বিজেপিকে টেক্কা দিতে মাঠে সিপিএম – মথা।

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :- ধনপুর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের প্রচার ক্রমশ জমজমাট হয়ে উঠছে। নির্বাচন ঘোষণার প্রাকলগ্ন থেকে এই কেন্দ্রের প্রচারের রাশ শাসকদলের হাতে থাকলেও সেই প্রচারের রাশে থাবা বসাতে চলছে বিরোধী দল সিপিএম এবং তিপ্রা মথা দল।নির্বাচনি প্রচারে আজ ধনপুরের আনন্দপুরে তিপ্ৰা মথা দল এমডিসি ডলি রিয়াংয়ের নেতৃত্বে প্রচারে বের হয়েছে। এর ফলে ধনপুর বিধানসভা কেন্দ্রে উপজাতি ভোটাররা কোনদিকে ঝুঁকবে তা নিয়ে দোটানায় শাসকদল। ধনপুর কেন্দ্রে শাসকদলের প্রচারের রাশ মুখ্যত রয়েছে কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক ও কৃষিমন্ত্রী রতনলাল নাথের উপর। এই দু’জন প্রতিদিন এই বিধানসভা কেন্দ্রের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছুটে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া, বিকাশ দেববর্মা সহ বিধায়ক সুশান্ত দেব, অন্তরা সরকার যেমন রয়েছেন তেমনি দলের প্রথম সারির কার্যকর্তারা প্রতিদিন ধনপুরের নানা প্রান্তে ছুটে যাচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা দলের প্রদেশ সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য,প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মণ জনসংযোগ, বাড়ি বাড়ি প্রচার করে গেছেন। আগামীকাল এই বিধানসভা কেন্দ্রের নিদয়াতে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সাংসদ বিপ্লব দেবকে দিয়ে বড় ধরনের নির্বাচনি জনসমাবেশ করতে যাচ্ছে শাসক দল।২ সেপ্টেম্বর কাঠালিয়াতে আয়োজিত হবে নির্বাচনি জনসমাবেশ।তাতে বক্তব্য রাখবেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক। ধনপুর বিধানসভা সিপিএম দলের দুর্জয় ঘাঁটি।সমর চৌধুরী থেকে মানিক সরকার – দীর্ঘ পাঁচ দশক এই দু’জন ধনপুর থেকে জয়ী হয়েছেন। দু’জনেই রাজ্য মন্ত্রিসভার প্রতিনিধি ছিলেন। মানিক সরকার এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ে চার বার মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন ছিলেন। ২০২৩ সালের নির্বাচনে মানিক সরকার প্রার্থী হননি।দলের যুব নেতা কৌশিক চন্দকে প্রার্থী করে সিপিএম। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী হয়েও প্রতিমা ভৌমিক ধনপুর বিধানসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন। ধনপুরে পাঁচ দশকের রাজনীতির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জয়লাভ করে বিজেপি। সাংবিধানিক কারণে ধনপুর কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েও শপথগ্রহণ না করেই পদত্যাগ করতে হয় প্রতিমা ভৌমিককে। ২০২৩ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েও পদত্যাগ করায় ধনপুরে অকাল উপনির্বাচন হতে যাচ্ছে। প্রার্থী হয়েছেন বিন্দু দেবনাথ। দলীয় প্রার্থী বিন্দু দেবনাথকে জয়ী করার দায়িত্ব বর্তায় প্রতিমা ভৌমিকের উপর।এই কেন্দ্রে প্রচারের রাশ নিজ হাতে তুলে নিয়ে প্রতিদিন চষে বেড়াচ্ছেন ধনপুরের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত।সহযোগী হিসাবে রয়েছেন কৃষিমন্ত্রী রতনলাল নাথ।