বামেদের কোষ্ঠকাঠিন্য!”

 বামেদের কোষ্ঠকাঠিন্য!”
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দেশে একটার পর একটা নির্বাচন যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো ঘুরেফিরে শক্তি সংহত করে ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করছে। কিন্তু বামেরা সেই যে গেল,আর তাদের ফেরার দেখা নেই।খাতা উল্টাচ্ছে না বামেদের।বরং দিন যত যাচ্ছে,পিচ্ছিল পথে লালেদের পদস্খলন ঘটেই চলেছে। আসলে রাজনীতি এক অদ্ভুত খেলা।গণতন্ত্রে রাজনৈতিক নেতারা জনতাকে মূর্খ, অশিক্ষিত,গরিব ভেবে নিজেদের ক্ষমতার প্রায়শই দাপট দেখান।যেমন ২০০৬ সালে বাংলায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে বামেরা ২৩৫ টি আসন জয়ের পর, বুদ্ধদেবের সগর্ব-ঘোষণা ছিল-আমরা ২৩৫, ওরা ৩০’। তারপর থেকে সেই যে বামেদের রক্তক্ষরণ শুরু হল, তার আর কমতি নেই। রাজনৈতিক দল ও নেতাদের অহংকারই তাদের আত্মঘাতী পথ তৈরি করে দেয়।সময়, পাত্র, পরিস্থিতি ভেদে এই ঘটনা ইতিহাসে নিরন্তর ঘটেই চলেছে।
এবার ১৮ তম লোকসভা নির্বাচনে মাত্র ৮ টি আসনে জয়ী হয়ে লোকসভায় বসতে যাচ্ছে বামেরা।গত লোকসভায় সিপিএম তামিলনাডুতে ২ টি আর কেরালায় ১ টি আসন জিতেছিল।এটাই ছিল গোটা দেশে তাদের পুঁজি।এবার ৩-এর বাইরে একমাত্র রাজস্থানে ১ টি আসন জিতেছে সিপিএম।যদিও দেশজুড়ে তাদের প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ৫২ জন। পশ্চিমবঙ্গে আর ত্রিপুরায় বামেদের শূন্য হাত।সিপিআই এবার নির্বাচনে ৩০ জন প্রার্থী দাঁড় করিয়েছিল।গতবারের মতোই তামিলনাডুর ২টি আসনে সিপিআই জয় পায়। অর্থাৎ সিপিআই আর সিপিএমের মিলিত ভাবে দেশে এমপি’র সংখ্যা ছয়। আর বাকি রইল সিপিআইএমএল (লিবারেশন)।এরা বিহারে ২ টি আসনে জয় পায়।এই হল গোটা দেশে বামপন্থীদের লোকসভায় সাফল্যের গ্রাফ, সর্বসাকুল্যে আট। সিপিএম, সিপিআই আর লিবারেশন ছাড়া বামপন্থী অন্যান্য দলগুলো যেমন অল ইন্ডিয়া ফরোয়ার্ড ব্লক,আরএসপি সহ বাদবাকিরা ধুয়ে মুছে সাফ। বামপন্থী দলগুলো এবার আশা করেছিল ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম শরিক হয়ে তারা নিজেদের শক্তি, আসন, ভোটের পরিমাণ সবই বাড়িয়ে নিতে পারবে।কিন্তু জোটে থেকে ৩ টি আসন বাড়াতে পারলেও গোটা দেশেই তাদের ভোটের হার নিম্নমুখী। অতীতের ঔদ্ধত্ব, অহংকার কাটিয়ে বামেরা যে এখনো নিজেদের স্বভাবসিদ্ধ সুবিধাবাদী রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি, কেরালার নির্বাচনে তাদের ভূমিকাই সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছে। ইন্ডিয়া জোটের শরিক হয়েও কেরালায় সর্বত্রই তারা জোট শরিক কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়েনি। লোকসভার নির্বাচনে ফল প্রকাশের পর নিজেদের স্বপ্নভঙ্গ হওয়া সত্ত্বেও সীতারাম ইয়েচুরিরা আবার সরকার গঠনের জন্য ইন্ডিয়া জোটের মঞ্চে বসে স্বমহিমায় অবতীর্ণ হন।
জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলে, কোন সময়ে জনগণ কর্তৃক ছুড়ে ফেলে দিলেও আবারও সেই দল মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে ঘুরে দাড়াতে পারে।বিহারে নীতীশ কুমারের দল কোনঠাসা হওয়ার পরেও এবার লোকসভার নির্বাচনে পুনরায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে।কিন্তু দেশে বামেরা আর ঘুরে দাঁড়ানোর পরিস্থিতিতে নিজেকে নিয়ে যেতে পারছে না।এর কারণ হল রাজনীতি একটি দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি।কিন্তু মুখে নীতি ও আদর্শের পরাকাষ্ঠার কথা বললেও বাস্তবে সহজ ও স্বল্পমেয়াদি কৌশলে ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্নে বুঁদ হয়ে আছে বামেরা। আর এই সুবিধাবাদি ধান্ধার কারণেই মানুষের কাছে আস্থার জায়গাটি এখনো তৈরি করতে পারছে না বামেরা।ত্রিপুরায় ২ দফায় ৩৫ বছর,পশ্চিমবঙ্গে এনকাগাড়ে ৩৪ বছর রাজ্যপাট চালিয়েও আজ দুই রাজ্যেই কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছে বামপন্থীরা।বৃদ্ধতন্ত্রকে অনেকটাই ঘরে পাঠিয়ে তারুণ্যের কাঁধে ভর করে বঙ্গে ভোটে নামলেও সেই ক্ষমতার লোভ-মোহ এবং জমি তৈরি না করেই ক্ষমতায় ফেরার জন্য শর্টকাট ফর্মুলাতে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে নিজেদের রক্তক্ষরণকেই দীর্ঘস্থায়ী করল বামেরা। মানুষকে পড়তে না পারা, মানুষকে বুঝতে না পারা, বাস্তবতার মাটিতে না হাঁটা এবং সর্বোপরি শুধুমাত্র নেতিবাচক স্লোগানের পরিবর্তে ইতিবাচক কল্যাণমূলক উন্নয়ন কর্মসূচির কথা জনগণের কাছে তুলে ধরতে না পারাটাই দলের বিপর্যয়কে নিশ্চিত – করেছে।আর সে কারণেই পারফরম্যান্সের নিরিখে সীতারাম ইয়েচুরিরা ভাবতেই পারেন ৫-এর জায়গায় বামেরা এবার লোকসভায় ৮ সংখ্যাকে স্পর্শ করেছে।কিন্তু এটাও ভুলে গেলে চলবে না ২০১১ সালে বঙ্গে, ২০১৮ সালে ত্রিপুরায় বামেরা রাজ্যপাট হারালেও তাদের পতনের দৌড় , জন সমর্থনহীনতার ধারাপাত সমানে চলেছে। এবারের লোকসভা ভোটেও সেটা সমানভাব কাজ করেছে।তাই দেশের সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বামেদের ভোটের হার যে ভাবে ক্রমান্বয়ে নিম্নমুখী হচ্ছে সেই বাস্তবতা মেনে তারা নিজেরা আদৌ আত্মানুসন্ধানে যাবেন কিনা সেটাই এখন দেখার।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.