বাৎসরিক খতিয়ান

 বাৎসরিক খতিয়ান
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

নতুন বৎসর আসিয়াছে। ইউরোপীয় বর্ষ আজ আমাদের রাষ্ট্র জীবন হইতে সমাজ, ব্যক্তি জীবনে সর্বত্রই গ্রাহ্য। ইংরেজরা এই দেশ শাসনকালে এই ইউরোপীয় নববর্ষ চালু করিয়া যায়।পরবর্তীতে দেশ ব্রিটিশ শাসন হইতে দেশের প্রশাসন যেহেতু তাহাদের তৈয়ার করা ধাঁচেই রহিয়া গেল তাই ক্যালেণ্ডারটিও ব্রিটিশেরই রহিল। ইহাতে সুবিধা হইল নানান রকম। প্রথমত, আমাদের শাসকেরা প্রায় সকলেই ইউরোপীয় শিক্ষা দীক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন, তাই তাহারা সেই ক্যালেণ্ডারেই অনুপ্রাণিত থাকিলেন। দেশীয় নববর্ষ বা ক্যালেণ্ডার এইক্ষেত্রে তাহাদের কাছে গ্রাহ্য ও হইল না বাধাও হইল না।

দ্বিতীয়ত ভারতের স্বাধীনতার দুইশত বৎসর আগেই ইউরোপ উন্নত বিশ্বের তকমা আঁটিয়াছিল, গোটা পৃথিবী তাহাদের মুখাপেক্ষী হইয়া পড়িয়াছিল। আমাদের সমাজ জুড়িয়া তৈরি হইয়া গিয়াছিল ইউরোপ মান্যতা, যাহা দিনে দিনে বাড়িয়া চলে। আমাদের শাসন এবং শাসক আমাদের যতটা ইউরোপমুখী করিয়াছে ততটা কোনও দিনেই দেশী, স্বদেশী করিতে চাহে নাই।আজকের দিনে ইংরেজি বর্ষের সূচনা ও সমাপ্তি লগ্নে এই সকল কথা কেবলই ধান ভানতে শীবের গীত হইয়া আমাদের স্বকর্ণে প্রথোত হয়। ২০২২-এর গমনে ২০২৩-এর আগমন ঘটিয়া যাওয়া ধারাপাতের নিয়ম মাত্র।

আবার একটি বৎসর চলিয়া যাওয়া যেমন রাষ্ট্র, ব্যষ্টি বা ব্যক্তির জীবনেও চলিয়া যাওয়া কিংবা বাড়িয়া চলা তাই এই সময়ে দাঁড়াইয়া সকলেরই ইচ্ছা জাগিবে একটুকু খানি পিছনে ফিরিয়া তাকাইতে বা হিসাব কষিতে। কিন্তু হিসাব মিলিতেছে না কারোরই। কেউ প্রকাশ করুন বা না করুন জীবন খাতার প্রতি পাতায় কেবল গরমিলই ধরা পড়িবে। সকলই শুভঙ্করের ফাঁকি। ফাঁকি রাষ্ট্রের বাৎসরিক বাজেটে, ব্যক্তির ডায়রি, নোট বইয়ের পাতায় পাতায়। এই সকল লইয়াই একেকটি জীবন গড়াইয়া, হামাগুড়ি দিয়া চলে। ত্রিপুরা রাজ্যের জীবনে আজ আরও এক সন্ধিক্ষণে আসিয়াছে। দ্বাদশ ত্রিপুরা বিধানসভার নির্বাচন দোরগোড়ায় আসিয়া গিয়াছে।

শাসক বিজেপি ডবল ইঞ্জিনের সরকারের চালক। অর্থাৎ প্রশাসনিকভাবে দিল্লী এবং রাজ্য সকলই তাহাদের হাতে। তথাপিও ২০২৩-এর নির্বাচনে বিজেপি আপাতদৃষ্টিতে এখনও পর্যন্ত বান্ধবহীন। আজও জোট সঙ্গী খুঁজিয়া পায় নাই। গত নির্বাচনে বিজেপির জোট সঙ্গী আইপিএফটি হীনবল হইতে হইতে এখন প্রায় নিশ্চিহ্ন। তাহাদের অধিকাংশ তিপ্ৰা মথায় লীন হইয়া গিয়াছে। মথা বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএমের সহিত নির্বাচনে সমদূরত্ব লইয়া চলিবার সিদ্ধান্ত লইয়াছে। আবার কংগ্রেস ও সিপিএম তাহাদের অতীতের সকল দূরত্ব ঘুচাইয়া বিজেপি উৎখাত ইস্যুতে অনেক কাছাকাছি কারও আসিয়া গিয়াছে।

