বাড়বে ভাড়া, সাথে দুর্ভোগও ট্রেনে রাজধানী দিল্লী ঘুরপথে।

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রান্তিক রাজ্যগুলির প্রতি নজর নেই ভারতীয় রেলের। উল্টো দিক থেকে রেল বোর্ড উত্তর পূর্বাঞ্চলের মধ্যে একমাত্র আসামকে কিছুটা গুরুত্ব দিয়ে চলছে।তাও আসামের বরাক উপত্যকার তিন জেলা সহ ডিমাহাসাও জেলার প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। অথচ ডিমাহাসাও এবং বরাক উপত্যকার তিন জেলা কাছাড়, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি জেলা মিলে প্রায় ৬০ লাখ মানুষের বসবাস রয়েছে। আসামের বাইরে ত্রিপুরা সহ মণিপুর এবং মিজোরাম রাজ্যের প্রতিও কার্যত বঞ্চনা করে চলেছে ভারতীয় রেল।এই তিন রাজ্য মিলিয়ে প্রায় ৮০ কোটি মানুষের বসাবস রয়েছে।সব মিলিয়ে আসামের বরাক উপত্যকা, ডিমাহাসাও জেলা সহ উল্লেখিত তিন রাজ্যে প্রায় দেড় কোটি মানুষের বসবাস রয়েছে। মূলত এসব মানুষের কথা মাথায় রেখেই আগরতলা- আনন্দ বিহারের মধ্যে রাজধানী এক্সপ্রেসের চলাচল শুরু হয়। সাপ্তাহিক এই রাজধানী এক্সপ্রেস ত্রি সপ্তাহিক করার দাবি দীর্ঘদিনের। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত পূর্বতন রেল রাষ্ট্রমন্ত্রী রাজেন গোঁহাই এই দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতিও দেন। তারপর থেকে অবশ্য ত্রিপুরার রাজধানী শহর আগরতলা দিয়ে বয়ে চলা হাওড়া, আসামের করিমগঞ্জ ও বদরপুর দিয়ে বয়ে চলা কুশিয়ারা, বরাক এবং দিল্লীর
যমুনা নদী দিয়ে বহু গ্যালন জল বয়ে গেছে।উল্লেখিত রাজেন গোঁহাই আর সাংসদই নেই। আগরতলার সঙ্গে রাজধানী এক্সপ্রেসের সংযোগ স্থাপনের পর কেটে গেছে প্রায় সাত বছর।২০১৭ সালের ২৮ অক্টোবর আগরতলায় রাজধানী এক্সপ্রেসের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। তখন রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। তারপর রাজ্যে বিজেপি- আইপিএফটি জোট সরকার ক্ষমতায় বসেছে। মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন বিপ্লব কুমার দেব। বর্তমানে রাজ্যে বিজেপি- আইপিএফটি জোট সরকার থাকলেও মুখ্যমন্ত্রীর বদল হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন অধ্যাপক ডা. মানিক সাহা।
অথচ রাজধানী এক্সপ্রেসের চলাচল বাড়েনি আগরতলায়। এখনও সপ্তাহে একদিন করেই আগরতলায় রাজধানী এক্সপ্রেসে চলাচল করে। ফলে ত্রিপুরা সহ আসামের বরাক উপত্যকায় তিন জেলা ও ডিমাহাসাও জেলা এবং মণিপুর, মিজোরামের মানুষ রেল পরিষেবার দিক থেকে বঞ্চিত হয়ে চলছেন। নিউ করিমগঞ্জ ও বদরপুর জংশন স্টেশন ব্যবহার করে মণিপুর ও মিজোরামের বহু মানুষ রাজধানী এক্সপ্রেস সহ অন্যান্য ট্রেনে ওঠা নামা করেন। যাই হোক, গত সাত বছরে আগরতলা রাজধানীর সঙ্গে তেজশের কোচ জুড়ে দেওয়া ছাড়া আর কিছু করা হয়নি। তাতে অবশ্য যাত্রীদের খুব বেশি লাভ হয়নি।এর মধ্যে আচমকা আগরতলা রাজধানী এক্সপ্রেস ঘুর পথে চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এই ব্যবস্থা নেওয়ার বঞ্চিত হবেন ত্রিপুরা সহ প্রায় চার রাজ্যের মানুষ।