বাংলাদেশ ও ভূকৌশল!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

প্রতিবেশি বাংলাদেশ।বলা যায় নয়াদিল্লীর একমাত্র সুপ্রতিবেশি দেশ হইলো বাংলাদেশ।আর ভাষা সংস্কৃতি আর ইতিহাসের নিরিখে ভারত দেশের তিন অঙ্গরাজ্য ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ এবং আসামের সহিত এই দেশটির নৈকট্য অতি ভীষণ। ভারতের সর্ববৃহৎ স্থলসীমানা রহিয়াছে বাংলাদেশের সহিত। বাংলাদেশের আকাশে তাই মেঘ করিলে বৃষ্টি এই পারেও ঝড়িয়া পড়ে।নৈকট্যের বা আত্মীয়তার কারণেই বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে চোখ বুঝিয়া থাকা সম্ভব নহে।ভাবিতেই হয়।
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতা গোটা উপমহাদেশকে হতচকিত করিয়াছে।একটি গণতান্ত্রিক সরকারের পুলিশ ছাত্র আন্দোলন ঠেকাইবার নামে রাজপথে যে প্রকাশ্য দমন পীড়ন নামাইয়া আনিয়াছিল তাহা অভাবনীয়।সেই যাত্রায় দেশের সুপ্রিম কোর্ট কোটা লইয়া রায় দিলে আন্দোলন খানিক স্তিমিত হইয়া যায়। ইত্যবসরে সেই দেশের মুক্তিযুদ্ধ অর্থাৎ স্বাধীনতা বিরোধী জামাতে ইসলামকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করিয়াছে সরকার। কিন্তু এরপরেও আন্দোলনের তীব্রতা কিন্তু কমে নাই। বলা যায় দ্বিতীয় পর্যায়ে আবার শুরু হইয়াছে। এই পর্যায় আগের চাইতে সুসংহত বলিয়া মনে হইতেছে। এই ছাত্র আন্দোলনের সূচনা ছিল ৯ দফা লইয়া।এইবার দ্বিতীয় পর্যায়ে উহা এক দফায় আসিয়াছে।এই দফা আগের নয় দফায় ছিল না। এইবার একটাই দফা, দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং সর্বসম্মত নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কাউকে দায়িত্ব ন্যস্ত করা।
প্রথম দফায় আন্দোলনের জেরে বাংলাদেশে নেট বন্ধ হইয়া ফের স্বাভাবিক হইলে এবং ছাত্রদের এক দফা আন্দোলনের ঘোষণার পূর্বে ঢাকার এক সাংবাদিক সেই দেশের বর্তমান পরিস্থিতি লইয়া কথা প্রসঙ্গে বলিলেন, এই আন্দোলন ভিন্ন মাত্রার। সাম্প্রতিক অতীতের শাহবাগ আন্দোলন হইতে কীভাবে পৃথক এই আন্দোলন তাহা বুঝাইতে যাইয়া বলিলেন- প্রথমত,মধ্যবিত্তের থিয়েটার – আর্ট ফিলিমের অনুরাগী গোষ্ঠী কিংবা বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলি এই আন্দোলনের নেতৃত্বে নাই। ফলে বয়স্ক নেতাদের সামনে রাখিয়া মীমাংসা সহজ হইতেছে না।যাহা সম্ভব হইয়াছিল শাহবাগের আন্দোলনে।দ্বিতীয়ত,এই আন্দোলন কোনও রাজনৈতিক মতাদর্শপ্রসূত নহে, যাহা নবুই দশকের আন্দোলনে ছিল।বরং রুটিরুজির লড়াই হইতে এক মতাদর্শ তৈয়ার হইয়াছে।
রুটিরুজি নিশ্চিত নয় তাই ব্যবস্থার পরিবর্তন করিতে হইবে।
