বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ!!

 বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

যে সমাজ যতবেশি বিজ্ঞানমনস্ক হইতে পারিয়াছে সেই সমাজ ততটা আগাইয়া গিয়াছে। ইহাই দুনিয়ার রীতি। বিজ্ঞানের বিশ্লেষণ ও নিরীক্ষণ দ্বারা সত্য বিষয়কে সামনে তুলিয়া ধরিয়া পথ চলাকেই উন্নয়ন বা সঠিক অর্থে বিকাশ বলা হইবে। আজ আমরা স্বাধীনতার সাত দশক পার করিয়া এক বিকশিত ভারতের জন্য আরও তিন দশক পথের অপেক্ষা করিতেছি। অন্যদিকে আমরা জীবনের সকল বিষয়ে ইউরোপীয় সকল উন্নত দেশের সহিত নিজের তুলনা করিতে ভালোবাসিতেছি। আমাদের এই ইউরোপমণ্যতা কেবলই দেখনদারি এবং ভাসাভাসা। একবারই সেই সকল উন্নত দেশের মতন যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ গড়িবার কথা ভাবিতেছি না। এই কথা মনে রাখিতে হইবে যে যদি একটি নীতিবান সমাজ গড়িতে হয় তাহা হইলে প্রথম ব্যক্তিকে নীতিপরায়ণ হইতে হয়। তেমনি একটি বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ গড়িতে হইলে শিশুকে যুক্তিবাদী করিয়া গড়িয়া তুলিতে হয়। সমাজবিজ্ঞানের পরিভাষায় শিশু মানে ছাত্র। ছাত্রদিগকে আমরা বিজ্ঞানের যে সংজ্ঞা শিখাইয়া থাকি তাহাতে বলা হইতেছে, পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণিত জ্ঞানতত্ব প্রাণী ও পদার্থের রূপ ক্রিয়া ও মৌলিক গঠন সম্বন্ধে সূক্ষ্ম ব্যাপক বোধ। যে কোনও বিষয় বা জাগতিক ঘটনার সূক্ষুদ পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা নিরীক্ষার দ্বারা অন্তর্নিহিত সত্যের স্বরূপ নির্ধারণই হইলো বিজ্ঞান। এই সত্যের সামনে দাঁড়াইলে মানুষের মন ও দৃষ্টি হয় বিশ্লেষণাত্মক ও যুক্তিবাদী। তখনই জন্ম লয় বিজ্ঞানমনস্কতার পরম্পরায় বিজ্ঞানমনস্কতার সহিত কুসংস্কারের এক বিরোধ চলিতেছে। এই কুসংস্কার কী। এক রকম ধ্যান ধারনা এবং বিশ্বাস-যাহা দীর্ঘদিন ধরিয়া পরম্পরায় প্রবাহিত বা অনুসৃত। সেই সকল স্মৃতিগুলিকে আঁকড়াইয়া থাকা, যাহার সহিত বিজ্ঞানের কোনও যোগ নেই। যাহা বিজ্ঞানপ্রমাণিত নয় তাহাকে অসত্য বলা যাইবে এবং ইহাকেই কুসংস্কার বলা হইবে। এই সকল কুপ্রথা মানব সমাজ এবং কোনও জাতির জীবনে মঙ্গলজনক নহে। সকলই যুক্তিহীন অসাড় ভাবনামাত্র। এই ভাবনা হইতে শিশুদের সরাইয়া সত্য সুন্দরের মুখোমুখী করিতে পারে কেবল বিজ্ঞানের চর্চা ও শিক্ষা। আজকের শিশু যদি কে যুক্তিবাদী ও সত্যসাধক হয় তাহা হইলে আগামীর সমাজ এবং রাষ্ট্রের আগমন ঠেকাইবার ক্ষমতা কাহারো থাকিবে না। কিন্তু আমরা কি আমাদের শিশুদের বিজ্ঞানমনস্ক করিতে পারিতেছি?