ত্রিপুরার সাহিত্য চর্চায় নয়া ইতিহাস রচনা করেছে উড়ান: জয় গোস্বামী।।
বাতাসের মতিগতি

তেইশের নির্বাচনি হাওয়া বহিতে শুরু করিয়াছে রাজ্যের সর্বত্র। ইহা এখনো পর্যন্ত লিলুয়া বাতাসের মতন মৃদুমন্দে বহিতেছে বটে তবে অতিশীঘ্রই এলোপাতাড়ি গতি লইতে পারে বলিয়া আশঙ্কা করা হইতেছে। তীব্রতা লইয়া হাওয়া যে সহসাই পাগলা হইবে তাহার ইঙ্গিত বুঝা যাইতেছে সকল দলের অক্ষকেন্দ্র নয়াদিল্লীর তৎপরতায়। তথায় এক নিম্নচাপ নিশ্চয়ই ঘন হইতেছে। অন্যথায় নেতারা এত ঘন ঘন ছুটিয়া আসিতেন না। অনুমান করা হইতেছিল দেওয়ালির পরেই দলগুলি আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটের ঢাকে কাঠি নাড়াইয়া দিবে। কিন্তু তর কাহারও সহিতেছে না । শাসক দল বিজেপি ত্রিপুরায় তাহাদের দুর্গ রক্ষায় যেন অধিক সাবধানী। দুর্গোৎসবের আগে, মধ্যে, শেষে তাহাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের আনাগোনা যেন ভোটের হাওয়া বহিয়া আনিতেছে।

দলের নির্বাচনি কমিটি ইত্যাদি ঘোষণা হইয়া গিয়াছে অনেক আগেই। এইবার কেন্দ্রীয় নির্বাচন প্রভারি আসিলেন। দল ঘোষণা দিল, তাহারা জনজাগরণ র্যালি শুরু করিয়া দিয়াছে। অক্ষকেন্দ্রে কেবল শাসক দলের হেডকোয়ার্টারে নিম্নচাপ ঘনীভূত হইয়াছে এমন নহে। দীপাবলির তিন রাত্র আগেই আগরতলায় কেন্দ্রীয়ভাবে দলীয় সভা করিতেছেন রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। বলাই বাহুল্য, ক্ষমতা হারাইবার পর গত সাড়ে চার বৎসর একরকম গৃহেই বন্দি ছিল সিপিএম। এইবার ভোটের আগে ঘর হইতে বাহির হইতে শুরু করিয়াছে। তাহারা তাহাদের শক্তি প্রদর্শন করিবে। আস্তাবল ময়দানে তাহাদের শক্তি প্রদর্শন এই সময়ে এক কৌশলী বিষয় বৈ আর কিছুই নহে।

এই সভা হইতে দল তাহাদের সেই সকল কর্মী, সমর্থকদের বার্তা দিবে, পথে বাহির হইয়া আসিবার জন্য। আর সীতারাম ইয়েচুরির সভার দুইদিন আগে খবর আসিল এই সপ্তাহের শেষপ্রান্তে আগরতলায় আসিবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সভাও করিবেন। নিশ্চয়ই সেই সভাও হইবে আস্তাবল ময়দানেই। কারণ আজব আগরতলায় ইহাই সববৃহ ময়দান । দুইটি জনসভার পর কোন্ দলের সভায় বেশি জমায়েত হইয়াছে এই লইয়া যখন শহরের পথেঘাটে তর্ক, আড্ডা চলিবে তখন গ্রামে পাহাড়ে আগে মা কালীর উপ থাকিবে অন্য চিত্র। সমস্যা হইল, পাহাড়ের কোনও অক্ষকেন্দ্র দিল্লীতে নাই। তাহার সকলই পাহাড়ে। তাই পাহাড় কী করিতেছে বা করিবে কেবল হইয়া যাইবার পরেও জানিতে পারা যায়।