তৃতীয় বিষয় হিসাবে তিনি বলিতে পারিলেন, এই সকল কারণে আন্দোলনকারীরা এখন অবধি কোনও রাজনৈতিক দলের দ্বারা ব্যবহার হয় নাই।অনেকেই ব্যবহার করিতে চেষ্টা করিতেছে।কিন্তু তাহাদের আন্দোলনের ধরন দেখিলে বুঝা যাইতেছে যাহারা ব্যবহার করিতে আসিবে তাহারাই ব্যবহার হইয়া যাইতে পারে। ছাত্ররা সেই রকম কার্য উদ্ধারের ক্ষমতা রাখে। লেখক-সাংবাদিক বন্ধুর এই পর্যবেক্ষণ যদি সত্য হয় তাহা হইলে ছাত্রদের এই আন্দোলনের সততা লইয়া কোনও কথা আসিবে না। যদিও সেই সিদ্ধান্তে উন্নীত হইবার সময় এখনও আসে নাই।এই আন্দোলন আরও অনেকদিন চলিবে।নানান বাঁক লইবে।তবে এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য কী আগাগোড়াই অর্থনৈতিক? নাকি ইহার পশ্চাতে ভূকৌশলগত কোনও বিষয় গোপনে কাজ করিতেছে? ২০২৩ সালের শেষান্তে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর রিপোর্ট (বিবিএস) একটি রিপোর্ট প্রকাশ হয়। তাহাতে বলা হয়, দেশে পনেরো থেকে চব্বিশ বয়স্ক ৩৯ শতাংশের বেশি যুবকের হাতে কোনও কাজ নেই। তাহারা কিছুই করে না।মূল স্রোতের শিক্ষা ব্যবস্থায়ও তাহারা নাই।অর্থাৎ ১ কোটি ২২ লক্ষ মানুষের কিছুই করার নাই।ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলের বয়ানে বেকারের সংখ্যা ৩.৩ শতাংশ।দেশটির অবস্থা এমন যে প্রতি বছর চার লক্ষের কিছু বেশি ছাত স্নাতক ডিগ্রি পাইতেছে আর বছরে তিন বা চার হাজার সিভিল সার্ভিসের শূন্য পদে যাহাতে কোটার ব্যরিকেড না থাকে তাহান জন্য রাজপথে রক্তক্ষয়ী লড়াই করিতেছে।পুলিশের বন্দুকের সামনে দুই হাত ছড়াইয়া বুক প্রশস্ত করিয়া দিতেছে।এই আবেগ নিখাদ। পদ্মাপাড়ের মানুষের এই আবেগ সর্বজনবিদিত।কিন্তু যে সমাজ বহুমুখী সমস্যায় পড়িয়া রহিয়াছে ইহার সমাধান কেবল আবেগের মালা গলায় জড়াইয়া সম্ভব নহে।আরও একটি বিষয় লক্ষ্যণীয়।যাহারা রাজপথে রহিয়াছে তাহাদের প্রধান অভিযোগ, ভোটাধিকার পাইবার পর হইতে অদ্যাবধি তাহারা কোনও অবাধ ভোট দেখিতে পান নাই।আবার দেশের বড়বড় পদাধিকারীদের দুর্নীতির সঙ্গে জুড়িয়া থাকার প্রতিবেদন পড়িতে পান।চক্ষের সামনে আওয়ামী লীগ নেতাদের দুর্নীতি করিয়া বেড়াইতে দেখিয়া থাকেন।
বাংলাদেশে ছাত্র সমাজ দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও সুসংহত যে এক দফার আন্দোলন শুরু করিয়াছে তাহাতে প্রশ্ন আসিবে এই সমস্যা কি কেবল বাংলাদেশের?নাকি এই উপমহাদেশের নতুন যে প্রবণতা তাহারই স্পর্শ? ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কায়, ২০২২-২৩ সালে পাকিস্তানে স্বত:স্ফূর্ত সরকার বিরোধী আন্দোলন হইয়াছিল, যাহার পরিণতি সকলেই অবিদিত।গত জানুয়ারীতে অনেক চেষ্টা চরিত্র করিয়া ভোটে জিতিয়া সরকারে ফিরিয়াছেন শেখ হাসিনা।আগষ্টে বেইজিং সফর সারিয়া দেশে ফিরিয়াই তাহাকে ঘরে বাইরে চাপে
