বন্ড নিকলা…. চুহা!

 বন্ড নিকলা…. চুহা!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

যেটা টা জানার জন্য এত কিছু করা হলো, শেষ পর্যন্ত। জানা হলো না। আরও স্পষ্ট করে বললে, সেই তথ্যই যে তথ্য ভোটের মুখে গোটা দেশবাসী জানার জন্য উদ্‌গ্রীব হয়ে অপেক্ষায় ছিলো, যে তথ্য ভোটের মুখে শাসকের বিরুদ্ধে একটা জম্পেশ ইস্যু হয়ে উঠতে “পারতো। বিরোধীরা সেই ইস্যুকে হাতিয়ার করে শাসকদলকে বেকায়দায় এবং অস্বস্তির মধ্যে ফেলার একটা বড় সুযোগ পেতে পারতো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই হলো না। ইলেক্টোরাল বন্ড থেকে আপাতত যে তথ্য প্রকাশ্যে এলো, তাতে শাসকদলকে চাপে ফেলার মতো তেমন কোনও রসদ নেই। বরং বলা যায় এই ক্ষেত্রে সকলেই কমবেশি উপকৃত হয়েছে। ফলে থুতু উপর দিকে মারলে নিজের গায়েও পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি অনেকটা ‘খোদা পাহাড় নিকলা চুহা’ প্রবাদের মতো এসে দাঁড়িয়েছে।

গত মাস খানেক ধরেই ইলেক্টোরাল বন্ড’ নিয়ে জাতীয় রাজনীতি সরগরম। এই বন্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলি কে কত টাকা পেয়েছে? তা জানানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, ১৫ মার্চ বিকেল পাঁচটার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে ইলেক্টোরাল বন্ডের যাবতীয় তথ্য আপলোড করতে হবে। সময়ের আগেই অর্থাৎ ১৪ মার্চ রাতেই নির্বাচন কমিশন ওই সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে আপলোড করে দিয়েছে। দুই ভাগে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। প্রথম ভাগে রয়েছে ‘ইলেক্টোরাল বন্ড’ কারা বা কোন্ সংস্থা ক্রয় করেছে? কবে ক্রয় করেছে? সেই সংক্রান্ত তথ্য। দ্বিতীয় ভাগে রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি কবে কত পরিমাণ অর্থ পেয়েছে সেই তথ্য।

কমিশনের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে ‘ইলেক্টোরাল বক্ত ক্রেতাদের তালিকায় আদানি, আম্বানিরা নেই। যার অর্থ আদানি আম্বানিরা ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে কোনও রাজনৈতিক দলকে চাঁদা (ডোনেশন) দেয়নি। যদি ক্রেতার তালিকায় আদানি, আম্বানিদে সংস্থার নাম থাকতো তাহলে এটাই হয়ে উঠতো ভোটের ইস্যু। এ নিয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই। যদিও প্রকাশিত তথ্য অনুযাই অর্থ প্রাপ্তির তালিকায় স্বাভাবিকভাবেই প্রথম স্থানে রয়েছে শাসকদ বিজেপি। দ্বিতীয় স্থানে তৃণমূল কংগ্রেস এবং তৃতীয়স্থানে আছে কংগ্রেরাজনৈতিক দলগুলিকে তাদের তহবিল বৃদ্ধি বা অনুদানের জন্য ইলেক্টোরাল বন্ডের ব্যবস্থা চালু করেছিল কেন্দ্র। এই স্কিম শুরু হয়েছিল ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে। চলতি বছরের গত ১৫ ফেব্রুয়ারী সুপ্রিম কোর্ট ইলেক্টোরাল বন্ডকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে তা বাতিল করে দেয়। তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে স্কিম চালু হওয়ার পর থেকে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার ৩০টি শাখা থেকে ১৬,৫১৮ কোটি টাকা মূল্যের ইলেক্টোরাল বন্ড কেনা হয়েছিল। এর থেকে কমবেশি অধিকংশ রাজনৈতিক দলই অনুদান পেয়েছে।

তবে বিষয়টি কিন্তু এখানেই শেষ হয়নি। নতুন করে জট লেগেছে। স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া নির্বাচন কমিশনকে বন্ড সংক্রান্ত যে তথ্য দিয়েছে তা অসম্পূর্ণ তথ্য বলে মন্তব্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট এই সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে ফের এসবিআইকে নোটিশ ইস্যু করেছে। আগামী ১৮ মার্চের মধ্যে এই বিষয়ে এসবিআইএর জবাব তলব করা হয়েছে। খবরে প্রকাশ, বিগত পাঁচ বছরের সমস্ত অনুদানের তথ্য জমা দিতে হবে এসবিআইকে। এই নির্দেশের কারণ হচ্ছে, এসবিআই থেকে তথ্য পাওয়ার পর নির্বাচনী বন্ড নিয়ে যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন, তাতে দেশের কোন্ কোন্ সংস্থা নির্বাচন বন্ডের মাধ্যমে কত টাকা করে চাঁদা দিয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলিকে, তার তালিকা থাকলেও, কোন্ সংস্থা থেকে কোন্ দলে চাঁদা গিয়েছে, তার পৃথক তথ্য উল্লেখ নেই। একই সঙ্গে আদালত জানতে চায় বন্ডের ইউনিক অ্যালফা নিউমারিক নম্বর। সেই তথ্যও দেওয়া হয়নি ব্যাঙ্কের তরফে। কিন্তু এখন মূল প্রশ্ন হচ্ছে, এই তথ্য কি. আদৌ আছে ব্যাঙ্কের কাছে? যদি থেকে থাকে তাহলে তো ব্যাঙ্ক আগেই দিয়ে দিতে পারতো। জবাব জানতে ১৮ মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে তবে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে, ‘নির্বাচনি বন্ড’ এর তথ্য প্রকাশ নিয়ে যতটা তোলপাড় হবে মনে করা হয়েছিল, তার কিছুই হয়নি। বিষয়টি অনেকটা পাহাড় কেটে ইঁদুর বের করার মতো হয়েছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.