ধনপুরে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আগামীকাল নিদয়াতে উপনির্বাচনের প্রথম নির্বাচনি সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন। এই সভায় মন্ত্রী রতনলাল নাথ, প্রতিমা ভৌমিক সহ দলের বিধায়ক, কার্যকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।এদিকে উপজাতি জনপদে আজ তিপ্ৰা মথা দল প্রচারে বের হয়েছে।শাসক দলের বিরুদ্ধেই তাদের যাবতীয় ক্ষোভ। তাদের সঙ্গে শাসকদল বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বলে অভিযোগ করে শাসক দলের বিরুদ্ধে ভোট দেবার আহ্বান জানাচ্ছেন।
এদিকে ধনপুর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বিরোধী দল সিপিএম-ও। একদা তাদের দুর্জয় ঘাঁটি, নিরাপদ রাজনৈতিক কেন্দ্র ধনপুর গত নির্বাচনে তাদের হাতছাড়া হয়।যে ধনপুর রাজ্যের চার বারের মুখ্যমন্ত্রী উপহার দিয়েছে, ধনপুরের উন্নয়ন নিয়ে যে সরকার সব সময় বড় মুখ করে কথা বলত সেই কেন্দ্রে ২০২৩ সালের নির্বাচনে সিপিএম দল পরাজিত হয়। এই বিধানসভা কেন্দ্রে প্রথমবারের মতো সিপিএম পরাজয়বরণ করলেও এর কারণ হিসাবে নতুন দল তিপ্রা মথার আত্মপ্রকাশকে দায়ী করেছে। তার পরও কেন ধনপুরে এই অকাল উপনির্বাচন – তার প্রসঙ্গ টেনে বিজেপি দলের অন্তর্কোন্দলকে সামনে নিয়ে আসছে। এই দলের যিনি ২০২৩ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন তার স্বপ্ন ছিল মুখ্যমন্ত্রী হবার। কিন্তু সেই বাসনা পূরণ না হবার ফলে তিনি বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ধনপুরের মানুষের সঙ্গে একপ্রকার প্রতারণা করেছে শাসকদল বিজেপি – এই অভিযোগ উত্থাপন করে দলের প্রচারে ধনপুরের দুরবস্থার চিত্র তুলে আনছে। ধনপুর সিপিএম দলের দুর্জয় ঘাঁটি। উপনির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার সময়কালে সিপিএম দলের অস্তিত্ব নিয়ে যেখানে প্রশ্ন উঠেছিল সেখানে নির্বাচনের দিনক্ষণ যত ঘনিয়ে আসছে তখন সিপিএম মুখোশ ছেড়ে বেরিয়ে আসছে।রাজ্য মন্ত্রী যখন ঘোষণা করছেন সিপিএম দল নির্বাচনের দিন প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করে নেবে সেখানে তাদের রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে সিপিএম দল এই নির্বাচনি কেন্দ্রের উপজাতি জনপদে প্রচারে ঝড় তুলে দিয়েছে। আজ তারা নির্বাচনি প্রচারে তিপ্রা মথা দলকেও প্রচারে নামিয়েছে। ককবরকে দেওয়া স্লোগানে তিপ্ৰা মথা দল বলছে শাসকদল বিজেপিকে যেন ভোট দেওয়া না হয়। কেন বিজেপিকে ভোট দিতে বারণ করছে তার ব্যাখ্যায় তিপ্রা মথা দল বলে বিজেপি তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তাদের সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করছে। এডিসির প্রাপ্য অর্থ দিচ্ছে না, সাব জোনালে কোনও কাজ নেই। এডিসি এলাকায় প্রতিটি রাস্তা বেহাল হয়ে পড়েছে। এই সমস্ত বিষয় উত্থাপন করে এমডিসি ডলি রিয়াংয়ের নেতৃত্বে তিপ্ৰা মথা দল আজ আনন্দপুরে মিছিল ও বাড়ি বাড়ি প্রচার করে। অন্যদিকে, সিপিএম দলও তাদের প্রচারে ঝড় তুলে দিয়েছে। তাদের লক্ষ্য উপজাতি ভোট এবার যাতে বিভাজিত না হয়। কেননা গত নির্বাচনে উপজাতি ভোট বিভাজনেই জয় পেয়ে