পড়িতে হয়। একদিকে আমেরিকা সহ পশ্চিমী সমাজের চাপ অন্যদিকে দেশের ভিতরে মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব, বিদেশি মুদ্রায়
টানাটানি তাহাকে নাস্তানাবুদ করে। অন্যদিকে ছিল চড়া সুদে চিনের ঋণের প্রলোভন। ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে যদি দেশের আর্থিক অবস্থা লইয়া তাদের মধ্যেকার হতাশার প্রতিফলন দেখতে হয় তাহা হইলেও মৌলবাদী সমস্যাকে বাদ দিয়া দেখা উচিত নহে।
এককথায়, শুধু অর্থনীতির হতাশাই একমাত্র কারণ নহে। সমস্যা রহিয়াছে নানা স্তরের। জঙ্গি মৌলবাদের রক্তচক্ষু এই দেশের উপর প্রথম হইতেই। শেখ হাসিনার উপর প্রাণঘাতী আক্রমণের আশঙ্কা,সংখ্যালঘু নিপীড়ন এই বিষয়গুলি রহিয়াছে সর্বত্র।আবার বিএনপির জোটসঙ্গী জামাতের সহিত প্রতিযোগিতা করিয়া ইসলামি মৌলবাদের প্রচারক কৌমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজত কিন্তু বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হয় নাই।যদিও হেফাজতও বাংলাদেশে ইসলামি শাসনই চায়। দেশটির জন্মলগ্ন হইতেই বাংলাদেশের জনগণের একাংশের মধ্যে ভারত বিরোধিতা রহিয়াছে।তাহারা
ঢাকা-নয়াদিল্লীর সুসম্পর্ক মানিতে পারে না।তাহাদের মুখের বুলি,হাসিনা সরকার দেশটা ইন্ডিয়ার হাতে তুলিয়া দিয়াছে।কোমরে আগের জোর না থাকিলেও পাকিস্তানপন্থী একটি শক্তি সর্বদাই অদৃশ্য রিমোটে বাংলাদেশের মানুষের মন মানসিকতায়,রাজনীতিতে, মেজাজ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করিয়া আসিতেছে মুক্তিযুদ্ধের পর হইতেই। তাহারা কখনও সফল, কখনও অসফল।
ভারত বিরোধিতার যে উগ্রতা তাহা সাম্প্রতিককালে বৃদ্ধি পাইয়াছে।ভারতের ক্রিকেট দলের বিশ্বজয়ের ঘটনা লইয়া সেই দেশের কিছু মানুষ সামাজিক মাধ্যমে সেই উগ্রতারই পরিচয় দিয়েছে। এই ছোট্টছোট্ট ঘটনা সেই দেশে মৌলবাদী শক্তির সম্প্রসারণকে ইঙ্গিত করে। বাংলাদেশে ভারত বিরোধিতার পশ্চাতে একটি ভূকৌশলগত বিষয় বরাবর কাজ করিয়া থাকে। আগে পাকিস্তান এই রকম ভারত
বিরোধিতা হইতে লাভ কুড়িয়াতে চাহিত।আজ ময়দানে নীরবে আসিয়াছে চিন।বাংলাদেশে আজ ভারতকে দুর্বল করিতে পারিলে তাহাতে সর্বাধিক লাভ আজ চিনের।২০০৯ সালে হাসিনা ক্ষমতায় ফিরিয়া বলিয়াছিলেন, ভারত বিরোধী কোনও শক্তি বাংলাদেশের এবং এর অর্থ ইহা নহে যে সুযোগ পাইলে আইএসআই বা অন্য শক্তিগুলি এই দেশে চুপ করিয়া থাকিবে। অতএব ভাবিতেই হয়।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

11 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

11 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

1 day ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

2 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

2 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

2 days ago