এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-শিয়রে কড়া নাড়ছে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাধারণ নির্বাচন।নতুন ইংরেজি বর্ষের প্রথম রবিবার বাংলাদেশের ভোট।আন্তর্জাতিক কূটনীতি এবং বাণিজ্য নীতির ভারসাম্যের নিরিখে গুরুত্বপূর্ণ এক সন্ধিক্ষণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই নির্বাচন।ভারতের জন্যও এই নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম।বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বহির্বিশ্ব বিশেষত আমেরিকার উদ্বেগের স্বরূপ লক্ষ্য করলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়।সাদা চোখে আমেরিকার এই উদ্বেগের কারণ, বাংলাদেশের জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং হিংসাত্মক ঘটনাবলি।তবে তৃতীয় নয়নে দেখলে তাদের এই উদ্বেগের কারণ, আওয়ামী লীগ সরকারের একই সঙ্গে চিন এবং ভারতের প্রতি সুসম্পর্ক বৃদ্ধি।একই কারণে আগামী বছর ভারতের নির্বাচন নিয়েও উদ্বেগে আমেরিকা।গত কয়েক বছর ধরেই আমেরিকা বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে বিশেষ উদ্বিগ্ন।২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মার্কিন সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশের র‍্যাব (র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন)-এর বর্তমান ও প্রাক্তন অধিকর্তাদের এবং কয়েকজন অফিসারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা।সম্প্রতি,২১ সেপ্টেম্বর বাইডেন সরকারের প্রতিনিধি নিউইয়র্কে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের পর ঘোষণা করেন, বাংলাদেশের নির্বাচনে গণতান্ত্রিক কার্যকলাপে যে সব সরকারি আধিকারিক, শাসক বা বিরোধী দলের নেতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী আধিকারিকেরা বাধার সৃষ্টি করবেন, তাদের ও তাদের পরিবারবর্গকে আমেরিকা সরকার ভিসা দেবে না।গত ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দলের ডাকা হরতালে শাসক আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী বিএনপি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর আমেরিকান দূতাবাস এক বিবৃতিতে জানায় যে, তারা সম্ভাব্য ভিসা নিষেধাজ্ঞার জন্য সমস্ত হিংসাত্মক ঘটনা পর্যালোচনা করবে।বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে আমেরিকার এ-হেন উদ্বেগ বস্তুত অনভিপ্রেত, কিয়দংশে অনধিকার চর্চাও। পশ্চিম এশিয়া এবং আফ্রিকার অধিকাংশ দেশেই বাংলাদেশের মানের গণতন্ত্রেরও অস্তিত্ব নেই। গণতন্ত্রের নামগন্ধ নেই বর্তমান বিশ্বের দ্বিতীয় শক্তিধর দেশ চিনেও। আমাদের বামপন্থী বিরোধী নেতাকুলও সম্ভবত চিনের বিরোধী নেতাদের নাম বলতে পারবেন না।অথচ এই নিয়ে দিব্য রাষ্ট্রপুঞ্জ চলছে, নিশ্চিন্তে আছে মার্কিন সরকার।তা হলে বাংলাদেশের অপরাধ কী ?অনেকে মনে করেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্রমশ চিনের দিকে ঝুঁকছে, বিশেষত চিনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ প্রকল্পে যোগদান আমেরিকা ভালো চোখে নেয়নি।চিনের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপ।চিন থেকে ইউরোপে পণ্য যায় আকাশ,স্থল ও সমুদ্রপথে। বাণিজ্যপথ হিসেবে বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের আওতায় চিন বিশ্বের ১৫১ টি দেশের সঙ্গে স্থল ও সমুদ্রপথে সংযোগ স্থাপন করছে।একে বিশ্বের সবচেয়ে বিস্তৃত ও আগ্রাসী প্রকল্প হিসেবেই দেখছে পশ্চিমী বিশ্ব।চিন থেকে কাজাখস্তান হয়ে, রাশিয়া, বেলারুশ, পোল্যাণ্ডের ১১ হাজার ১৭৯ কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে পণ্যবাহী ট্রেন পশ্চিম জার্মানির ডুইশবুর্গ শহরের পৌছানোর কথা। প্রকল্পের আর একটি অংশ চিনের কুনমিং থেকে মিয়ানমার দিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করে কলকাতা যাওয়া কথা।যদিও ভারত সরকার এখনও এ প্রকল্পে যুক্ত হয়নি, বরং এই প্রকল্পের সমালোচনায় মুখর।দক্ষিণ এশিয়ায়ে চিনের বিস্তার ঠেকাতে সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত।আবার ভারতের চিরশত্রু পাকিস্তানের পুরনো তথা ঘনিষ্ঠ মিত্র চিন। ভারত মহাসাগরে চিনের মোকাবিলায় আমেরিকার সহায়তাও পাচ্ছে ভারত।এ ক্ষেত্রে তাই বাংলাদেশের সমুদ্র ও স্থলবন্দর চিনের কাছে অতীব প্রয়োজনীয় । চিনের বাণিজ্যিক নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, আবার চিনের সঙ্গে নিজেদের বাণিজ্যিক যুদ্ধের কারণে আমেরিকার জন্যও বাংলাদেশ সমধিক গুরুত্বপূর্ণ।অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়ন মডেল পূর্ব ও পশ্চিম নেতাদের কাছে আজ যথেষ্ট সমাদৃত।অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রে কিছু দুর্বলতা থাকলেও বাংলাদেশ আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ, নির্ভরশীল দেশ।জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ বিশ্বের সপ্তম অনিরাপদ দেশ। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ, দারিদ্র ও মিয়নামার সরকারের গণহত্যার ফলে সৃষ্ট উদ্বাস্তু সমস্যার আঞ্চলিক সমাধান এবং সর্বোরি দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি বজায় রাখার প্রশ্নেও অনুঘটকের মতো কাজ করে চলেছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক কূটনীতির মাধ্যমে বাংলাদেশ সব রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার সচেতন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারের বারংবার উস্কানিমূলক আচরনেও, আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার মাধ্যমে বাংলাদেশ উদারতার পরিচয় দিয়েছে। অতএব, সব মিলিয়েই বাংলাদেশের সুস্থিত গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগে আমেরিকা,এবং একই সঙ্গে ভারতও।তাই একই সঙ্গে দুই দেশের চোখ আগামী ৭ জানুয়ারী অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশের ভোট।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

