আমাদের জাতীয় পশু কী , প্রশ্ন করা হলে সবাই একবাক্যে বলেন ‘ বাঘ ‘ । কিন্তু এই উত্তর হল অর্ধসত্য । ১৯৭২ সাল পর্যন্ত আমাদের জাতীয় পশু ছিল সিংহ । কিন্তু সিংহ যেহেতু আদিকাল থেকে ভারতের প্রাণী ছিল না , তাই ১৯৭২ সালের ১৮ নভেম্বর সিংহর বদলে রাজকীয় আভিজাত্য ও চেহারার জন্য বাংলার ‘ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ‘ জাতীয় পশুর মর্যাদা পায় । এরপর বাঘ সংরক্ষণের প্রকল্প শুরুর সময় ১৯৭৩ সালের এপ্রিলে ‘ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার’কে জাতীয় পশু হিসাবে ঘোষণা করা হয় । ২০১২ সালে একবার উত্তর ও পশ্চিম ভারতের লবি সিংহকে ফের জাতীয় পশুর মর্যাদায় আনার চেষ্টা করে ।
কিন্তু রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের আধিপত্য ভারতের আদিকাল থেকে রয়েছে বলে তার মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা যায়নি । এরপর আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও বাঘ সংরক্ষণে উদ্যোগ নেওয়া হয় । ২০১০ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয় , প্রতি বছর ২৯ জুলাই আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র দিবস হিসাবে পালন করা হবে । এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য , হাতি , গোরু ও মহিযও কিন্তু ভারতের আদি পশু । কিন্তু বাঘের সংখ্যা গত ৫ বছরে ৩৩ শতাংশ বাড়লেও আমাদের জাতীয় পশু রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যার বৃদ্ধির হার সে তুলনায় অনেকটাই কম । মাত্র ১৬ শতাংশ । ২০১৪ সালে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৭৬ টি । এখন তা বেড়ে হয়েছে ৮৮ টি ।
তবে এ প্রসঙ্গে অনেকেই বাঘের যথার্থ গণনা হয়েছে কিনা সেই প্রশ্ন তুলেছেন । তাদের যুক্তি হল , সুন্দরবনের ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ৬০ শতাংশ বাংলাদেশে । তাই সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার হামেশাই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যাতায়াত করে । সঠিক গণনা তাই সম্ভব নয় । ব্যাঘ্র বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী আরেক তথ্য দিয়েছেন । তিনি বলেছেন , সুন্দরবনে নরম মাটিতে বাঘের পায়ের ছাপ বদলে যায় । তাছাড়া পায়ের ছাপ সবসময় নির্ভুলভাবে লক্ষ্য করা যায় না । তাই এখন বাঘের যাতায়াতের পথে ক্যামেরা লাগানো হয় । প্রতিটি বাঘের ডোরাকাটা দাগ আলাদা হয় ।
তা দেখেই এদের শনাক্ত করার পদ্ধতি নিয়েছে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটেসটিক্যাল ইন্সটিটিউট । মধ্য ভারত ও মহারাষ্ট্রের শক্ত মাটিতে বাঘের পায়ের ছাপ কিন্তু অক্ষত থাকে । পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য বনপাল রবিকান্ত সিনহা এ প্রসঙ্গে বলেছেন , বাঘ গুণতে এবার ভারত , বাংলাদেশ , নেপাল ও ভুটানে যৌথভাবে ক্যামেরা লাগিয়ে ব্যাঘ্র সুমারির পদ্ধতিতে আধুনিকীকরণ করেছে । গবেষণা যাতে আরও নিখুঁত এবং নির্ভুল হয় তার জন্য বাঘের বিষ্ঠা সংগ্রহ করে তার ডিএনএ পরীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে বাঘ গণনার কাজে সাহায্য করছে দেরাদুনে ওয়াইল্ড লাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া ।
সেক্ষেত্রে দেরাদুনের ব্যাঘ্র বিশেষজ্ঞদের মত , একই বাঘ দু’দেশে দেখা অসম্ভব । কিন্তু বাস্তবে সমীক্ষা করা হয় । এক একটি ছোটো জায়গাকে কেন্দ্র করে । আর বাকি এলাকায় বাঘের সংখ্যা রাশিবিজ্ঞানের নিয়মে আন্দাজ করা হয় , যে তথ্যে ভুল থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি । ২০১৯ সালে বাঘ গণনায় সবচেয়ে বেশি বাঘ পাওয়া গিয়েছিল , মধ্যপ্রদেশে ৫২৬ টি । তারপর রয়েছে কর্ণাটক ৫২৪ টি । অথচ আগের গণনায় কর্ণাটক ছিল সবার ওপর । এখন কর্ণাটকের পরে আছে উত্তরাখণ্ডে ৪৪২ টি । মহারাষ্ট্রে ৩১২ টি , তামিলনাড়ুতে ২৬৪ টি , কেরল এবং অসমে ১৯০ টি , উত্তরপ্রদেশে ১৭৩ টি , রাজস্থানে ৬৯ টি , বিহারে ৩১ টি , অরুণাচলে ২৯ টি , ঝাড়খণ্ডে ৫ টি ।
