বহি:রাজ্যে সুপারি পাঠানো যাচ্ছে না বিপাকে রাজ্যের চাষিরা : ক্ষোভ

 বহি:রাজ্যে সুপারি পাঠানো যাচ্ছে না বিপাকে রাজ্যের চাষিরা : ক্ষোভ
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

আসাম পুলিশের হয়রানি বন্ধ না হবার কারণে রাজ্যের চাষিরা এখনও বহি:রাজ্যে সুপারি পাঠাতে পারছে না। বহি:রাজ্যে সুপারি না পাঠাতে পারার কারণে বিপাকে পড়েছে রাজ্যের সুপারি চাষিরা। আসাম পুলিশের হয়রানির প্রতিবাদ জানিয়ে রাজ্যের সুপারি চাষিরা মাস দেড়েক আগে কুমারঘাটে জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছিল। জাতীয় সড়ক অবরোধ করার পর ঊনকোটি জেলা প্রশাসন অবরোধ স্থলে ছুটে এসে অবরোধকারীদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল রাজ্য প্রশাসন আসাম সরকারের সাথে আলোচনা করে এই সমস্যায় সমাধান করবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই সমস্যার সমাধান না হবার কারণে সুপারি চাষিরা সুপারি বিক্রি করতে পারছে না। সুপারি চাষিরা তাদের ফসল বাজারে নিয়ে এসে ক্রেতার অভাবে বিক্রি করতে না। পারাতে পুনরায় সুপারি বাড়ি নিয়ে যেতে হচ্ছে। সুপারি চাষিরা বিপাকে পড়লেও রাজ্য সরকার সুপারি চাষিদের এই সমস্যা সমাধানের জন্য কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

ঊনকোটি জেলা এবং ধলাই জেলা সহ উত্তর জেলার বিভিন্ন গ্রামে প্রচুর পরিমাণে সুপারির চাষ হয়। এই তিন জেলার মধ্যে ধলাই জেলার সাইকিবাড়ি, নেপালটিলা ডারলং বস্তি সহ বিভিন্ন গ্রামে প্রচুর পরিমাণে সুপারির বাগান রয়েছে। এছাড়াও ঊনকোটি জেলার শেরমুন টিলা, দারচৈ, চিনিবাগান, সোনাইমুড়ি, পেচারথল সহ আশপাশ এলাকাতেও প্রচুর সুপারি বাগান রয়েছে । প্রতিবছর অক্টোবর মাস থেকে সুপারি বাগানগুলিতে সুপারি পাকতে শুরু করে। এই এলাকার সুপারি কেনার জন্য বহি:রাজ্যের সুপারি ব্যবসায়ীরা এসে বাগানে থেকে সুপারি কিনে নিয়ে যায়। সুপারি চাষিরাও বাগান চুক্তি বা বস্তা চুক্তি সুপারি বিক্রি করে। অন্যান্য বছর প্রতি বস্তা সুপারি বিক্রি করতো চাষিরা আঠারশ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা। এই এলাকার অনেক পরিবার রয়েছে যারা সুপারি বিক্রি করে পরিবারের সারা বছরের খরচ চালায়। কিন্তু এ বছর যেমন আসছে না বহি:রাজ্যের সুপারি ব্যবসায়ীরা তেমনি স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও চাষিদের কাছ থেকে সুপারি কিনছে না। যাও মাঝেমধ্যে এক দুইবক্তা বিক্রি হচ্ছে তাও দাম খুবই কম। প্রতি বস্তা সুপারি বিক্রি হচ্ছে বারশ থেকে তেরশ টাকা। ফলে বিপাকে পড়েছে সুপারি চাষিরা। মূলত রাজ্যের এই সুপারির বাজার হচ্ছে আসাম রাজ্য। আসাম রাজ্যের সুপারি ব্যবসায়ীরা এই রাজ্য থেকে সুপারি কিনে বিভিন্ন গুটকা কোম্পানির কাছে বিক্রি করে। রাজ্য
থেকে সুপারির বোঝাই গাড়িগুলি ত্রিপুরা সীমান্ত পার হয়ে আসাম সীমান্তে পৌঁছানোর পরেই আসাম রাজ্যের চুরাইবাড়ি ওয়াচ টাওয়ারের পুলিশ এই সুপারি বোঝাই গাড়িগুলি আটক করে। আসাম পুলিশের অভিযোগ এই সুপারিগুলি চিনা সুপারি। চিন দেশ থেকে মায়ানমার হয়ে মিজোরাম সীমান্ত পার হয়ে ত্রিপুরার দামছড়া হয়ে এই সুপারিগুলি প্রবেশ করছে। ফলে এই অবৈধ সুপারিগুলি তারা আটক করছে। এদিকে রাজ্যের সুপারি ব্যবসায়ী এবং চাষিরা অভিযোগ করে বসে বিদেশি সুপারিগুলি এই রাজ্যের সুপারি থেকে অপেক্ষাকৃত বড়। কিন্তু আসাম পুলিশ তারপরেও রাজ্য থেকে রপ্তানিকারী সুপারিগুলি আটক করছে। আর এই সুপারিগুলি আটক করার পেছনে রয়েছে আসাম পুলিশের গভীর চক্রান্ত।

