বাংলাদেশের নির্বাচন!!

 বাংলাদেশের নির্বাচন!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসন চলিতেছে। একটি গণ অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সেই দেশে একটি রাজনৈতিক দল জন্ম লইয়াছে। এই দল বলিতেছে, শেখ হাসিনার ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত সেই দেশে কাহারো নির্বাচন বা অন্য অনুষ্ঠানের কথা মুখে আনাই নাকি উচিত নহে। যদিও দেশের জনমত, যাহারাই মুখ খুলিতেছেন তাহারা দেশে শীঘ্র ভোটের পক্ষে বলিতেছেন। এবং বেসরকারী সমীক্ষায় ইহারা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ। কিন্তু দেশের সরকার যখন একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করিয়া লয়। ইহার অর্থ হইবে সেই দলকে নির্বাচনে লইয়া যাওয়া। এই কাজ করিতে হইলে প্রথমেই দলটিকে সাধারণ মানুষের সম্মুখে দাঁড় করাইতে হইবে। মানুষের সঙ্গে পরিচিতি ঘটাইতে হইবে। এই কর্মটি সহজ নহে বরং কঠিন ও সময়সাপেক্ষ। আবার হঠাৎ মনে হইতেছে, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যেন নতুন কিছু ঘটিতেছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস কিছুদিন ধরিয়াই বলিতেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে জাতীয় সংসদের নির্বাচন হইবে। তিনি অবশ্ কথা বলিয়াছিলেন দেশের বাহিরে। সেই হইতে তিনি ধারাবাহিকভাবে এই কথা বলিয়া যাইতেছিলেন। প্রায় সবাই, এমনকী দেশের রাজনৈতিক দলগুলিও এই কথা বিশ্বাস করিয়াছিল। গ্রামগঞ্জে, চায়ের টেবিলেও এই সকল কথা লইয়া সেই দেশের অভ্যন্তরে আলোচনা শুরু হইয়া যায়। কিন্তু হঠাৎই তিনি ভিন্ন সুর লইলেন। এইবার বলিলেন, ডিসেম্বর হইতে মার্চের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস যখন এ কথা বলিয়াছিলেন, তখন তাহার অপর এক উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান প্রথমে বলিলেন, ডিসেম্বর হইতে জুনের মধ্যেই নির্বাচন হইবে। এর পরপরই নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির নতুন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলিলেন, দেশে এখনও নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয় নাই। প্রশাসন ও পুলিশের অবস্থা বর্ণনা করিতে গিয়া তিনি বললেন, এই পুলিশ নির্বাচন করার মতন সক্ষম হইয়া উঠে নাই। প্রধান উপদেষ্টা ইউনুস যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা রাইট টু ফ্রিডমের প্রেসিডেন্ট প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম এবং নির্বাহী পরিচালক প্রাক্তন মার্কিন কূটনীতিক জন ড্যানিলোভিচের সহিত সাক্ষাৎকারের সময় বলিয়াছিলেন, ছয়টি কমিশন দেশে সংস্কার বিষয়ে যে সকল প্রস্তাৰ সম্মুখে রাখিয়াছে, সেইগুলি লইয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সহিত আলোচনা হইবে। আলোচনাশেষে দলগুলি জুলাই সনদ (জুলাই চার্টার) স্বাক্ষর করিবে। অন্তর্বর্তী সরকার এই সনদের কিছু অংশ বাস্তবায়ন করিবে এবং বাকি অংশ বাস্তবায়ন করিবে পরবর্তী রাজনৈতিক নির্বাচিত সরকার। যদি রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচনের আগে ন্যূনতম সংস্কারে সম্মত হয়, তবে ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইতে পারে। অন্যথায় জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী বছরের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হইবে। কিন্তু ইউনুসের এই কথা জলে বা তেলে সেদ্ধ হইতেছে না। জুলাই চার্টার এবং সংস্কার নিশ্চয়ই এক জিনিস নহে। