এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ভারতে বিরোধী দলীয় রাজনীতিতে, ইন্ডিয়া জোটের কেন্দ্রীয় চরিত্র কংগ্রেসকে নিয়ে শরিকদের মধ্যে টানাপোড়েন বাড়ছে। সর্বশেষ অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে নাটকীয়ভাবে ঘুরে দাঁড়ানো ১৩৯ বছরের পুরানো এই দলটি ভালো সাফল্য পেয়েও পরবর্তী সময়ে দল ও জোটের মধ্যে নিজের আধিপত্য ধরে রাখতে পারেনি। যদিও নির্বাচনে বিরোধীরা ক্ষমতা দখল করতে পারেনি। কিন্তু প্রায় নিশ্চিহ্ন হতে যাওয়া বিরোধীরা, বিশেষত কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট যেভাবে আবার লড়াইয়ের ময়দানে ফিরে এসে শাসক বিজেপির একক যাত্রাকে রুখে দিয়েছে বিরোধী রাজনীতিতে প্রাণ সঞ্চার করলেও, বিরোধী ঐক্যজোটের প্রশ্নে তা স্থায়ী প্রভাব রাখতে পারেনি। কারণটা হচ্ছে, লোকসভা নির্বাচনের পর গত ৫-৬ মাসে দেশে যতগুলি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার প্রায় সবগুলি বিরোধী জোটের প্রধান মুখ কংগ্রেস প্রত্যাশা অনুযায়ী সাফল্য পায়নি। শুধু তাই নয়, লোকসভা নির্বাচনের পর যতগুলি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন এবং উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তার সবগুলিতেই বিরোধীদের মধ্যে মনোমালিন্য প্রকাশ্যে এসেছে। যার প্রতিফলন দেখা গেছে, নির্বাচনি ফলে। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই সার্বিক অনৈক্য ও ব্যর্থতার জন্য সহযোগী দলগুলোর তরফে অভিযোগের আঙুল উঠেছে কংগ্রেসের দিকে। বলা হচ্ছে কংগ্রেস দেশের প্রাচীনতম দল হয়েও এখনো নিজের ওজন বুঝতে পারছে না। শুধু তাই এখনওনয়, আসন রফার সময় কংগ্রেস তার যোগ্যতা ও প্রাপ্যের তুলনায় অনেক ক্ষেত্রেই বেশি আসন চাইছে এবং ভরাডুবি হচ্ছে। নিজের অতিরিক্ত গুরুত্ব বাড়াতে গিয়ে কংগ্রেস দলের এই অবাস্তবোচিত কাজকর্মের কারণেই বিজেপি দেশজুড়ে এতটা – বাড়বাড়ন্ত বলে মনে করছে ইন্ডিয়া জোটের অপরাপের শরিকরা। প্রশ্ন হলো, হঠাৎ করে কেন ইন্ডিয়া জোটে এই অশান্তি এবং কলহ? বিরোধী দলগুলোর অভিমত হচ্ছে, এবারের লোকসভার নির্বাচনে কংগ্রেসের উল্লেখযোগ্য সাফল্যই তাদের মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে এবং আত্মগরিমা বাড়িয়ে দিয়েছে। যার সবচেয় প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হলো ‘হরিয়ানা’ বিধানসভা নির্বাচনে জেতা ম্যাচ হেরে যাওয়ার ঘটনা। অর্থাৎ বিরোধী জোটের বাদবাকি দলগুলো যে বিষয়টি বলতে চাইছে যে, যে সব রাজ্যে বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেস, সেখানেই বিজেপির স্কোরিং রেট বেশি। আর যেখানে বিজেপিকে লড়াই করতে হচ্ছে অন্যান্য বিরোধী শরিকদের সাথে, সেখানেই বিজেপির ত্রাহিমাম দশা। অর্থাৎ শতবর্ষ প্রাচীন কংগ্রেস দলটির ধার এবং ভার দুটোই আর আগের মতো নেই। বরং হাওয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করে কংগ্রেস এখনও নিজেকে অমিত বিক্রমশালী ভাবছে। ইন্ডিয়া জোটের ভেতরে কংগ্রেস বনাম জোট শরিকদের এই লড়াই থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট, সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে কংগ্রেসের বিপর্যয়ে বা খারাপ ফলের কারণে ইন্ডিয়া জোটের অন্যান্য শরিকরাই সবচেয়ে খুশী হয়েছে। এর কারণটাও বেশ পরিষ্কার। এখন থেকে প্রতিটি নির্বাচনেই আসন ভাগাভাগি বা দর কষাকষিতে কংগ্রেসকে নিম্ন অ পা বাগে পাওয়া যাবে এবং জোটের নেতৃত্বের প্রশ্নে কংগ্রেসকে আর শরিকরা মানতে নারাজ সেই বার্তাও ইতিমধ্যে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আম আদমি পার্টির সাথে কংগ্রেসের সম্পর্ক অনেক আগে থেকেই তলানিতে। মমতার তৃণমূলের সাথেও সম্পর্কে রসায়ন মিলছে না। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে বোঝাপড়া না হওয়ায় ফলে উপনির্বাচনে ৯ আসনে কংগ্রেস অসহযোগিতা করেছে বলে অভিযোগ। আবার মহারাষ্ট্রেও বিধানসভা নির্বাচনের সময় মহাবিকাশ আঘাড়ির জোটের শরিকদের বোঝাপড়ার সময় স্থানীয় কংগ্রেস অনেক বেশি নমনীয় হলেও, দিল্লী কংগ্রেস নেতৃত্বের অনমনীয়তার কারণে জোটের ভেতরেই ফাটল কাজ করেছে। অর্থাৎ বিজেপি- বিরোধী শিবিরে কংগ্রেসের সঙ্গে অন্য শরিকদলগুলোর সম্পর্ক যথেষ্ট তলানিতে এসে ঠেকেছে। আগামী বছর বিহার ও দিল্লীর ভোট। বিহারে কংগ্রেসের দীর্ঘদিনের মিত্র লালু’র সাথেও ইদানিং কংগ্রেসের মানসিক দূরত্ব বেড়েছে। সুতরাং এই সার্বিক ঘটনাক্রম থেকে একটা বিষয় বোঝা যাচ্ছে, বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেসের সীমিত শক্তির কারণেই সহযোগী দলগুলো আজ কংগ্রেসের আধিপত্যবাদের রাজনীতি মানতে চাইছে না। অন্যদিকে হাইকমান্ড সর্বস্ব কংগ্রেস, বাস্তব পরিস্থিতির নিরীখে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিবর্তে, রাজ্য বা প্রদেশ ইউনিটের সিদ্ধান্তে না হেঁটে দিল্লী থেকে চাপানো অবাস্তবোচিত পদক্ষেপ হাঁটছেন বলেই একদিকে দল যেমন জমি হারাচ্ছে। তেমন বিরোধী জোটেও ক্রমেই অসহযোগিতা প্রবল হচ্ছে। এই কঠিন সংকটের দাঁড়িয়ে দুর্বল কংগ্রেস, রাজ্যে রাজ্য সংগঠন নিয়ে সক্রিয় হতে চাইলেও তাদেরকে সবার আগে মাথায় রাখতে হবে। জাতীয় রাজনীতিতে এই মুহুর্তে পর্যন্ত বিরোধী জোটের নেতৃত্বে কংগ্রেসের বিকল্প যেমন নেই, তেমনি রাজ্য রাজনীতির প্রশ্নেরও নিজেদের প্রকৃত শক্তি ও ক্ষমতা উপলব্ধি করেই নির্বাচনে বিবরোধী ঐক্যজোট গড়ে তুলতে হবে। হাইকমান্ড দিয়ে রাজ্যে নির্বাচন পরিচালনা করা যায় না। এই বাস্তবতা না উপলব্ধি করা পর্যন্ত কোন পরিস্থতিই বিকল্পের প্রশ্নে কংগ্রেসকে ঘুরে দাঁড়ানো- রসদ দিতে পারবে না।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

