সংবাদপত্রে টেণ্ডারের বিজ্ঞাপন, সংক্রান্ত অর্থ দপ্তরের বিতর্কিত সার্কুলার ঘিরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া!!
বাংলাদেশের সংস্কৃতি!!

ধর্ষণ নারী নির্যাতন লইয়া এই উপমহাদেশে অধিকাংশ দেশে একই অবস্থানে চলিয়া যায় দেশের শাসক। একই রকম বয়ান তৈয়ার হইয়া যায় ধর্মীয় সংগঠন কিংবা প্রভাবশালী রাজনীতিক অথবা হুজুরদিগের কথায়বার্তায়। আমাদের দেশে হিন্দি বলয়ে নারী ধর্ষণের পর সংগঠিত আকার লইয়া প্রতিরোধ হইতে দেখা যায় নিপীড়িতার পরিবার এবং নিপীড়িতার বিরুদ্ধে। এই সকল ঘটনা আমাদের পীড়া দেয়। আমরা ভাবিতে থাকি হিন্দি বলয়েই বুঝি এই সকল ঘটনা সম্ভব, বাংলায় নহে। আমরা বাংলার মাটিতে জন্মাইয়াছি, হাথরস ইত্যাদি স্থান হইতে অনেক নিরাপদ দূরত্বে রহিয়াছি। তাই নিজেকে ধন্য মনে হইতো। কিন্তু হালের যে বাংলাদেশ, তাহার যে গতিপ্রকৃতি আজ বাঙ্গালির সেই মানসিক নিরাপত্তাটুকুও ছিনাইয়া লইতেছে। দেশটি রাজনৈতিক কারণে বর্তমানে এক অরাজক অবস্থায় পড়িয়া আছে। রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করিতেছে রাজনৈতিক বানিয়া আর শৌখিন রাজনীতির অনভিজ্ঞ কিছু ছাত্র নেতা। এই অবস্থায় সামাজিক ও ধর্মীয় পরিসরের দায়িত্ব লইয়াছে কিছু হুজুর, যাহারা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম অশিক্ষিত ও মূর্খ প্রজাতির মোড়ল। ইহারা সেই দেশে ঘটমান নারী নির্যাতন এবং ধর্ষণের ঘটনায় যথারীতি মহিলাদেরই দোষারোপ করিতেছে। মহিলাদের পর্দানসীন না হইবার কারণে, পোশাকআশাকের কারণে ধর্ষণের ঘটনা ঘটিতেছে বলিয়া জানাইতেছে। যদিও ইদানীং বাংলাদেশে যে সকল যৌন হিংসার ঘটনা ঘটিয়াছে তাহার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিশুকন্যারা শিকার হইয়াছে। তাহাদের ক্ষেত্রে হুজুরেরা কোন পর্দার কথা বলিতেছে, এই লইয়া সেই দেশের জনমানসে প্রশ্ন দেখা দিয়াছে।বাংলাদেশের যে সকল প্রধান সংবাদ মাধ্যম ইন্টারনেটের মাধ্যমে শ্বের বাঙ্গালির সম্মুখে প্রতীয়মান হইয়া থাকে সেইগুলিতে বোর অন্ততপক্ষে সাত হইতে আটখানা শিরোনাম রহিয়াছে কল শিরোনামগুলি ১) ধর্ষণের ঘটনায় টাকা দিয়া মীমাংসার চেষ্টা ২) শিশু ধর্ষণের চেষ্টায় জেলে গ্রেপ্তার। ৩) প্রতিবন্ধী কর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগ, সন্তান জন্মের চার ঘন্টা পর মৃত্যু। ৪) সিলেটে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে চালক ও সহকারীকে অভিযুক্ত করে মামলা। ৫) আশুলিয়া শিশু ধর্ষণের অভিযোগে কেরানিগঞ্জে তরুণ গ্রেপ্তার। ৬) বিবাহের অনুষ্ঠানে তিন বছরের শিশুকে ধর্ষণে অভিযোগ, কিশোর গ্রেপ্তার। ৭) ঢাকার কিশোরী ধর্ষণের দায়ে তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। একদিনের সংবাদে এতো বিশাল সংখ্যক নারী নির্যাতনের সংবাদ প্রকাশের অর্থ হইলো অরাজক দেশে নারীর বিরুদ্ধে এই ধরনের হিংসার ঘটনা ঘটিয়া চলা এক স্বাভাবিক বিষয়। যুদ্ধ, অরাজক শাসনে নারীরা প্রথম ও প্রধান শিকার হইয়া থাকে। বাংলাদেশেও তাহাই ঘটিতেছে। এর প্রতিরোধ কি হইতেছে না? হইতেছে, কিন্তু কোনওটাই কাজে আসিতেছে না। পুলিশ প্রতিরোধ, প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হইতেছে মাঝেমাঝেই। ধর্ষণের ঘটনায় অনেকেই স্লোগান দিতেছে- জিন, জিয়ান, আজাদি। অন্যদিকে অনেকে বলিতেছে, শরিয়া আইনকেও প্রচলিত আইনের পাশাপাশি চালু করা হোক।

