বানের জল ও স্নায়ুর চাপ

 বানের জল ও স্নায়ুর চাপ
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

শিলচর সহ আসাম রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা বানভাসি । জল সপ্তাহকাল পক্ষকাল ধরিয়া ঠায় দাঁড়াইয়া রহিয়াছে , নয় জল নামিবার পর ক্ষতগুলি হাঁ করিয়া গিলিতে আসিতেছে । নেতারা হয় কপ্টারে বন্যাবিলাস করিয়া বেড়াইতেছেন , মৌখিক মলম ছড়াইতেছেন আবার কোথাও কোথাও এইসকল বিপর্যয়ে তাহাদের নজর দেওয়ারই ফুরসত নাই । পাহাড় ধসিয়া রেলপথ ভাসিয়া গিয়াছে , ধস নামিয়া পথ হারাইয়া গিয়াছে । কিন্তু এই চরম বিপর্যয়ের আসাম কিন্তু জাতীয় খবরে নাই , আসাম জাতীয় খবরে আসিয়াছে মহারাষ্ট্রের শিবসেনা দলের দলীয় কোন্দলের কারণে ।

আসাম এবং মহারাষ্ট্র দেশের দুইটি দূরগত প্রান্তে অবস্থিত রাজ্য । তথাপিও আসামের শাসনে যাহারা রহিয়াছেন তাহারা মহারাষ্ট্রের অতিথিগণের আপ্যায়নে ভীষণ ব্যস্ত , তাহারা বন্যার্ত মানুষের খোঁজ লইতে ফুরসত পান না , ইহা বারংবার বলা হইতেছে বরাক উপত্যকায় । আজ সারা দেশ যখন উদ্ধব ঠাকরের প্রতিপক্ষ একনাথ শিন্ডে এবং কুড়িজন বিদ্রোহী বিধায়কের রোমাঞ্চকর অভিযানে বিনিদ্র তখন আসামের মানুষ বন্যার জলে ভাসিয়াও গর্বিত হইবেন , তাহাতে আর অবাক হইবার কী আছে ।

আসামে বন্যা বা বানভাসি নেহরুর সময়েও ছিল , আজ মোদির সময়েও রহিয়াছে । এই লইয়া দেশ যেমন ভাবিত নহে তেমনি নিজেদের দূর্দশা লইয়াও আর বিচলিত হন না আসামের মানুষ । অগত্যা সকলেরই এক ভাবনা , আজ রাষ্ট্রীয় ভাবনা মহারাষ্ট্রের সরকার থাকিবে না পড়িবে । শিবসেনার মুখ্যমন্ত্রী থাকিবেন উদ্ধব ঠাকরে , নাকি ঠাকরে পদত্যাগ করিবেন ? শিন্ডে কী করিবেন , তিনি কবে মহারাষ্ট্রে অবতরণ করিবেন , মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফাড়নবিশ দিল্লী হইতে লাড্ডু লইয়া কখন মুম্বাই ফিরিতেছেন— এই সকলই এখন আমাদের রাষ্ট্রচিন্তা ।

ওই রাজ্যের রাজনৈতিক ক্যাচাল বাস্তবেই জটিল আকার লইয়াছে । ঠাকরে মন্ত্রিসভার নয়জন মন্ত্রী শিন্ডের সঙ্গে চলিয়া গিয়াছে । শিন্ডের দাবি , তাহার সঙ্গে শিবসেনার ৩৯ জন বিধায়ক রহিয়াছে । বিধানসভায় বিজেপির হাতে সংখ্যা রহিয়াছে ১০৬। এই দুইয়ে মিলিয়া মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন করা সম্ভব । কিন্তু বাহির হইতে যাহা দেখা যায় তাহার সকলই সত্য এই কথা বলা যায় না । শিন্ডে ভাবিয়াছিলেন তাহাদের এই বিদ্রোহে এবং আসামে তাহাদের জ্ঞাতবাসে ঠাকরে চাপে পড়িবেন এবং পদত্যাগ করিবেন ।

ঠাকরে পদত্যাগের ইচ্ছার কথাও জানাইয়াছিলেন , আবার বিদ্রোহীদের বাড়িঘরে ফিরিয়া আসিবার অনুরোধ করিয়াছিলেন । কিন্তু শিন্ডের দলের রাজ্যে ফেরা প্রায় অসম্ভব হইয়া যায় শিবসেনার ঠাকরে অনুগামীদের হুঁশিয়ারির মুখে । তাহাদের নিরাপত্তার জন্য মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টেও । কিন্তু ঘরের কাজিয়ার সমাধান আদালতে কাহাতক সম্ভব ? ঘর ভাঙ্গিবার উপক্রম হইলে তাহা আদালতের রায়ে ধরিয়া রাখা যায় এমন নজির কমই রহিয়াছে । জানা যায় , দ্বিতীয়বারও পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করিয়াছেন ঠাকরে তাঁর মন্ত্রিসভার বৈঠকে । কিন্তু তাহার মন্ত্রীরা তাহাকে নিরস্ত করিয়াছেন এবং ঠাকরে সরকারের সামনে সংখ্যালঘু হইয়া পড়িবার কোনও আশঙ্কা নাই জানাইয়া তাহাকে নিরস্ত করা হয় ।

1200_(15)_2

প্রসঙ্গত , শিন্ডে বনাম ঠাকরের কাজিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায় যখন বিধানসভায় ১৬ শিবসেনা বিধায়কের বিধায়ক পদ খারিজ করা হয় ক্রস ভোটিংয়ে বিজেপি প্রার্থীকে ভোট দিবার দায়ে । চিফ হুইপ শিল্ডের সমর্থনেই এই ক্রস ভোটিং হয় । সুপ্রিম কোর্টের মামলায় সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য আগামী ১১ জুলাইয়ের মধ্যে দুই পক্ষকে বিধায়ক পদ খারিজ লইয়া মতামত জানাইতে বলা হইয়াছে ।
বিজেপি এবং শিন্ডে অনুগামীরা অবশ্য আশাবাদী— এর আগেই হেস্তনেস্ত হইবে । শিন্ডে বলিয়াছেন সহসাই মুম্বাই অবতরণ করিবেন । আবার আদিত্য ঠাকরে বলিয়াছেন , ২০ জন বিদ্রোহী বিধায়কের সঙ্গে শিবসেনার যোগাযোগ রহিয়াছে । কথাবার্তা চলিতেছে । রাজনীতির এই স্নায়ুর চাপ এখন বানের জলের চাইতেও অধিক তীব্র ।

আসামের বান বছর বছর আসিয়া থাকে , কিন্তু মহারাষ্ট্রে এই প্রথমবার শিবসেনা বিজেপির হাত ছাড়িয়া কংগ্রেস , এনসিপির হাত ধরিয়াছে । আর এইবারেই প্রথম শিবসেনায় ভাঙ্গন ধরাইয়া সরকার গঠনের সম্ভাবনা দেখা দিয়াছে বিজেপির সামনে । অতএব বানভাসি মানুষের মৃত্যু বা ভোগান্তির চাইতে তখতে তাউসের আলাপন অধিক অধিক কাঙ্ক্ষিত হউক ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.