বিজেপির বিরুদ্ধে তাহাদের সুরের সহিত অনেকটাই এক সুরে কথা বলিতেছে মথা। তিন শক্তিরই দাবি রাজ্যে গণতন্ত্র বিপন্ন।এই সকল রাজনৈতিক বক্তব্যের ফুলঝুড়ি লইয়া বাইশের বিদায় তেইশের পদার্পণ। এই সকল রাজনৈতিক লড়াই, বিতর্ক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সুস্বাস্থ্যকর। সকলেই লকলের বক্তব্য জনসমক্ষে রাখিবে আর জনগণেশ তাহার পছন্দের দল এবং প্রার্থীকে নির্বাচিত করিবে ভয়মুক্ত পরিবেশের অবাধ ভোটে। বর্ষের সন্ধিক্ষণে দাঁড়াইয়া নির্বাচন দপ্তর আশার বাণী শুনাইয়াছে। তাহার নির্বিঘ্ন ভোটে রেকর্ড ভোট প্রয়োগ নিশ্চিত করিতে মিশন মুডে কাজ করিতে চাহিতেছে।

বেশকিছু বিধি ব্যবস্থার কোথাও শুনাইয়াছে, যা পালন করিতে হইবে আগামী দুই মাস পুলিশ এবং সাধারণ প্রশাসনের সকল দায়িত্বশীল ব্যক্তি, সরকারী কর্মীকে।গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ইহা আজ আশার বাণী বটে। যদিও নির্বাচন কমিশন বা দপ্তর সাংবিধানিক অধিকার ও ক্ষমতাবলে রেফারির ভূমিকায় নিরপেক্ষভাবে ভোট পরিচালনা করিবে, এমনই ভাবা হইয়া থাকে কিন্তু এর ব্যতিক্রম কিন্তু কম নেই এই দেশে। ফলে নির্বাচন কমিশন সমালোচিত হয় সুপ্রিম কোর্টে।বিরোধীরা তাহাদের ভোট প্রচারে প্রথম হইতেই ভোট লুট, ডাকাতি ইত্যাদি বলিতেছে। এই এক ইস্যুতেই কিন্তু মথা, সিপিএম, কংগ্রেসের মধ্যে নৈকট্য।

নি:সন্দেহে তাহাদের এই যৌথ বয়ান নির্বাচন দপ্তর এবং কমিশনকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাইয়া দেয় ভোট ঘোষণার অনেক আগে হইতে। বৎসরের শেষদিনে নির্বাচন কমিশন তাহাদের মিশন মুড ঘোষণা করিতেছে, এই খবর যেমন সকলের জন্য সুখকর তেমনি ফেলিয়া আসা বৎসরের রাজনৈতিক সংঘাত, সংঘর্ষ, রক্তপাত, মৃত্যুর ঘটনা সকল শুভবুদ্ধির মানুষকে যন্ত্রণাবিদ্ধ করে। এই প্রসঙ্গে চড়িলামে সদ্যপ্রয়াত সহিদ মিয়ার কথা বলিতে হয়। ত্রিপুরার মানুষ বহু রক্তপাত দেখিয়াছে। খুন, হত্যার রাজনীতি আর দেখিতে রাজি নহে। বদলা বা প্রতিশোধের রাজনীতি আজ অচল । নতুন বৎসরে যেন সেই সকল অতীতের পুনরাবৃত্তি না ঘটে এই কামনা সকলেরই থাকিবে।

দরকার সকলের সহযোগিতারও। বিশেষ করিয়া পুলিশকে তাহার দায়িত্ব সম্পর্কে অধিক সচেতন হইতে হইবে। কারণ পুলিশ কোনও ভিন্ন গ্রহের নহে, তাহারাও এই সমাজেরই বাসিন্দা। ঘটনা চড়িলামেই হোক কিংবা আগরতলায়, নির্বাচন পূর্ব রাজনৈতিক কর্মসূচি ব্যবস্থাপনায় পুলিশের তরফে অব্যবস্থা আর ভুল সিদ্ধান্ত নজরে আসিতেছে। জনজাতি মোর্চা আর কংগ্রেসের মিছিলকে একই রাস্তায় মুখোমুখি করিয়া দিয়া সেই দিন আগরতলায় পুলিশ কি বুঝাইতে চাহিয়াছিল ? বিজেপি এবং কংগ্রেস নেতাগণের সদিচ্ছা আর শিষ্টাচারে সেই দিন বড় কোনও অঘটন এড়ানো গিয়াছে নয়তো আবারও কলঙ্কিত হইত আগরতলা, শুধুমাত্র পুলিশি অব্যবস্থার কারণে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.