১০০ ও ২০০ টাকার নোট নিয়ে নয়া নির্দেশ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-১০০ এবং ২০০ টাকার নোটের বিষয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বড়সড় সিদ্ধান্ত।সোমবার জারি করা এক…

7 hours ago

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আগুন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-আচমকাই আগুন লাগে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে । সোমবার সন্ধ্যায় আগুন…

13 hours ago

সিন্ধু তীরের জলযুদ্ধ!!

পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হানার একদিন পরে বৃহস্পতিবার ভারতের জলসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব দেবশ্রী মুখার্জি পাকিস্তানের জলসম্পদ মন্ত্রণালয়ের…

1 day ago

বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর অপরাধে নিষিদ্ধ করা হল ১৬ টি ইউটিউব চ্যানেল!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-পহেলগাঁও হামলার পর থেকে কেন্দ্রীয় সরকার অ্যাকশন মোড অন করেছে । সোমবার কেন্দ্রীয়…

1 day ago

পুনরুজ্জীবনের স্বপ্ন অপূর্ণই জুটমিল এখন ভূতুড়ে বাড়ি!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যবাসীর যে স্বপ্ন নিয়ে আশির দশকে গড়ে উঠেছিল রাজ্যের বৃহৎ -মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান…

1 day ago

কাঞ্চনপুরে ভুট্টার রেকর্ড উৎপাদন, বাজারে বিক্রি নেই হতাশায় কৃষক!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-খরিফ মৌসুমে কাঞ্চনপুর মহকুমার বিভিন্ন কৃষি অঞ্চল জুড়ে ভুট্টা উৎপাদন অতীতের সব রেকর্ড…

1 day ago