জিন, জিয়ান, আজাদি মূলত কার্দিশ মহিলাদিগের জাতিগত প্রতিরোধের স্লোগান হইলেও, পৃথিবীর মানুষ এই স্লোগান চিনিয়াছে ‘ইরানে, মহিলাদের উপর শরিয়া আইনের নামে ভয়ানক যে অত্যাচার চলিতেছে তাহার বিরুদ্ধে ইরানের মহিলাদের গণ আন্দোলনের সময়। এই স্লোগান ইরানের মহিলাদিগের হৃদস্পন্দন হইয়া উঠিলেও বাংলাদেশে এই স্লোগান সম্পূর্ণভাবে আরোপিত। যেমনে কলকাতায় রাত দখলের হুজুগে স্লোগান হইয়াছিল, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’সেই রকম জিন-জিয়ান-আজাদির অর্থ নারী-জীবন-স্বাধীনতা। এই সকল স্লোগান কেবল তথাকথিত ডিগ্রিবান শিক্ষিত শ্রেণীর মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকিয়া যায়। তবে বাংলাদেশে শিশুকন্যা হইতে শুরু করিয়া বৃদ্ধাদের পর্যন্ত রেহাই দিতেছে না, তাহার প্রতি আন্তর্জাতিক সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাইতে পারে মাত্র বাংলাদেশের আইন উপনিবেশিকদের তৈরি করিয়া দেওয়া চূড়ান্ত রকম লিঙ্গ বিদ্বেষী আইন, আবার ইরানে শরিয়া আইন। ইরান আর বাংলাদেশ এক না হইলেও বাংলাদেশে কতকগুলি মানুষ শরিয়া আইন চাহিতেছে অথচ ইরানের মহিলারা শরিয়া আইন হইতে পরিত্রাণ পাইতে চাহিতেছে। বাংলার দেশ- মাটি সংলগ্ন কোনও আন্দোলন মহিলারা কোনও বাংলাতেই করিতেছে না। ফলে কোনও আন্দোলনই বা প্রতিবাদই সমস্ত নারীদের হইয়া উঠিতে পারিতেছে না। বাংলাদেশে যাহারা ইসলামিক বা শরিয়া আইন চাহিতেছে তাহারা যেমন ব্যর্থ হইতেছে তেমনই মূল স্রোতের নারীদিগের প্রতিনিধি ধর্মনিরপেক্ষরা আরও অধিক ব্যর্থ। এই কথা সত্য যে বাংলাদেশে ধর্ষণ-খুনের মতন ঘটনা ভয়াবহ মারক হইয়া উঠিয়াছে। অবিলম্বে ইহার প্রতিকার দরকার। বাংলাদেশের বাঙ্গালিরা কোন শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার দাবি করিতেছেন? সৌদি আরবে মহিলাদিগের যে গার্ডিয়ানশিপ আইন – একটা মেয়ের অভিভাবক প্রয়োজনে নাবালক শিশুপুত্র পর্যন্ত হইতে পারে, পরিবারের ছেলেদিগের অনুমতি ভিন্ন একটা মেয়ে কোনও বিষয়ে ভর্তি হইতে পারিবে না, কোথাও যাইতে পারিবে না, বিয়ে করিতে পারিবে না, তাহার পাসপোর্ট হইতে শুরু করিয়া সমস্ত কাগজপত্র এমনকী ডাক্তারের কাছে যাওয়া পর্যন্ত, সকলই পরিবারের ছেলে সদস্যদের স্বাক্ষরে হইবে- ইহাই শরিয়া আইন? শুধুমাত্র ধর্ষকের শাস্তির জন্য এক চিমটা শরিয়া আইন যাহারা চাহিতেছে, তাহারা সম্পূর্ণ শরিয়া আইনের জালে ফাঁসিবে। আর এই শরিয়া আইন কার্যকর করিবে স্থানীয় হুজুরেরা। বাংলাদেশে সবচাইতে কম জানা, কুয়ার ব্যাঙের মতন জ্ঞান যাদের, যাহারা লোকাচার দূরের * কথা- বিষয়বস্তু কী জিনিস তাহাই জানে না, উনারাই হচ্ছেন লোকাল হুজুর জনগোষ্ঠী। অর্থ হইলো শরিয়া আইন যাহারা চাহিতেছে এই স্থানীয় হুজুর গোষ্ঠীর হাতে মহিলাদিগের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা তুলিয়া দেওয়ার কথা বলিতেছেন। যে গোষ্ঠী মহিলাদিগকে মানুষই মনে করে না! কাজী নজরুলের বাংলা, রবীন্দ্রনাথের সোনার বাংলা, পঞ্চকবির বাংলাদেশ সামাজিক সাংস্কৃতিক ভাবে কোন পরিণতি লইতে চলিয়াছে?
