বাংলার মানুষ পরিবর্তন চাইছে: মানিক!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-লোকসভা নির্বাচন ঘোষণার আগেই বাংলার দলীয় সমাবেশে যোগ দিতে এসেছিলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা। মালদা থেকে শুরু করে বালুরঘাট, উত্তর কলকাতা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার মথুরাপুরের মতো একাধিক জায়গায় দলীয় প্রার্থীদের হয়ে প্রচার করছেন তিনি।তার কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে মানুষের ভিড়ও হচ্ছে চোখে পড়ার মতো। আগামী দুই দফার নির্বাচনি প্রচারেও একাধিক জনসভা ও রোড শো-তে অংশ নেবেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রচারের এই ব্যস্ততার ফাঁকেই এক একান্ত সাক্ষাৎকারে দৈনিক সংবাদের প্রতিনিধির সামনে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরলেন মুখ্যমন্ত্রী ডা. সাহা। বললেন, যেখানেই প্রচারে যাচ্ছি দেখতে পাচ্ছি বাংলায় এই যে একটা দুর্নীতির সরকার চলছে মানুষ সেটা মেনে নিচ্ছেন না।আমি লক্ষ্য করলাম মানুষ কিন্তু একটা পরিবর্তন চাইছে।আসলে গত বারো বছর ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সরকার যেভাবে চলছে মানুষ সেটা মেনে নিতে পারছেন না। তৃণমূলের নেতানেত্রীদের বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধার হচ্ছে।এই টাকা কোথা থেকে এলো এটা বিরাট প্রশ্ন মানুষের কাছে।বাংলায় বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন ডা. সাহা। রাজ্যের পূর্বতন বাম সরকারের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন,বাংলায় কমিউনিস্টদের আমলে যেমন হতো এখনও তেমন হচ্ছে। খুন, সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে।এ যেন কমিউনিস্টদের সরকারের কার্বণ কপির মতো। চৌত্রিশ বছরের বাম জমানার অবসান করে মানুষ কিন্তু সত্যিকারের পরিবর্তন চেয়েছিলেন।বামেদের আমলে সাঁইবাড়ির ঘটনা, বিজন সেতুতে আনন্দমার্গীদের পুড়িয়ে মারার ঘটনার মতো একের পর এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে।এটা মানুষ ভালো চোখে নেয় না।সে জন্যই পরিবর্তন চেয়েছিল মানুষ। তৃণমূলের সরকার আসার পরে প্রথম দুই-তিন বছর ভালো চলছিল।দেখা গেলো,তৃণমূলনেত্রী এক সময় যাদের বিরুদ্ধাচরণ করেছিলেন, সংসদে কাগজপত্র ছুড়ে ফেলেছিলেন সেটাকেই তিনি পরে অ্যাডপ্ট করে নিলেন।এটা বাংলার বেশিরভাগ মানুষ মেনে নেননি। মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, বাংলার মানুষকে ভোট দিতে যেতে বাধা দিয়েছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল।মানুষের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা চলছে।আর এরই মানুষের পরিবর্তন চাইছেন মানুষ, বললেন মুখ্যমন্ত্রী।বাংলার কৃষ্টি সংস্কৃতিও আজ ভূলুণ্ঠিত বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।ডা. সাহার কথায়, আমার দুঃখ লাগে,পশ্চিমবাংলার যে কৃষ্টি, সংস্কৃতি, পরম্পরা আজ ভূলুণ্ঠিত।এটা ভাবা যায় না।এখন বাংলায় শাহজাহান, সিরাজের নাম শোনা যায়।এই বাংলার সন্তান বিবেকানন্দকে নিয়ে আমরা গল্প করতাম, ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের কথা বলেছি, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে গল্প করেছি। কী হয়ে গেলো সেই বাংলার।আজ সারা ভারতবর্ষ কিন্তু তাকিয়ে রয়েছে বাংলার ভোটের দিকে। হতে পারে এটা লোকসভার নির্বাচন। কিন্তু আগামীদিনে পশ্চিমবঙ্গ কোন্ দিশায় এগোবে সেটাও এবারের নির্বাচনেই প্রতিফলিত হবে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাংলায় ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৩২টি আসনকেই টার্গেট করে – এগোচ্ছে বিজেপি।এই আসন জয়ের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীজি,অমিত শাহজি, নাড্ডাজি সহ আমরা সকলে মিলে কাজ করছি।ভোটের বাক্সে যাতে তার প্রতিফলন ঘটে সেটাই আমাদের আসল লক্ষ্য, বললেন মুখ্যমন্ত্রী।বাংলার তৃণমূল সরকার বারবার দাবি করেছেন,
