বিকশিত ভারত!!

 বিকশিত ভারত!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

লেখাপড়া করে যেই, গাড়ি ঘোড়া চড়ে সেই, লেখা পড়া যেই জানে, সব লোকে তারে মানে” উনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম পণ্ডিত এবং কবি মদনমোহন তর্কালঙ্কারের লেখা এই বিখ্যাত ছড়াটি ছোটবেলায় পড়েননি,এ রকম মানুষ সচরাচর একজনকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না।কিন্তু ছোটবেলার পাঠ্যবইতে পড়া এই ছড়াটি,আমাদের বর্তমান ভারতে বাস্তব জীবনে এখন যে আর কোন সম্পর্ক রাখে না তা দেশের আর্থ সামাজিক পরিস্থিতির দিকে একটু খেয়াল করলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। কারণ বর্তমানে দেশে শিক্ষিত হলেই চাকরির সুযোগ আসবে,তেমন নিশ্চয়তার কথা বাস্তব অভিজ্ঞতার নিরিখে কেউ বলছে না।
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ও আর্থিক নীতি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকার কারণেই দেশে বেকারত্ব বাড়ছে।যার পরিণামে হতাশায় ভুগছেন দেশের যুবসমাজ।লোকসভার বিরোধী দলনেতা দেশের যুবসমাজের কর্মহীনতা ও বেকারত্ব নিয়ে এ রকমই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলেছেন কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন সরকারের দিকে।গত ক’বছর ধরেই আইআইটি থেকে স্নাতক হওয়া পড়ুয়াদের বেতনের পরিমাণ কমে গেছে। আইআইটির মতো দেশের উচ্চমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা পড়ুয়াদেরই চাকরি জুটছে না।চাকরি যদিওবা মেলে, তখন তাদের বেতনের পরিমাণ আগের থেকে অনেক কম। একটি সংস্থার এই পরিসংখ্যান রিপোর্ট তুলে ধরেই শিক্ষা ও চাকরি নিয়ে কেন্দ্রকে তোপ দেগেছেন বিরোধী নেতা। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সালে আইআইটি ক্যাম্পাস থেকে চাকরি পাননি ১৯ শতাংশ পড়ুয়া।এ বছর এই সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। অর্থাৎ ৩৮ শতাংশে পৌঁছেছে। দেশের সবথেকে নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যখন এই হাল, তাহলে দেশের অন্যদের অবস্থাটা কী?আসলে সরকারী,তথ্য যতই দেশের বেকারত্বের হার ৩.২ শতাংশ বলে দাবি করুক না কেন, দেশের বাস্তব পরিস্থিতি যথেষ্ট করুণ।এই মুহূর্তে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার কমবেশি ৭ শতাংশ।আগামী এক দশকে এই হারেই বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু বাস্তবতা বলছে এই হারে বৃদ্ধি হলেও দেশে বেকারত্ব মেটানো সম্ভব হবে না।দেশের যে বিশাল জনসংখ্যা এবং উচ্চশিক্ষার হার তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চাকরির চাহিদা মেটাতে হলে প্রতি বছর অন্তত সোয়া কোটি নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি প্রয়োজন।কিন্তু বর্তমান হারে আর্থিক বৃদ্ধি হলে চাকরি সুযোগ চাহিদার এক চতুর্থাংশে নেমে যাবে। আরও একটি বড় সমস্যা হল চাকরির মান।ভারতে শিক্ষিত যুব সমাজের জন্য ভালো মানের চাকরির সুযোগ যেমন হচ্ছে না,তেমনি কাজের ধরন অনুযায়ী বেতনও মিলছে না। এর পরিণামেই যুব সমাজের মধ্যে বাড়ছে হতাশা। বাবা-মায়েরা লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে দেশের নামীদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছেলেমেয়েদের পড়াচ্ছেন। পড়াশোনার জন্য চড়া সুদে ঋণ নিতে হচ্ছে পরিবারকে। তার পরেও পাস করে চাকরি না পাওয়া কিংবা একেবারেই নামমাত্র বেতনে চাকরি পাওয়া ছেলে মেয়েদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা আরও দূর্বিষহ হয়ে উঠেছে। একদিকে দেশে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং পাশাপাশি তাদের কর্মহীনতা, বেকারত্ব, নাম মাত্র অঙ্কে চাকরির বেতন স্থির করার এই ঘটনাপ্রবাহ বুঝিয়ে দিচ্ছে নতুনভারত বা বিকশিত ভারতের স্লোগানের পেছনে থাকা দেশের আসল ছবিটি কী।বুধবার বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী এই উদ্বেগজনক চিত্রটাই দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে চেয়েছেন।দেশে লোকসভা নির্বাচনের আগেও ঠিক একই কথা মূল্যবৃদ্ধি আর বেকারত্ব নিয়ে সরব হয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। এবার লোকসভা ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে শাসক যখন আবারও হিন্দুত্ববাদের স্লোগানে আসরে নেমেছে, তখন একইভাবে লোকসভায় দাঁড়িয়ে ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, কর্মসংস্থানহীনতা নিয়ে তিনি যতটা সুর চড়িয়েছেন,ততটাই তাকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।বিরোধী নেতাকে হিন্দু বিরোধী তকমা দেওয়ারও চেষ্টা হয়েছে।এবার দেশের শিক্ষিত-উচ্চশিক্ষিত বেকার কর্মহীন যুব সমাজের বিপন্ন ভবিষ্যৎ নিয়ে আবারও সরব হয়ে বিরোধী নেতা সরকারের সামনে প্রশ্ন রেখেছেন পরিশ্রমী প্রতিশ্রুতিবান যুব সমাজকে এই অবস্থা থেকে টেনে তুলতে সরকারের আদৌ কোন পরিকল্পনা আছে কি? কিন্তু সেই প্রশ্নের উত্তরে মেলেনি।একজন মেধাসম্পন্ন উচ্চশিক্ষিত তরুণ পড়ালেখা শেষে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি করবেন এটাই স্বাভাবিক।কিছু দেশে কাজ না পেয়ে অনেক শিক্ষার্থী বিদেশে চলে যাচ্ছেন।ফলে দেশ মেধাশূন্য হচ্ছে।আর যারা দেশে পড়ে থাকছেন, কর্মহীনতার কারণে তারা ডুবছেন হতাশায়।কিন্তু বেকারের এই নীরব যন্ত্রণা কেউ অনুভব করতে চায় না। কেউ বুঝতে চায় না তাদের অনুভূতি।শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন, “বেকারত্বের চাদরে মোড়ানো মুখগুলো বাশক্তিহীন। কোথাও মেলে না মনোবল। চাহনিতে পরিহাস সবশেষ এই অন্ধকারে মা একমাত্র আশ্বাস।”কিন্তু ধর্ম আর রাজনীতির কচকচানিতে মশগুল সরকার এই বিপর্যয় থেকে কীভাবে প্রজন্মকে দূরে রাখবে সেটাই এই মুহূর্তে বড় জিজ্ঞাসা দেশবাসীর।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.