আইপিএফটির জীবনীশক্তি শুষিয়া লইয়া তিপ্ৰা মথা পাহাড়ে এই সময়ে পুষ্প-পল্লবে লাউ লতার মতন লকলকাইতেছে। তাহার কাছে কিনারে আর কাহারো গ্রহকালী, চামুণ্ডা, ছিল আনাগোনা তদৃশ নাই। শাসক জোটের দুই দলেরই পাহাড়ের বিধায়কেরা মথায় শামিল হইতেছে। শাসক জোটের হাতে বিধানসভার ২০ আসনের পাহাড়ে ছিল ১৮ আসন। সেইসব আসনের বর্তমান হাল কী তাহা জানা যাইত যদি আগামী মাসে ঘোষণামতন ভিলেজ কমিটির নির্বাচন হইত। কিন্তু নির্বাচন কমিশন আইনগত জটিলতার কারণে সেই নির্বাচন স্থগিত তিনি ঘোষণা করিয়া দিল।বলাই বাহুল্য, এই লইয়া পাহাড়ে মথা ক্ষোভ পুষিতেছে। বাস্তবে পাহাড়ে আইপিএফটির রাশ আলগা হইবার সঙ্গে সঙ্গে বিজেপির পায়ের তলার মাটিও সরিয়াছে।

সারা দেশে বিজেপি যে প্রকারে এনডিএ জোট গড়িয়া থাকে ত্রিপুরাতেও মথার সহিত জোট গড়িতে চাহিতেছে। কিন্তু দৃশ্যত এখনও পর্যন্ত তাহারা সফল হইতে পারে নাই। ফলে ভোটের দিন যত আগাইতেছে ততই চিন্তা বাড়িতেছে শাসক জোটের। কারণ পাহাড় বাদ দিয়া কেবল ৪০ আসনের সমতল দিয়া কাহারো পক্ষে ক্ষমতায় আসা কঠিনই নহে, প্রায় অসম্ভব মনে হইবে। সমতলে বিজেপিকে দুই বিরোধী সিপিএম, কংগ্রেসের সহিত সমান তালে লড়িতে হইবে। এই লড়াইয়ে বিজেপির সামনে সিপিএম যতটা না বাধা, তাহার চাইতে বড় পথের কাঁটা হইবে কংগ্রেস। সিপিএমের সহিত লড়াই যদি হয় সামনাসামনি, কংগ্রেসের লড়াই হইবে চোরাগোপ্তা।

২০১৮ নির্বাচনে কংগ্রেসের ৪০ শতাংশ ভোট যাহা বিজেপির দিকে আসিয়া গিয়াছিল সেই ভোটের একটা বড় অংশ সাড়ে চার বছর দেখিয়া কংগ্রেসে ফিরিয়া গিয়াছে। ২০২৩ নির্বাচন সম্মুখে রাখিয়া ত্রিপুরায় কংগ্রেসের আজ একটাই লড়াই— নিজের ঘর মজবুত করা। অর্থাৎ দলীয় নেতা কর্মীদের “ঘর ওয়াপসি” করাইয়া লওয়া। এই লড়াইয়ে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই রাজ্যের কোনও না কোনও প্রান্তে কংগ্রেসের যোগদান সভা হইতেছে। ইহার র অর্থ এই নয় যে বিজেপির যোগদান সভা হইতেছে না।

দুর্গোৎসবের আগে হইতেই রাজ্যে বিচ্ছিন্নভাবে রাজনৈতিক সংঘাতের খবর, আসিতে থাকে। উৎসবের মাঝামাঝি হইতে তীব্রতা পাইতেছে। পাহাড়ে মথা-বিজেপি সংঘর্ষ। সমতলে বিজেপি-সিপিএম বা বিজেপি-কংগ্রেস সংঘর্ষের খবর দিনদিন বাড়িতেছে। প্রাণ যাইবার খবরও আসে পত্রিকায়। আশঙ্কা করা হইতেছে, হন এবং তার শ নভেম্বর মাসের শুরু হইতেই এই ধরনের খবর অধিক পরিমাণে শুনিতে হইতে পারে। তাই এই সময়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখিতে সঠিক রেফারি রক্তবীজের প হইতে পারে পুলিশ। তাহাদের কাজে নিরপেক্ষতা থাকিলে ত্রিপুরা তুলনামূলক শান্ত থাকিবে আসন্ন ভোট পর্যায়ে।