বায়োলজিক্যাল হোন!!

 বায়োলজিক্যাল হোন!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অযোধ্যায় রাম জন্মভূমি বলিয়া কথিত ভূমিতে গত জানুয়ারী মাসে এক প্রবল প্রচারের সহিত ‘রাম কো জিসনে লায়া হ্যায়-‘ বলে বিকট ধ্বনি উচ্চারিত হল। এই ‘জিসনে লায়া’- সেই তিনি রামায়ণের অদ্যোপান্ত জানিতেন না,এমন ভাবার কারণ নাই।তিনিও জানিতেন, রাবণ পরম জ্ঞানী ছিলেন ও ঈশ্বরের ভক্ত ছিলেন।তথাপি অহঙ্কারে অন্ধ হইয়াছিলেন। জ্ঞান মানুষকে যেথায় সর্বংসহা করিয়া তুলে আবার অহং অন্ধকার তাহাকে করিয়া রাখে অন্ধ। চাটুকারেরা যখন তাহাকে হিন্দু জাতির প্রাণপুরুষ কহিলেন তিনি তাহা বিশ্বাস করিলেন।ক্রমান্বয়ে এই ধরনের বিশ্লেষণ সীমা ছাড়াইলো।তাহাকে বিষ্ণুর অবতার বলা হইলো।তিনি যে এই সকল বিশ্বাস করিতেছিলেন সেই আশঙ্কা কেউ কেউ মনে পোষণ করিতেন।একদিন সত্য সত্যই দেখা গেলো গঙ্গার জলে ভাসমান এক ভেলায় দাঁড়াইয়া নরেন্দ্র মোদি কহিলেন,তিনি বায়োলজিক্যাল নন।তাঁহার নাকি মনে হইতেছে, তিনি পরমাত্মা কর্তৃক প্রেরিত হইয়াছেন এক বিশেষ কর্ম সম্পাদন করিয়া (২০৪৭ সাল অবধি)যাইবার নিমিত্ত।সেই সময় দেশে নির্বাচন চলিতেছিল।এই দেশকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ বলা হইয়া থাকে।আর ভোটাধিকার ও ভোটদানকে বলা হইয়া থাকে পবিত্র কর্ম। এই কর্মকে এতোটাই উচ্চ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত রাখা হইয়াছে যে উপাসনালয়ের প্রার্থনার মতোই বিবেচিত হয়। যে গ্রন্থে মানুষের ভোটাধিকারের কথা বলা হইয়াছে,তাহার নাম সংবিধান।এই গ্রন্থকে উপাসনালয়গুলিতে রাখা আসমানি কিতারের মতনই শ্রদ্ধা আর সমীহের সঙ্গে উচ্চারণ করা হয়।তবে এই পবিত্র কর্মের যাহারা পুরোহিত তাহারাই কিন্তু দেবতা,গণদেবতা।তাহারাই হত্তাকত্তা।দেশে সাত দফায় ভোটদান শেষ হইলো।এইবার দেশবাসীর সামনে ভোটের ফলাফল আসিয়া গিয়াছে। এই ফল কেবল কিছু অঙ্ক বা সংখ্যা নহে।ইহাতেই রহিয়াছে ভগবানের ভাবনা,তার ইচ্ছা- নির্দেশ।তাহার বিরক্তি অপছন্দ সকল কিছু জুড়িয়া থাকে অঙ্কের অষ্টেপৃষ্ঠে।
এইবার পড়িয়া লইবার পালা।
যাহারা মনোযোগ দিয়া পড়িবেন এবং অনুধাবন ও পালন করিবেন তাহারা ভবিষ্যতে শাসক হিসাবে নিজেদের ফলাফল ভালো করিবেন।জনমত যাহা প্রতিফলিত হইতেছে তাহাতে একক সংখ্যা কাহারো নাই। বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র ভাই দামোদরদাস মোদিকেই আবার সরকার গড়িতে ডাকা হইবে তাহার ভোটপূর্ব জোটের সহযোগিতা লইয়া।ইহাই খালি চক্ষে দেখা যাইতেছে।অতএব ভোটের ফলাফলে হিজিবিজি অঙ্কের সহিত গণদেবতা যে আকাশবাণী দিয়া গিয়াছে তাহা অনুধাবনের প্রথম দায় মোদিরই।তিনি বারাণসি কেন্দ্রে তৃতীয়বার নির্বাচিত হইয়াছেন।প্রথমবার বারাণসির প্রার্থী হইয়া তিনি বলিয়াছিলেন,মা গঙ্গা তাহাকে ডাকিয়া পাঠাইয়াছেন,তিনি আসিয়াছেন- গঙ্গার জল কলুষমুক্ত করিবেন।এই নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেল তিনি তিনবারের মধ্যে সর্বনিম্ন দেড় লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জিতিলেন।যদিও প্রথম তিন রাউন্ড তাহাকে ছয় হাজারের মতন ব্যবধানে পিছাইয়া থাকিতে হইয়াছে।এই পর্বে পাঠে মনোযোগী হইতে হইলে মোদিজিকে প্রথমেই বায়োলজিক্যাল হইতে হইবে।অর্থাৎ পুনর্মোদি ভব।ইহাই জনগণেশের আকাশবাণী।