আর বাংলার সুন্দরবনে ৮৮ টি । কিন্তু উত্তরবঙ্গে আগের বাঘ গণনায় যে ৩ টি বাঘের খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল , এবার তাদের আর উল্লেখ নেই । একই অবস্থা ছত্তিশগড়ে । আগে যেখানে ৪৬ টি বাঘ ছিল , এখন রয়েছে ১৯ টি । অন্ধ্রপ্রদেশে আগে ছিল ৬৮ টি , এখন রয়েছে ৪৮ টি । গোয়ায় রয়েছে মাত্র ৩ টি বাঘ । মিজোরামেও বাঘের সংখ্যা কমেছে । এই বাঘ কমে যাওয়ার পিছনে মূলত দু’টি কারণ রয়েছে বলে মত আলিপুর চিড়িয়াখানার মুখ্য অধিকর্তা আশিস কুমার সামন্তের । চোরাশিকার আর পিটিয়ে হত্যা এই দুটি বিষয়কেই বাঘের সুরক্ষা বিঘ্নের কারণ বলে মত তার । ২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের লালগড়ে এক রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে পিটিয়ে ও বল্লম দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয় ।
উত্তরপ্রদেশের পিলভিটেও গত বছর এক বাঘিনিকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছিল । তাই আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র দিবসের প্রশ্ন উঠেছে , বাঘের নিরাপত্তা নিয়ে । ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটি ( এনটিসিএ ) বা জাতীয় বাঘ সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে , ২০১৫ থেকে ২০১৮ – এই ৪ বছরে দেশে মোট ৪২৩ টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে । যার মধ্যে আছে ৭৩ টি চোরাশিকারের ঘটনা । এর বাইরে ৮৭ টি মৃত্যুকে সন্দেহজনক আখ্যা দেওয়া হয়েছে । সেগুলি চোরাশিকার কিনা , নিশ্চিত করে বলা যায়নি । এরমধ্যে সব থেকে কম চোরাশিকারের ঘটনা ঘটেছিল ২০১৫ সালে ১২ টি । সেবার একটিও সন্দেহজনক মৃত্যুর ঘটনা ছিল না ।
২০১৮ সালে ১৩ টি চোরাশিকারের ঘটনা ঘটলেও সন্দেহজনক মৃত্যুর সংখ্যা ৫১। ২০১৭ সালে কিন্তু ২৭ টি চোরাশিকারের ঘটনা ঘটেছে । কেন্দ্রীয় সরকারের অবশ্য দাবি , গত পাঁচ বছরে আরো বেশি বনাঞ্চল ঘেরা ও সুরক্ষার ব্যবস্থা হয়েছে । সরকারি হিসাবে ২০১৪ সালে যেখানে সুরক্ষিত বনাঞ্চল ছিল ৬৯২ টি , সেখানে ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৮৬০ টি ।
তবে বাঘ গণনা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছেন , অরুণাচলের প্রধান মুখ্য বনপাল এম . সূর্যপ্রকাশ । তিনি বলেছেন , বাঘ নিয়ে খুব কম এলাকায় যথার্থ সমীক্ষা হয়েছে । দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় আরো বাঘ আছে । সেইসব জায়গায় সমীক্ষার দলই যায়নি । ফলে সঠিক সংখ্যা কখনোই পাওয়া যাবে না । আশিসবাবু কিছুটা রসিকতার ঢঙেই বললেন , ‘ সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের অস্তিত্ব ঝাড়গ্রামে এমনকী হিমাচল প্রদেশের রুক্ষ মালভূমি ও পাহাড়ি এলাকায় পাওয়া গেলে সত্যিই সন্দেহ হয় । ‘
২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের প্রথম সাত মাসে প্রত্যক্ষ বিদেশি পুঁজি (ফরেন ডাইরেক্ট ইনথবর্ষের প্রথ বা এফডিআই) যা…
অনলাইন প্রতিনিধি :-দীর্ঘদিন ধরে টি,এস,এফ দাবি করে আসছে রোমান লিপি কে স্বীকৃতি দেওয়ার।বর্তমানে যে প্রশ্নপত্র…
অনলাইন প্রতিনিধি :-কেন্দ্রীয়শিক্ষা মন্ত্রকের সর্বশেষ রিপোর্ট এও ফুটে উঠলো ত্রিপুরার স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থার বে-আব্রু চেহারা।…
অনলাইন প্রতিনিধি :-প্রধানমন্ত্রীনরেন্দ্র মোদি সবকা সাথ সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস, সবকা প্রয়াসের স্লোগান দিয়েছেন। আর…
প্রতিবেশী বাংলাদেশে গত ছয়মাস ধরে চলতে থাকা অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে একেবারে নিঃশব্দে এগিয়ে…
অনলাইন প্রতিনিধি:-প্রতিশ্রুতি দিয়ে রক্ষা করছে না সরকার। জেআরবিটির মাধ্যমে গ্রুপ ডি পদে নিয়োগ নিয়ে টালবাহানা…