একশোদিনের প্রকল্প, আবাস যোজনা সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বাংলাকে বঞ্চনা করছে কেন্দ্রের সরকার।প্রায় সব নির্বাচনি সভা থেকেই এ নিয়ে সরব হয়েছেন
তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্র-রাজ্য এই টানাপোড়নে আবাস যোজনায় রাজ্যের বহু মানুষ টাকা পাননি।এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা বলেন,বাংলাকে একেবারেই বঞ্চনা করা হচ্ছে না।প্রধানমন্ত্রীজি বারবার বাংলার উন্নয়নের কথা
বলছেন। ভারতবর্ষে একমাত্র বাংলাতেই নদীর নিচ দিয়ে মেট্রোরেল গিয়েছে।সব সময় পশ্চিমবঙ্গকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।কিন্তু কেন্দ্র দিতে চাইছে, আর রাজ্য নিতে চাইছে না তাহলে কী করে চলবে? আবার বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্র বাংলার জন্য আর্থিক বরাদ্দ করছে।আর রাজ্য সেসব প্রকল্পের নাম বদল করে দিচ্ছে।
আর বলছে,কেন্দ্র কিছুই দিচ্ছে না। ঠিক যেভাবে কমিউনিস্টরা বলতো, কেন্দ্র দিচ্ছে না।সেই একই ধারায় সরকার চালাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।কেন্দ্রকে দায়ী করে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলছেন,আমি আবাস যোজনায় টাকা দিতে চাই।নল সে জল প্রকল্পে টাকা দিতে চাই। রাজ্য তা নিতে চায় না।বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শুধু হুমকি দিচ্ছেন, আমার দরকার নেই। নেবো না।আসলে এদের কাছে আর কোনও ইস্যু নেই। কোভিডের সময়ের কথা টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কোভিডের সময়েও বিরোধীরা অনেক কথা বলেছে।এসব বিভ্রান্তি করেই
এরা ক্ষমতায় থাকতে চায়।দেশকে শক্তিশালী করতে হলে মোদিজির প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি। ২০১৪ সালে মোদি সরকার আসার আগে ইউপিএ সরকারের কাজকর্মের সমালোচনা করেন ডা. সাহা। তিনি বলেন, তখন সরকার
যেভাবে চলতো তাতে আমরাও ভেবে নিয়েছিলাম, এভাবেই বোধহয় সরকার।চলে।মসনদে বসলে দুর্নীতি করতে হবে। মোদিজি আসার পরে একটা দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেনি। আমাদের ডবল ইঞ্জিনের সরকার যেখানে যেখানে আছে সেখানেও এমন অভিযোগ নেই।ত্রিপুরার মতো ছোট্ট একটা রাজ্যে ছয় বছর
ধরে বিজেপির সরকার চলছে, সেখানেও একটিও দুর্নীতির অভিযোগ নেই।সেভাবেই সততার সঙ্গে আমরা কাজ করছি। মোদিজি বলছেন, দেশ আগে,
তারপর পার্টি এবং তারপর নিজে। আর বাংলায় উল্টো, এখানে বলছে আগে আমি, তারপর পার্টি, তারপর দেশ।বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে বহু বেআইনি অনুপ্রবেশকারী ঢুকে পড়ছে বলেও অভিযোগ করেন ডা. সাহা।তিনি বলেন,বাংলাদেশ থেকে বিশেষ সম্প্রদায়ের লোক এই রাজ্যে চলে আসছে।ত্রিপুরাতেও
বর্ডার আছে।সেখানে বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের আমরা ধরছি, ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছি।এখানে তাদের স্বাগত জানানো হচ্ছে। রোহিঙ্গা ঢুকে যাচ্ছে।এটা তো