১৫ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত এক নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের তরফে। তার আগে ১৪ সেপ্টেম্বর রেল বোর্ডের তরফে এ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে সীমান্ত রেলকে। মোট কথায় রেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুসারে ঘুরপথে চলাচল করবে আগরতলা রাজধানী এক্সপ্রেস। এই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে আসন্ন ২০২৪ সালে ১৭ জানুয়ারী থেকে। গৃহীত সিদ্ধান্ত
মোতাবেক আগরতলা রাজধানী আর পশ্চিমবঙ্গের নিউ জলাই পাইগুড়ি স্টেশনের আর বিহারের কাটিহার জংশন, বারাউনি জংশন ও পাটলিপুত্র স্টেশন হয়ে চলাচল করবে না। তার বদলে চলাচল করবে পশ্চিমবঙ্গের নিউজলপাইগুরি স্টেশনের পর একই রাজ্যের মালদা টাউন, বিহারের ভাগলপুর, জামালপুর ও পাটনা জংশন স্টেশন হয়ে চলাচল করবে। ফলে আগরতলা থেকে ট্রেনটি সন্ধ্যা সাতটার বদলে বিকাল ৩-১০ মিনিটে ছাড়বে। তাতে সমস্যা বাড়বে সর্বস্তরের যাত্রীদের। তার উপর কোপ পড়বে ত্রিপুরা সহ উত্ত-পূর্বাঞ্চলের চার রাজ্যের যাত্রীদের উপর। তাদের অকারনে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হবে। কেন না ঘুরপথে চলাচলের ফলে আগরতলা রাজধানীর অতিরিক্ত প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরত্ব বাড়বে পুরো
পথ পাড়ি দিতে গিয়ে। এর জন্য অতিরিক্ত প্রায় চার ঘন্টা সময় ব্যয় হবে প্রায় কোনও কারণ ছাড়াই। ঘুরপথে চলাচলের জন্য এই অংশের যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া গোনার পাশাপাশি ভোগান্তি সইতে হবে। অথচ ত্রিপুরা সহ এই অংশের মানুষের তরফে ঘুরপথে রাজধানী এক্সপ্রেস চলাচলের দাবি করা হয়নি কখনওই। তা ঘুরপথে রাজধানী এক্সপ্রেস চালানো প্রয়োজন হলে আগরতলায় সপ্তাহে আরও অন্তত একটি রাজধানী এক্সপ্রেসের চলাচল শুরু করা যেতো। অন্যদিকে ত্রিপুরা সহ উত্তর- পূর্বাঞ্চলের উল্লিখিত অংশে সপ্তাহে মাত্র একজোড়া রাজধানী এক্সপ্রেস, চলাচল করে। আগরতলা আসামের ডিব্রুগর ও দেশের রাজধানী শহর নয়াদিল্লীর মোট তিনটি রাজধানী এক্সপ্রেস চলাচল করে। এগুলির মধ্যে একটি করে দৈনিক, সাপ্তাহিক, দ্বি- সাপ্তাহিক রাজধানী এক্সপ্রেস রয়েছে। সেই হিসাবে ডিব্ৰুগড়-নয়াদিল্লীর মধ্যে দৈনিক প্রায় দুই জোড়া করে রাজধানী এক্সপ্রেস চলাচল করছে। গতিপথ পরিবর্তন করে পশ্চিমবঙ্গের মালদা টাউন সহ বিহারের ভাগলপুর, জামালপুর, পাটনা জংশন হয়ে এর মধ্যে যে কোনও এক জোড়া ট্রেন চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতো। এই পথে না হেঁটে ভারতীয় রোল বোর্ড ও সীমান্ত রেল ত্রিপুরা সহ মিজোরামে, মণিপুর, আসামের ডিমাহাসও এবং বরাক উপত্যকার তিন জেলার মানুষের প্রতি নতুন করে বঞ্চনার উদ্যোগ নিয়েছে।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

19 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

19 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

3 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

3 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

3 days ago