যায় বিজেপি। এবার তিপ্রা মথা প্রার্থী দেয়নি, সেজন্য উপজাতি ভোটের ফায়দা তুলতে চাইছে সিপিএম। উপজাতি জনপদে ঝড়ো প্রচার শুরু করেছে সিপিএম। গত কয়েকদিনে আনন্দপুর, চন্দুল, তৈবান্দালে প্রচার করে গেছেন প্রাক্তন এমডিসি পরীক্ষিৎ মুড়াসিং, কুমুদ দেববর্মা, রাধাচরণ দেববর্মা প্রমুখ। আজ থলিবাড়িতে নির্বাচনি সভা আয়োজিত করেছে সিপিএম। পথসভায় রাধাচরণ দেববর্মা, বিধায়ক শ্যামল চক্রবর্তী, মহকুমা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বিষ্ণু ত্রিপুরা, রামচন্দ্র নোয়াতিয়া আহ্বান জানান এই নির্বাচন নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে হবে। ২০২৩ সালে নির্বাচন হয়েছে। মাত্র ছয় মাসে কেন আবার নির্বাচন। শাসকদলের অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ের ফসল এই উপনির্বাচন।এলাকার দুরবস্থা নিয়ে শাসক দলের কোনও ভাবনা নেই। এলাকার প্রত্যেকটি জনপদের রাস্তার বেহাল দশা। রেগার কাজ নেই। কাজ করলেও মজুরি পাওয়া যাচ্ছে না। তিন চার মাস ধরে সামাজিক ভাতা পাওয়া যাচ্ছে না। ভাতা না পেয়ে অসহায় বৃদ্ধ- বৃদ্ধারা কঠিন অবস্থায় পড়েছে। সর্বত্র অভাবে মানুষের দমবন্ধকর অবস্থা। উপজাতি জনপদে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। বিজেপি ক্ষমতায় এসে এই ধনপুরের উন্নয়নে কিছুই করতে পারেনি। ধনপুরে যা কিছু হয়েছে সবই বাম আমলে। হাসপাতাল, রাস্তা, স্কুল, পানীয় জলর ব্যবস্থা সহ মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সিপিএম দলই উপজাতিদের জন্য কিছু করতে পেরেছে। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে, সামাজিক নিরাপত্তার স্বার্থে সিপিএম দলকে সমর্থনের আহ্বান জানান নেতৃত্ব। এবারের উপনির্বাচনে প্রচারের শেষ মুহূর্তে মানিক সরকার আগামী ৩১ আগষ্ট উপজাতি জনপদ উত্তর তৈবান্দালে নির্বাচনি সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন। এদিনই বিধানসভা কেন্দ্রের মুসলিম অধ্যুষিত জনপদ শোভাপুরে বক্তব্য রাখবেন দলের রাজ্য সম্পাদক জিতেন চৌধুরী। এছাড়া প্রতিদিনই এই জনপদের নানা প্রান্তে পারিবারিক সিপিএম কর্মীরা প্রচার করছেন।

Dainik Digital

Recent Posts

গয়নার ল্যাবে তৈরি হলো বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম রুবি!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বাংলায় চুনি, ইংরেজিতে রুবি।চুনির রং কতটা টকটকে লাল, তার উপর এই মানিকের দাম…

8 hours ago

মুখ্যমন্ত্রীর মুখ বাঁচাতে পুলিশ প্রশাসনের নির্লজ্জ দ্বিচারিতা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-চাঁদারজুলুম নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে তথাকথিত সুশাসনের রাজ্যে প্রশাসনের নির্লজ্জ দ্বিচারিতা প্রকাশ্যে এলো।…

9 hours ago

কাজের বাজারে মন্দা!!

কেন্দ্রে ১০০ দিন পূর্ণ করল তৃতীয় মোদি সরকার।যদিও বর্তমান ক্ষমতাসীন কেন্দ্রীয় সরকারকে মোদি সরকার আখ্যা…

9 hours ago

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

1 day ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

1 day ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago