বাংলাদেশ কোন পথে!!
দিনকে দিন ঢাকা সহ বাংলাদেশের পরিস্থিতি শোচনীয় অবস্থায় চলিয়া যাইতেছে।ডক্টর মহম্মদ ইউনুসের তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেন অকূল পাথারে হাবুডুবু খাইতেছে।আগষ্টের স্বাধীনতার স্বাদ যে আর কেহই ভুলিতে পারিতেছে না। ছাত্র হইতে মোটর শ্রমিক, সেলাই কারখানার শ্রমিক হইতে সাধারণ দোকানি সকলেই সেই স্বাধীনতাকে ঊর্ধ্বে তুলিয়া যে ধরিয়াছে আর নামাইবার নাম করিতেছে না।আর যত দিন যাইতেছে দেশবাসী বুঝিতেছেন এই স্বাধীনতা আসলে নৈরাজ্য ছাড়া আর কিছুই নহে।অভিভাবকেরা হাড়ে হাড়ে টের পাইতেছেন, দেশের ছাত্রসমাজের কী অপূরণীয় ক্ষতি হইয়া গিয়াছে।সেই ক্ষতি পোষাইবার পত খুঁজিতেছেন তাহারা,যদিও এই খোঁজাখুঁজির মধ্যে নাই সরকার।
গত এক পক্ষকালে ঢাকা মহানগরীতে তিন তিন দফা ছাত্র সংঘর্ষ – হইয়া গিয়াছে। রক্তারক্তি কাণ্ড রাজপথে। পুলিশও রক্তাক্ত হইতেছে। – রাজধানী ঢাকা নগরীর পথে এই সময়ে দিনে বা রাত্রে যে কোনও – সময়ে কাঁদানে গ্যাস,সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ কোনও অবাক হইবার বিষয় নহে।পথচারীরা প্রাণ হাতে লইয়াই পথে হাঁটিতেছেন। তাহারা জানেন যে কোনও মুহূর্তে যে কোনও রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হইয়া যাইবে। মাথায় যে কোনও সময়ে প্রকাণ্ড পাটকেল আছড়াইয়া পড়িতে পারে।অন্ততপক্ষে যানবাহনে আগুন ধরিতে পারে বা যানবাহন ছাড়িয়া ১৫ বা ২০ মাইল পথ পায়ে হাঁটিতে হইতে পারে।ছাত্রদিগের মেজাজ দেখিলে বুঝা যায় তাহারা হাসিনাকে এক দফায় দেশ ছাড়া করিয়াও পথ ছাড়েন নাই। ঢাকার ছাত্ররা তাহাদের অভিজ্ঞতাকে আরও শাণিত করিয়া লইতে পথেই থাকিতে চান।তাহারা সহপাঠীর অসুস্থতাজনিত মৃত্যুকে চিকিৎসায় অবহেলাজনিত মৃত্যু বলিয়া দাগাইয়া দিয়া যে কোনও মুহূর্তে মেডিক্যাল কলেজে- হাসপাতালে ঢুকিয়া ভাঙচুর করিতে পারে।অন্য চিকিৎসাধীন – রোগীদের প্রতি তাহারা মানবিকতা বোধ হারাইয়া ফেলিয়াছে যেন। আবার ক নামক কলেজের ছাত্ররা খ নামের মেডিক্যাল কলেজে ভাঙচুর করিতেছে জানিতে পারিয়া গ এবং ঘ কলেজের ছাত্ররা একজোট হইয়া উঠে।উদ্দেশ্য ক কলেজের ছাত্রদের শায়েস্তা করিতে হইবে।তাহারা ছুটিয়া যায় ক কলেজের ক্যাম্পাসে, মারপিট করে।পুলিশ বা ক কলেজের ছাত্ররা পরবর্তী সময়ে জানায় গ ও ঘ কলেজের ছাত্রদিগের সহিত বহিরাগত সন্ত্রাসীরাও আসিয়াছিল।
অর্থাৎ আগষ্টের স্বাধীনতায় সেই কেল্লাফতে করিবার কালেই সেই সকল দৃশ্যগুলি নিশ্চয়ই কেহ এতো তাড়াতাড়ি ভুলিয়া যান নাই। শেখ হাসিনার সরকারী বাসভবনে হানাদারির দৃশ্য কিংবা শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তির গায়ে চড়িয়া প্রস্রাব করিবার দৃশ্য!সেই সন্ত্রাসীরাও ঘরে বা জেলে ফিরে নাই,পথেই রহিয়াছে। আজও ছাত্র নাম দিয়া নিজেদের ময়দানে রাখিয়াছে,নৈরাজ্য চালাইয়া যাইতেছে।শেখ হাসিনাকে উৎখাত করিয়া বাংলাদেশের মানুষ যে সকল বিষয় হইতে পরিত্রাণ পাইতে চাহিয়াছিলেন সেই তালিকায় প্রথমেই আসিবে চাল,আটা, আলু, ভোজ্য তেলের মতন নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রণ, প্রশাসনিক দুর্নীতি দমন, আইনশৃংখলা পরিস্থিতির স্বাভাবিকতা ইত্যাদি।যেইহেতু কোটাবিরোধী আন্দোলনের নাম বৈষম্যবিরোধী হইয়াছিল তাই শিক্ষিত বেকারেরা কর্মসংস্থান চাহিয়াছিলেন এই কথা ধরিয়া লইতেই হয়।
এই তালিকার কোনটাই হয় নাই,বরঞ্চ উলটা পথে চলিতেছে প্রধান উপদেষ্টা ইউনুসের বাংলাদেশ। উপদেষ্টাদিগের বাংলাদেশ সরকার যতটা শেখ হাসিনা এবং নয়াদিল্লীকে লইয়া ব্যস্ত থাকিতেছে ততটা দেশের মানুষের প্রত্যাশার কথা ভাবিতেছে না।ফলে সেই দেশের দুর্বল মানুষ, সংখ্যালঘু অংশের মানুষের ন্যায্য অধিকার সুরক্ষার কথা এখন হাস্যাস্পদ বিষয় হইয়া উঠিতেছে।আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভাঙ্গিয়া পড়িয়াছে। থানাগুলির অবস্থা অন্যান্য সরকারী দপ্তরের মতন, সকাল দশটা হইতে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা, এর পর বন্ধ।কারণ থানাগুলি লুট হইয়া যাইবার পর তাহাদের হাতে প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র, ওয়ারলেস, ওয়াকিটকি ইত্যাদি ফেরত আসে নাই। সেনাবাহিনীকেই আইনশৃঙ্খলা সামলাইতে হয়, সেই সেনাবাহিনী আগষ্টের স্বাধীনতায় ব্যারাক অভ্যন্তরের মুজিব মূর্তি ভাঙ্গিয়াছে।