এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও সূত্র থেকে যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে,তাতে হাতে আর বড়জোর ত্রিশ দিন।এই ত্রিশ দিনের মধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের নেতা নির্বাচন হবে।অর্থাৎ ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নতুন জাতীয় সভাপতি নির্বাচন।বিভিন্ন সূত্রের দাবি আগামী মাসের ১০ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি নির্বাচন হতে পারে, যিনি বর্তমান জাতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার স্থলাভিষিক্ত হবেন। তবে দলীয় সূত্রের দাবি অনুযায়ী, দিল্লী বিধানসভা ভোটের ফলাফলের পরই বিজেপির’ নতুন সভাপতি নির্বাচণ করা হবে।
যে কোনও রাজনৈতিক দলের সভাপতি নির্বাচন একটি সাংগঠনিক প্রক্রিয়া। সেই প্রক্রিয়াকে সামনে রেখে দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক বিজেপি গত মাস খানেক আগে থেকেই তাদের সদস্যপদ সংগ্রহ প্রচারাভিযানের কাজ সম্পন্ন করেছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিজেপি ১০ কোটিরও বেশি নতুন সদস্যকে দলে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এখন বিভিন্ন রাজ্য শাখাগুলির সাংগঠনিক নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিচালনা করছে। এই প্রক্রিয়া শেষ হলে দলের নতুন জাতীয় সভাপতি নির্বাচিত করা হবে। স্বাভাবিকভাবেই গোটা দেশজুড়ে বিজেপির সাংগঠনিক তৎপরতা এখন একেবারে তুঙ্গে।
বিজেপির সংবিধান অর্থাৎ দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জাতীয় সভাপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে, অন্তত দেশের অর্ধেক রাজ্য শাখার সাংগঠনিক নির্বাচন শেষ করতে হবে। সেই মতো অন্যান্য রাজ্যের সাথে ত্রিপুরা প্রদেশেও বিভিন্ন স্তরে সাংগঠনিক নির্বাচন প্রক্রিয়া চলছে। বিভিন্ন মণ্ডল সভাপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। জেলা সভাপতি নির্বাচনে দলীয় বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। যদিও নতুন জেলা সভাপতিদের নামের তালিকা ইতিমধ্যে চূড়ান্ত করে নেওয়া হয়েছে। এখন শুধু ঘোষণার অপেক্ষা। এরপর ত্রিপুরা প্রদেশেও নতুন সভাপতি নির্বাচন হবে। বর্তমান রাজ্য সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্যের স্থলাভিষিক্ত হবেন অন্য কেউ। সূত্রের দাবি, এই ক্ষেত্রে বিধায়ক ভগবান-এর পাল্লাভারী বলে খবর।
সে যাই হোক, জাতীয় সভাপতি হিসাবে এমনো পর্যন্ত দলের পক্ষ থেকে এখন কারোর নাম ঘোষণা করা হয়নি। একাধিক নাম নিয়েই আলোচনা চলছে। সব আলোচনাই সম্ভাব্য এবং অনুমাননির্ভর। একাংশের মতে, নাড্ডার উত্তরসূরি কেন্দ্রীয় কোনও মন্ত্রী হতে পারেন বা দলের সাংগঠনিক কাঠামোর অভ্যন্তরের কেউ হতে পারেন। আবার একাংশের দাবি, বিজেপির জাতীয় সভাপতি দলিত সম্প্রদায়ের কেউ হতে পারেন। বর্তমান সভাপতি নাড্ডা ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের। আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেনী অর্থাৎ ওবিসির অন্তর্ভুক্ত। দলিত সম্প্রদায়কে কাছে টানতে এবং নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা দলিতবিরোধী অভিযোগ ঝেড়ে ফেলতে, বিজেপি এবার দলিত কোনও নেতা বা নেত্রীকে জাতীয় সভাপতি পদে বসাতে পারে। সম্প্রতি, সংসদে কংগ্রেস বিআর আম্বেদকর ইস্যুতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চাপে ফেলেছিল। শুধু তাই নয়, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে একজন দলিত সম্প্রদায়ের। যিনি সুযোগ পেলেই বিজেপির বিরুদ্ধে দলিতদের অবহেলা ও বঞ্চনার অভিযোগ তোলেন। অনেকে মনে করছেন, বিজেপির জন্য একজন দলিত নেতাকে জাতীয় সভাপতি পদে বসানো, বিরোধীদের জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হতে পারে। এই ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল, দলের সাধারণ সম্পাদক দুষ্যন্ত গৌতম অথবা উত্তর প্রদেশের মন্ত্রী বেবি রানি মৌর্য, এদের কেউ একজন সভাপতি পদে বসতে পারেন।
আবার দলের একাংশ অন্য সম্ভাবনার কথা বলছেন। তাদের মতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর পছন্দের ভিত্তিতে একজন কম পরিচিত এবং বিশ্বস্ত নেতা বেছে নিতে পারেন। সেই নেতা হবে এমন, যিনি শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশনা এবং কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন। কেউ কেউ বলছেন, বিজেপির নতুন সভাপতি নির্বাচন করার ক্ষেত্রে বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বিশেষ করে বিরোধী দলগুলিতে তরুণ নেতা নেত্রীদের উত্থানের পর এই সম্ভাবনা আরও প্রবল হয়ে উঠেছে। কংগ্রেসে রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী সমাজবাদী পার্টিতে অখিলেশ যাদব, তৃণমূলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, আরজেডিতে তেজস্বী যাদব-এরা সবাই তরুণ। প্রধানমন্ত্রী মোদি তরুণদের রাজনীতিতে এগিয়ে আসার পক্ষে বারবারই কথা বলতে শোনা যায়। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বিজেপি এবার বিভিন্ন রাজ্যে সাংগঠনিক স্তরে তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্বে নিয়ে আসছে। সবচেয়ে বড় উদাহরণ ত্রিপুরা। এমন অন্য রাজ্যগুলিতেও হচ্ছে বলে খবর। যা বেশ ইঙ্গিতপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
আবার রাজনৈতিক মহলের একটা অংশের ধারণা, বিজেপি এবার দক্ষিণ ভারত থেকে কোনও নেতাকে জাতীয় সভাপতি পদে বসাতে পারে। কেননা, দলের বড় পদগুলির মধ্যে দক্ষিণ ভারতের কোনও নেতা বা নেত্রী নেই। দক্ষিণ ভারতে দলের প্রভাব বিস্তার করতে এবং ভারসাম্য তৈরি করার জন্য বিশ্বের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল এবার এই পথে হাঁটতে পারে। তবে সবটাই আলোচনা ও জল্পনার মধ্যে রয়েছে। আসল বিষয় হচ্ছে, নতুন সভাপতি নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী মোদির পছন্দ, প্রভাব এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সমর্থনের পাশাপাশি আরএসএসের সবুজ সংকেত। এই সবগুলি যার পক্ষে যাবে, তাঁকেই নতুন জাতীয় সভাপতি পদে বসানো হবে। এটাই শেষ কথা। শেষ পর্যন্ত কী হয়? সেটাই এখন দেখার।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