রাজ্যের সুপারিগুলি গাড়ি বোঝাই করে আসামে প্রবেশ করা মাত্রাই কিছু দালালের সাহায্যে আসাম পুলিশ গাড়িগুলি আটক করে। আর পুলিশের হুমকির মুখে পড়ে সুপারি ব্যবসায়ীরা অপেক্ষাকৃত কম দামে এই দালালদের কাছে সুপারি বিক্রি করতে হচ্ছে। এদিকে আসাম পুলিশের হয়রানির প্রতিবাদ জানিয়ে রাজ্যের সুপারি চাষি থেকে ব্যবসায়ীরা কুমারঘাটে আসাম- আগরতলা জাতীয় সড়ক অবরোধ করতে গত মাস দেড়েক আগে। জাতীয় সড়ক অবরোধকারীদের দাবি ছিল আসাম পুলিশের হয়রানি বন্ধ করা। জাতীয় সড়ক অবরোধের পরে অবরোধ স্থলে এই সময় ছুটে এসেছিল ঊনকোটি জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। প্রশাসন থেকে রাস্তা অবরোধকারীদের এই সময় প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল যে, আসাম সরকারের সাথে রাজ্যে সরকার কথা বলে এইসমস্যার সমাধান করবে। কিন্তু জেলা প্রশাসনের প্রতিশ্রুতির প্রায় দেড় মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত সমস্যার সমাধান হয়নি।বর্তমানে বাগানগুলিতে পুরো দমে সুপারি পাকতে শুরু করেছে। অথচ ক্রেতা নেই। কোনও কোনও সুপারি চাষি কুমারঘাটের হাটবারের দিনে সুপারি নিয়ে বাজারে আসছে। কিন্তু ক্রেতা নাই। কুমারঘাটের সুভাষ সংঘ ক্লাবের বিপরীত পাশে সুপারির পাইকারি বাজার বসে। প্রতি বছরের মত সুপারি চাষিরা সুপারি নিয়ে বাজারে এলেও সুপারি ব্যবসায়ীদের দেখা নাই। সুপারি বিক্রি করতে না পেরে চাষিরা পুনরায় এগুলি বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে। এতে তাদের পরিবহণ খরচ গচ্ছা যাচ্ছে। শেরমুন টিলা সাইকিবাড়ি ডারলং বস্তি এলাকায় অনেক পরিবার রয়েছে যাদের সারা বছর সংসারের খরচ চলে এই সুপারি বিক্রি করে। কিন্তু এবার সুপারি বিক্রি করতে না পারাতে চাষিদের মাথায় হাত। অথচ রাজ্যে সরকার সুপারি চাষি এবং ব্যবসায়ীরা যাতে বহি:রাজ্যে নিয়ে গিয়ে সুপারি বিক্রি করতে পারে তার জন্য কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে চাষিদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.