পরিতাপের বিষয় যে দেশের রাজনীতি যাহাতের হাতে সেই কাতারের অধিকাংশই বিশ্বাস অন্ধবিশ্বাস আর সংস্কার কুসংস্কারের ধ্বজা উড়াইয়া চলা লোক। সাধারণ মানুষ সস্তা যাহা পছন্দ করে তাহার পক্ষেই নিজেদের দাঁড় করিয়া ক্ষমতার লোভে অন্ধবিশ্বাস আর কুসংস্কারের পক্ষে মানুষকে উদ্‌বুদ্ধ করিয়া থাকে রাজনীতিকেরা। যা ব্যক্তি, সমাজ রাষ্ট্রকে আগাইয়া যাইতে দেয় না। এই ধরনের সস্তা রাজনীতি এক প্রকার নীতিহীন বিষয় ছাড়া আর কিছুই নহে। এই সকল রাজনীতিকেরা সত্যের সাধক নয়, তাই তাহারা দেশ হিতৈষীও নহেন। কিন্তু দেখা গিয়াছে এতো সবের পরেও বিদ্যালয়ে বিদ্যালয়ে স্কুল সিলেবাসে বিজ্ঞান পড়াইবার পাশাপাশি তাহাদের হাতে কলমে বিজ্ঞান শিখাইবার কাজ করিতেছে শিক্ষকেরা। যা এই রাজ্যের মানুষের জন্য একটি সাংঘাতিক রকম ভালো সংবাদ হইতে পারে কোমলমতি শিশুদের হাতেকলমে বিজ্ঞান শেখাইয়া দিবার কাজটি যাহারা করিতেছে সেই সকল শিক্ষকেরা নিঃসন্দেহে প্রণম্য। সম্প্রতি এই রকম প্রায় চল্লিশটি স্কুলের শিক্ষকশিক্ষিকা একত্রিত হইয়া নিজেদের মধ্যে অভিজ্ঞতার আদান প্রদান করিলেন সরকারী সভাগৃহ প্রজ্ঞা ভবনে। বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও পরিবেশ দপ্তরের অধীন বায়ো টেকনোলজি কাউন্সিল রাজ্যের ১৭২ টি উচ্চবিদ্যালয়ে এই কর্মকাণ্ড চালাইয়া যাইতেছে। শিশুদের হাতেকলমে বিজ্ঞান শিখাইবার পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় কীভাবে সচেতন করিয়া তোলা যায় সে সকলই শেখানো হইতেছে স্কুলে স্কুলে ক্লাব বানাইয়া। ডিএনএ ক্লাব নামে ক্লাবগুলির পরিচালনা করিতেছেন শিক্ষকেরাই। তবে সকল স্কুলেই সমান কাজ হইতেছে না। কাজকর্মের নিরিখে ৪০টি স্কুল ভালো কাজ করায় তাহাদের জন্য পরবর্তী বছরের আর্থিক সহযোগিতা
দেওয়া হইয়াছে দপ্তরের তরফে। বিষয়টি উৎসাহব্যঞ্জক যে দপ্তরের মন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মা নিজে সেই সভাগৃহে উপস্থিত হইয়া ক্লাবগুলির অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়াছেন। শিক্ষক, ছাত্রদিগকে উৎসাহিত করিয়াছে। শিক্ষকেরা অভিজ্ঞতায় জানাইয়াছেন, শিশুরা যদি হাতেকলমে কাজগুলি করিবার সুযোগ পায় তাহা হইলে সহজেই উৎসাহিত হয়। বই খাতার বাহিরে হাতেকলমে বিজ্ঞান শিক্ষায় ছাত্রদের উৎসাহ বাড়িতেছে বলিয়া আত্মতৃপ্তির কথা ব্যক্ত করিয়াছেন। দেখা গিয়াছে দপ্তরের ঐকান্তিকতা এবং শিক্ষকদের নিষ্ঠায় ছাত্ররা পরিবেশ লইয়াও কাজ করিতেছে। প্রজাপতি সুরক্ষা, চড়ুই সুরক্ষায় তাহাদের প্রজেক্ট সফল হইতেছে। নিজেদের আকারে ঔষধী গাছের বাগান বানাইতেছে। এই সকল গুরুমুখী শিক্ষা নব প্রজন্মকে সত্যের সম্মুখীন হইতে সাহস জোগাইবে এমন আশা আজ করাই যায়। নব প্রজন্ম বিজ্ঞানমনস্ক হইয়া দেশকে বিকশিত করুক, এই প্রত্যাশা থাকুক বর্তমান প্রজন্মের অন্তরে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.