সিকিমে ধসে আটকে থাকাদের উদ্ধারে এয়ারলিফ্ট!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-উত্তর সিকিমের বিভিন্ন জায়গায় আটকে থাকা পর্যটকদের এয়ারলিফ্ট দিয়ে উদ্ধারকাজ শুরু করল সেনা…

12 hours ago

পাকিস্তানের জেল থেকে পালালো ২০০ জেলবন্দী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-পাকিস্তানের করাচিতে মালির কারাগার থেকে ২১৬ জন কারাবন্দি কয়েদি পালিয়ে গেছে। ঘটনাটি ঘটে…

17 hours ago

গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধে, ৫২জনের মৃ*ত্যু !!

অনলাইন প্রতিনিধি :-গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলায় একদিনে ৫২জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত পাঁচ শতাধিক। অবরুদ্ধ…

19 hours ago

জি-৭ সম্মেলনে আমন্ত্রণ পাননি প্রধানমন্ত্রী মোদী!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-চলতি মাসের ১৫ থেকে ১৭ জুন কানাডাতে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন। এই…

19 hours ago

তুরস্কে ৫.৮ মাত্রার ভূমিকম্প, নিহত ১!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-তুরস্কের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মারমারিস এলাকায় মঙ্গলবার ভোরে ৫ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে মৃত্যু…

19 hours ago

সিসিলি দ্বীপে মাউন্ট এটনায় আগ্নেয়গিরির তাণ্ডব!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- ইতালির সবচেয়ে সক্রিয় দক্ষিণ-পূর্বের মাউন্ট এটনার আগ্নেয়গিরির একটি বড় অংশ ধসে পড়ে।…

19 hours ago