্যক গাছ প্রতিরো হইলো না। আজ আমাদের চক্ষের সামনে রাস্তা প্রশস্ত করিন প্রয়োজনে খোয়াই- তেলিয়ামুড়া সড়কে কিংবা আসাম- আগরত রোডে যে হারে যে সমস্ত বনস্পতি ধ্বংস করা হইতেছে তাল ক্ষতিপূরণ কবে কী প্রকারে করিয়া উঠা সম্ভব? এই লইয়া উন্নয়ন- কোনও প্রশাসন বা সরকারের কোন সমীক্ষা আমরা কিন্তু কো কালেই দেখিতে পাই না।

Dainik Digital

Recent Posts

উত্তপ্ত নাগপুর, কার্ফু জারি!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-উত্তপ্ত মহারাষ্ট্রের নাগপুরের মহল এলাকা ৷ ধর্মীয় গ্রন্থ পুড়িয়ে দেওয়ার গুজব ছড়ানোয় পাথর…

23 hours ago

ককবরক ভাষার প্রশ্নপত্র বাংলা হরফে, প্রতিবাদে সরব প্রদ্যোত!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-আবারও সিবিএসসি পরিচালিত দশমমানের ককবরক ভাষা পরীক্ষায় বঞ্চিত হলেন রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা।সোমবার অনুষ্ঠিত দশম…

23 hours ago

প্রি-ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতাই কমাবে ডায়বেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-প্রিডায়াবেটিস এই বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ধারণা নেই।এক গবেষণায় জানা গেছে, ৮০ শতাংশই…

24 hours ago

রুখিয়ায় গ্যাস টারবাইন রূপান্তরের কাজ,শুরু হচ্ছে ১-২ মাসের মধ্যে, বিদ্যুতে আগামী পরিকল্পনা জানালেন মন্ত্রী!

অনলাইন প্রতিনিধি :-যাবতীয় প্রস্তুতিচূড়ান্ত।চলতি বছরের আগামী এপ্রিল মাসের শেষ দিকে অথবা মে মাসের প্রথম দিকে…

24 hours ago

সামনা-র সংশয়!!

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে এমন অনেক পরিস্থিতি দেখা গেছে,যেখানে শত্রুরা বন্ধুতে পরিণত হয়েছে…

24 hours ago

হার্ভের বিরুদ্ধে ৮ জনে খেলে, এক ম্যাচ আগেই নকআউটে ব্লাডমাউথ।।

অনলাইন প্রতিনিধি :-হার্ভেকে গত ম্যাচে হারানোর পরই এ গ্রুপ থেকে সমীরণ চক্রবর্তী স্মৃতি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের…

2 days ago