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা বলিতেছেন, জুলাই সনদ লইয়া জাতীয় ঐকমত্য হইলে তাহা সংস্কার-সংক্রান্ত ঐকমত্য হইবে। কিন্তু সনদ এবং সংস্কার তো এক বিষয় নহে। জুলাই চার্টার বা জুলাই সনদ এক ধরনের প্রক্লেমেশন। জুলাই অভ্যুত্থানের ওপর একটি প্রক্লেমেশন যে নেই, তাহাতে ছাত্ররা ক্ষুব্ধ হইয়া সরকারকে দোষারোপ করিতেছিল। সরকার পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য বলিয়াছিল, প্রক্লেমেশন একা করা যাইবে না। এই জন্য ঐকমত্য দরকার। সরকার ঐকমত্য গড়িয়া তুলিতে রাজনৈতিক দলগুলির সহিত কথাবার্তা বলা শুরু করিবে।ইহারই পরিণতিতে বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলির আলোচনা বা স্বাক্ষরের কথা বলা হইতেছে। জুলাই সনদ বা চার্টার একটা ইতিহাস। এর অতীত, বর্তমান রহিয়াছে এবং ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশ থাকিবে। যাহারা আন্দোলনে ছিলেন, তাহারা এ জন্যই বলিতেছেন, এ হচ্ছে একটা ধারাবাহিকতা। বাহান্ন সাল হইতে আজ অবধি ধারাবাহিকতা খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে। অর্থাৎ প্রক্লেমেশন হইলো সেই জিনিস, যাহাতে ভাঙাচোরার সময়টাকে ব্যাখ্যা করিয়া ভবিষ্যতের আশা জাগাইয়া দেওয়া। এই আশাজাগানিয়া বিশ্লেষণের সহিত রাষ্ট্রসংস্কারের যোগাযোগ কোথায়? সাত মাস পর দেশের মানুষ বাস্তব অভিজ্ঞতা হইতে একটি ভালো ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশায় প্রয়োজনীয় সংস্কারের কথা বলিতেছেন। রাষ্ট্রসংস্কারের বিষয়টি সনদের সমার্থক নহে। সরকার ছয়টি কমিশন গঠন করিয়াছে, ছয়খানা রিপোর্ট পেশ হইয়াছে। এইবার অংশীদার াজনৈতিক দল হ্যাঁ-না অথবা খানিক পরিবর্তনের প্রস্তাব রাখিবে। ইহার ইত প্রশাসনিক সংস্কার মিলাইয়া দেওয়া হইতেছে কীসের ভিত্তিতে? দুইটির পদ্ধতি আলাদা। তাহা ছাড়া দলগুলি যদি অল্প সংস্কারে রাজি হয়, ব ডিসেম্বরে আর না হইলে মার্চে বা জুনে নির্বাচন – এই বক্তব্যের দিয়া সংস্কার সম্পর্কে ধোঁয়াশা তৈয়ার করিয়াছেন ইউনুস বাংলাদেশের জনপ্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশন সম্পর্কেও একই কথা হে বলা যাইতে পারে। সংস্কার মানে খোলনলচে বদলাইয়া ফেলা। প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব লইয়া কয়েক মাস এই সংস্কারই চলিয়াছে। যদিও ইদানীং বলিলেন, এখন পর্যন্ত সংস্কার শুরুই হয় নাই। হঠাৎ এই ভাবে নির্বাচন পিছাইয়া দেওয়ার সুর শুনিয়া বাংলাদেশ থমকাইয়া গিয়াছে।এই কথা সত্য, নতুন রাজনৈতিক দলকে পুরানো রাজনৈতিক দলগুলি প্রতিদ্বন্দ্বিতার দৃষ্টিভঙ্গিতেই দেখিবে। প্রধান উপদেষ্টা যে এই দল এবং সংগঠকগণের প্রতি বিশেষভাবে দুর্বল, তাহা আর গোপন নেই। তাহারা বুঝিতেছেন সরকার নতুন দলকে রাজনৈতিকভাবে বিশেষ সুবিধা দিতে পারে মানে সরকার দেশের নির্বাচন পিছাইয়া দিতে পারে। এ জন্যই ডিসেম্বর হইতে মার্চ হইয়া জুনে চলিয়া যাওয়া। প্রয়োজনে আরও পিছাইয়া যাইতে পারে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.