ভয়ানক।দেশের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে।সন্দেশখালির ঘটনায় কমান্ডো নামাতে হচ্ছে। এনএসজির মতো কমান্ডো নামিয়ে বোম উদ্ধার হচ্ছে।ত্রিপুরাতেও
এক সময় এই বোমের সংস্কৃতি ছিল।এখন এসব নেই।বিজেপির সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে এখানেও এই সংস্কৃতি বন্ধ হবে।বেআইনি অনুপ্রবেশকারী ঢুকে যাওয়ার
জন্য বিএসএফের দিকে আঙুল তুলেছে বাংলার তৃণমূল সরকার। এ প্রসঙ্গে মানিক সাহার মন্তব্য, বিএসএফ থাকলেও তারা কী করবে।এমন অনুপ্রবেশকারীদের
ধরার পরে তাদের স্থানীয় পুলিশের কাছে রাখতে হবে। যদি বিএসএফের নির্দিষ্ট কোনও আধিকারিকের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকে সেটা এখানকার সরকার কেন্দ্রকে জানাক। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কেন্দ্র ব্যবস্থা নেবে।সিএএ বা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার দাবি তুলেছেন, এই আইনে আবেদন করলেই তিনি বিদেশি হয়ে যাবেন। ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।এ নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে মানিক সাহা বলেন, তৃণমূল এসব কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। সিএএ-র উদ্দেশ্য কী? যারা ২০১৪-র ডিসেম্বরের পরে যারা আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে নিপীড়িত হয়ে এখানে এসেছেন আদের নাগরিকত্ব দেওয়া।এরা নাগরিক কি না সেটাই স্পষ্ট নয়। এই মানুষগুলোকে আজ নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে।এখানে তৃণমূল বলছে, এদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। সিএএ-তে অনলাইনেই আবেদন করলে সহজ পদ্ধতিতে নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে।এর মধ্যে সমস্যা নেই।বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ইস্যুতে একাধিকবার আক্রমণে নেমেছে তৃণমূল।মানিক সাহা বলেন, এর উত্তরে একটা উদাহরণ দিই। প্রধানমন্ত্রী গুজরাটের মানুষ। এখন তিনি উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে প্রার্থী হয়েছেন। ভারতীয় জনতা পার্টিতে এসব কোনও ব্যাপার নেই।যখন যেখানে যাকে দরকার সেখানে তাকে তখন দেওয়া হয়।বিজেপি সমর্পণের পার্টি।তাই এক সময় সংসদে আমাদের দুটো আসন ছিল।এখন ৩০৩টি। গ্রাফ এখনও বাড়ছে। আগামীদিনেও বাড়বে।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

গয়নার ল্যাবে তৈরি হলো বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম রুবি!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বাংলায় চুনি, ইংরেজিতে রুবি।চুনির রং কতটা টকটকে লাল, তার উপর এই মানিকের দাম…

4 hours ago

মুখ্যমন্ত্রীর মুখ বাঁচাতে পুলিশ প্রশাসনের নির্লজ্জ দ্বিচারিতা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-চাঁদারজুলুম নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে তথাকথিত সুশাসনের রাজ্যে প্রশাসনের নির্লজ্জ দ্বিচারিতা প্রকাশ্যে এলো।…

4 hours ago

কাজের বাজারে মন্দা!!

কেন্দ্রে ১০০ দিন পূর্ণ করল তৃতীয় মোদি সরকার।যদিও বর্তমান ক্ষমতাসীন কেন্দ্রীয় সরকারকে মোদি সরকার আখ্যা…

5 hours ago

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

1 day ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

1 day ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago