বিকল্প নীতি
বিজেপি বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে সম্প্রতি দেশ জুড়ে ভারত জোড়ো যাএা সম্পন্ন করছেন রাহুলের গান্ধী। কিন্তু রাহুলের এই ভারত জোড়ো যাত্রার পরে কংগ্রেসের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছিল। প্রশ্নটা ছিল, শুধু কি নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সমালোচনা করেই বিজেপিকে পরাজিত করা সম্ভব হবে? বিকল্প নীতি কোথায়? এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই ছত্তিশগড়ের রায়পুরে অনুষ্ঠিত হলো কংগ্রেসের প্লেনারি অধিবেশন। সেই অধিবেশনেই কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব বিকল্প নীতির সন্ধান দিলেন। প্লেনারি অধিবেশনে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব ধর্মনিরপেক্ষ মহাজোটের পক্ষে সওয়াল করেছেন। আরও স্পষ্ট করে বললে অ-বিজেপি সব দলকে একই ছাতার নীচে এনে একজোট হওয়ার কথা বলেছেন। কংগ্রেসের এই প্রস্তাবকেই বিজেপির বিরুদ্ধে বিকল্প নীতি বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, রাহুলের ভারত জোড়ো যাত্রা কংগ্রেসের সঙ্গে মানুষের কথাবার্তার জনসংযোগ কর্মসূচির ঐতিহ্য ফিরিয়ে এনেছে। একতাই পরাজিত করতে পারবে বিজেপির মতো স্বৈরতন্ত্রী দলকে। পাশাপাশি তৃতীয় ফ্রন্ট করার প্রয়াসকে সরাসরি নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেসের মতে, তৃতীয় ফ্রন্ট গঠন করার প্রয়াস মানেই হলো বিজেপিকে সহায়তা করা। প্লেনারি অধিবেশনে কংগ্রেস ঘুরিয়ে আঞ্চলিক দলগুলিকেই কড়া বার্তা দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে, বিজেপি বিরোধিতার পাশাপাশি আঞ্চলিক দলগুলি কংগ্রেসের বিরোধিতাকেও তাদের রাজনৈতিক কৌশল হিসাবে বেছে নিয়েছে। এতে আখেরে লাভ হচ্ছে বিজেপির। শুধু তাই নয়, আঞ্চলিক দলগুলির এই প্রয়াসও যথেষ্ট বিপজ্জনক বলে মনে করে কংগ্রেস। প্লেনারি অধিবেশনের দ্বিতীয়দিনে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক প্রস্তাবও নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম দুটি প্রস্তাব হলো, ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তিগুলিকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসা। দ্বিতীয়ত, ২০২৪ লোকসভা ভোটের লক্ষ্যে একটি ভিশন ডকুমেন্ট প্রস্তুত করা।এই দুটি সিদ্ধান্ত থেকেই স্পষ্ট আগামী ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে কংগ্রেস অনেক আগে থেকেই ঘর গুছিয়ে নিতে চাইছে। শুধু তাই নয়, একই সাথে আঞ্চলিক দলগুলিকেও বার্তা দিয়ে দিয়েছে, বিজেপি বিরোধী জোটের স্টিয়ারিং কংগ্রেসের হাতেই রাখার। মোদ্দা কথা, কংগ্রেসের নেতৃত্বকে মেনেই বিজেপি বিরোধী জোটে শামিল হতে হবে। যার সহজ অর্থ হলো, কংগ্রেসের রাহুল গান্ধীকেই মোদির বিরুদ্ধে প্রধান মুখ অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে মেনে নিতে হবে। সরাসরি না হলেও ঘুরিয়ে এই বার্তাই দেওয়া হয়েছে।
এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন হলো, মোদির বিরুদ্ধে কংগ্রেসের এই বিকল্প নীতির বার্তা কতটা গ্রহণযোগ্য হবে? রাহুল গান্ধীকে নেতা মেনে নিতে তামাম বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলি একসাথে একজোট হয়ে মোদিবিরোধী মহাজোটে শামিল হবে কিনা? অতীত ইতিহাস বলছে, এর আগে যতবার এমন প্রয়াস নেওয়া হয়েছিলো কোনওবারই তা ফলপ্রসূ হয়নি। বিরোধী জোটে প্রধানমন্ত্রীর মুখ কে?এই প্রশ্নেই বার বার মুখ থুবড়ে পড়েছে যাবতীয় প্রয়াস। এবারও এমন প্রয়াস সফল হবে, তা এখনই গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায় না। তবে রাজনীতিতে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়। আঞ্চলিক দলগুলির পক্ষে সব থেকে বড় বাধা হচ্ছে রাজ্যে রাজ্যে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চ্যালেঞ্জ। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে কংগ্রেসের মহাজোটে শামিল হওয়ার প্রয়াস এবার সফল হয় কিনা সেটাই এখন দেখার।