একজন রক্ত মাংসের মানুষ হিসাবে সম্বিতে (পাত্র নহে) ফিরিয়া আসিলেই মোদিজি বুঝিতে পারিবেন, তাহার চারশো পারের স্লোগান কত অলীক ছিল।কতটা অনুচিত ছিল মোদি গ্যারান্টি। ইহা সত্য যে অন্ধভক্তরা ব্র্যান্ড মোদির ইমেজ ধ্বংসের সত্যকে মানিয়া লইতে পারিতেছেন না।কিছু করার নাই এই ন্যারেটিভ হইতে ছাড়া পাইতে কিছুদিন সময় লাগিবেই।তবে মোদিজিকে তৎক্ষণাৎ বুঝিতে হইবে, লক্ষ অন্ধভক্তের চাইতে চক্ষুস্মান হইলে দুই চার খানাও অনেক ভালো।জানি মোদিজি আজ ইহা নীরবেই স্বীকার করিবেন। কারণ তাহার গ্যারান্টি এই সময়ে আরও বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়িয়াছে।দেশের ভোটার মোদি গ্যারান্টি বিশ্বাস করিল না।কারণ তাহারা চাহিয়াছিল বিজেপির ইস্তাহার,দেখিতে পাইলো না। আজ সময় আসিয়াছে মোদিজির সম্মুখে,বিহারের পাল্টুরাম আর টিডিপির চন্দ্রবাবু নাইডুকে সঙ্গে লইয়া সরকার গড়িয়া দেখান আপনার গ্যারান্টি হেলাফেলা নহে।নীতীশ কুমারের পালটি সম্পর্কে সকলেই জ্ঞাত। আমরা ইহাও দেখিয়াছি, চন্দ্রবাবু নাইডু ভোটপূর্ব জোট শরিকদের সঙ্গে ভোট পরবর্তীতে কখনোই ঘর করেন নাই।আবার একদা চন্দ্রবাবুকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ অভীধাও দিয়াছিলেন মোদিজি।যাহাই হোক, রাজনীতিতে সকলই সম্ভব। কারণ পাটিগণিতে দুয়ে দুয়ে চার হইলেও রাজনীতি সবসময় হয় না।পাঁচ হইতে পারে, তিন বা শূন্যও হইতে পারে।
আজ মোদিজিকে এই সকল নেতাগণের মন ভজনা করিতে হইবে পাঁচ উয়ক্ত।তাহাদের মুখাপেক্ষী হইয়া প্রমাণ করিতে হইবে তিনি কখনোই ‘একনায়ক’ মেজাজের নেতা ছিলেন না। বরং জনগণের সেবায় তিনি তৃণ হইতে দীন হইতে পারেন।এই সকল বিষয় মোদিকে আজ অবশ্য প্রমাণ করিতে হইবে কারণ বিজেপির এই পরাজয়ের একক দায় কিন্তু মোদি-শাহ দুইজনের ওপর বর্তাইতেছে। পিতৃ আজ্ঞাই শুধু যে তাহারা অস্বীকার করিয়াছিলেন এমন নহে।পিতাকেই অস্বীকার করিয়াছিলেন মোদি-শাহ। আরএসএস চাহিয়াছিল,দশ বৎসরের গ্রামীণ ও নারী কল্যাণমূলক কাজের সহিত মোদির জনপ্রিয়তাকে যুক্ত করিয়া বিজেপির নির্বাচনি ইস্তাহার রচিত হইবে।কিন্তু মোদি আমলের বরাবরের মতন এইবারও তাহাদের পরামর্শ উপেক্ষিত হয় এব বিজেপির কোনও ইস্তাহারের বদলে মোদি কা গ্যারান্টি প্রকাশ কর হয়।
মতান্তরের কারণে এই নির্বাচন হইতে হাত তুলিয়া লয় সঙ্ঘ। একা ময়দান নিজেদের ইচ্ছা মতন চষিয়াছিলেন।ফলাফল যাহা হইলো তাহা সকলের সামনে।যদি ইহাকে জয় ধরা হয় তাহা হইলে সেই কৃতিত্ব মোদি-শাহের।আর পরাজয় বলা হইলে তাহার দায়ও মোদি-শাহের।এই দফায় মিলিজুলি সরকার বানাইয়া, তাহাকে পাঁচ বৎসর অতিক্রম করাইবার কৌশলও ভাবিবেন মোদি-শাহ।যদিও জানা যাইতেছে, মোদির মন্ত্রিসভায় নাকি শাহকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চাহিতেছেন না এনডিএর শরিকেরা।আবার নীতীশকে যেহেতু উপপ্রধানমন্ত্রীর চেয়ার উপঢৌকন দিয়া সরকারে আহ্বান জানাইতেছে ইন্ডিয়া জোট, তাই নীতীশ তো মোদি মন্ত্রিসভায় উপ-প্রধানমন্ত্রীই হইবেন,ধরিতে হয়।আর নাইডুকে মোদিজি অন্ধ্রের জন্য বিশেষ প্যাকেজের কথা বলিয়া ফেলিয়াছেন।যদিও ২০১৪ সালেও বলিয়াছিলেন। কিন্তু প্যাকেজ না পাইয়া ২০১৮ সালে চন্দ্রবাবু নাইডু মোদিকে পরিত্যাগ করিয়াছিলেন।তবুও আগাইতে হইবে, ইহাই জনগণেশের রায় ও মোদি-শাহের ভবিতব্য।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.