খুশির ঈদ উদযাপন

অনলাইন প্রতিনিধি :-"ঈদুল ফিতর" যার অর্থ হলউপবাস ভাঙার আনন্দ। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটো ধর্মীয় উৎসবের…

11 hours ago

সাব ইনস্পেক্টর অব এক্সাইজ নিয়োগে, সরকারের নিয়োগনীতি কার্যকর করছে না টিপিএসসি, ক্ষুব্ধ বেকাররা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-২০১৮ সালে নতুন নিয়োগনীতি চালু করেছে রাজ্য সরকার। ২০১৯ সাল থেকে রাজ্য সরকারের…

12 hours ago

কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যাপক প্রচার সত্ত্বেও,হাসপাতালে জনঔষধির সস্তা ওষুধ সংকটে রোগীরা বঞ্চিত!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-কেন্দ্রীয় সরকার ঢাকঢোল পিটিয়ে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সস্তায় ভালো গুণমানসম্পন্ন জনঔষধি তথা জেনারিক মেডিসিন…

12 hours ago

শান্তিরবাজারে ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন জগন্নাথ পাড়া!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-শান্তিরবাজারে সিনিয়র টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হলো জগন্নাথপাড়া প্লে সেন্টার টিম। রবিবার বাইখোড়া ইংলিশ…

12 hours ago

বামফ্রন্টের রেখে যাওয়া ১২,৯০৩ কোটি সহ,রাজ্যে বর্তমানে ঋণের পরিমাণ ২১,৮৭৮ কোটি টাকা: অর্থমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-২০২৩-২৪ অর্থ বছর পর্যন্ত রাজ্য সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২১.৮৭৮ কোটি…

13 hours ago

ক্রাইম ব্রাঞ্চের শক্তিবৃদ্ধিতে গুচ্ছ পদক্ষেপ : মুখ্যমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বিগত ছয় মাসে ত্রিপুরা পুলিশ ক্রাইম ব্রাঞ্চকে ২২টি মামলা হস্তান্তর করা হয়েছে।২০২৪ সালের…

13 hours ago