বিজয় মিছিল না করার আহবান!

 বিজয় মিছিল না করার আহবান!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

জেলাস্তর থেকে মহকুমা, বিধানসভা কেন্দ্র হয়ে নির্বাচনি বুথ স্তর পর্যন্ত শান্তি বৈঠক শেষ করল নির্বাচন দপ্তর। মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক এদিনও ফের শান্তিরক্ষার আহ্বান জানান, ভোট গণনা এবং নির্বাচনোত্তর পর্বে। রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন,দুই ও তিন মার্চ জয়ের পর কেউ যেন বিজয় মিছিল বের না করেন। আনন্দ উচ্ছ্বাসগুলো রাস্তায় না নিয়ে এসে নিজেদের জায়গায় যেন সীমাবদ্ধ রাখা উমাকান্ত হয়। প্রসঙ্গত,ভোটের সময়ে পথঘাটে যেসব প্রচারসজ্জা লাগানো হয়েছিল এবং এখনও যেখানে যেখানে বুথ অফিসগুলি রয়েছে সেগুলি সরিয়ে নিতেও অনুরোধ জানিয়েছিলেন সিইও। দেখা গেছে, শাসকদল এই অনুরোধে সাড়া দিলেও এই সাড়া সর্বত্র সমান নয় এবং অন্য দলগুলি এ নিয়ে আগ্রহী নয়। নির্বাচন দপ্তর ফল ঘোষণার পরের অশান্তিগুলি এড়াতেই পরিদর্শন এই অনুরোধ জানায়।এদিকে, মঙ্গলবার থেকেই গণনা কেন্দ্রগুলিতে শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি চলছে। ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বেষ্টনি রয়েছে ৬০ আসনের জন্য ২১টি গণনা কেন্দ্রে। দাগিয়ে দেওয়া হয়েছে একশো মিটার, দুশো মিটার সীমানা। নির্ধারণ করা হয়েছে বিভিন্ন দলগুলি কোথায় দাঁড়াবে সেই স্থান। মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক কিরণ গিত্যে এ দিন তিনি জা উমাকান্ত স্কুলের গণনা কেন্দ্রে দুটি মিডিয়া সেল-এর ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখেন। পরিদর্শনের সময় তার সাথে
ছিলেন পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার ডিস্ট্রিক্ট ইলেকশন অফিসার তথা জেলাশাসক মাইতে দেবপ্রিয় বর্ধন, ৮ – টাউন বড়দোয়ালি বিধান বিধ্যানসভা কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসার অরূপ দেব, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজদীপ দেব, সদরের এসডিপিও অজয় দাস প্রমুখ।উমাকান্ত একাডেমির নুতন বিল্ডিংয়ের গণনাকেন্দ্রে ১ থেকে ৫, ৯ থেকে ১১ করে এবং ১৩ নং বিধানসভা নির্বাচনি ক্ষেত্রের ভোট গণনা করা হবে।উমাকান্ত একাডেমির পুরাতন বিল্ডিংয়ের গণনা কেন্দ ৬ থেকে ৮,১৪ এবং ১৮ নং বিধানসভা নির্বাচন ক্ষেত্রের ভোট গনণা করা হবে।এই দুটি গণনাকেন্দ্রে সাংবাদিকদের জন্য দুটি মিডিয়া সেন্টার থাকবে। তাছাড়াও মুখ্য নির্বাচনি আধিকারিক কিরণ গিত্যে ও অন্য পদস্থ আধিকারিকগণ আজ জানা পুরাতন বিল্ডিংয়ে ১৮-সূর্যমণিনগর বিধানসভা কেন্দ্রের গণনা কেন্দ্রটিও পরিদর্শন করেন।পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় মুখ্য নির্বাচনি আধিকারিক কিরণ গিত্যে জানান,আগামী ২ মার্চ, সকাল ৮টা থেকে রাজ্যের ৬০টি বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটগণনা করা হবে মোট ২১টি স্কুলের কেন্দ্রে। তিনি জানান, সাংবাদিকদের গণনা কেন্দ্রের ভিতরে নির্দিষ্ট একটি কক্ষে সংবাদ সংগ্রহের সুবিধা থাকবে।তিনি জানান, গণনাকেন্দ্রে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয় রয়েছে। এই দুটি বিল্ডিংয়ে মোট ১৪টি কাউন্টিং হল তৈরি করা হয়েছে। তিনি জানান, সব কাউন্টিং টেবিলে একজন করে মাইক্রো অবজারভার থাকবেন। প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রের ৫টি করে ফসার ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ভিভিপ্যাট গণনা করা হবে। লটারির মাধ্যমে এই ৫টি ভপিও ভোটগ্রহণ কেন্দ্র নির্ধারণ করা হবে।মুখ্য নির্বাচনি আধিকারিক জানান, ৬০টি বিধানসভা কেন্দ্রে গড়ে ৫ রাউণ্ড করে গণনা হবে। ২ মার্চ গণনার দিন সকাল ৮টা থেকে প্রথমে পোস্টাল ব্যালট গণনা করা হবে। পোস্টাল রাতন ব্যালট গণনা শেষ হওয়ার পর ইভিএমের গণনা শুরু হবে।এদিন সকালে মোহনপুর বিধানসভা এলাকায় নির্বাচন কেন্দ্রভিত্তিক একটি জন্য শান্তিসভায় যোগ দেন মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক। মোহনপুর থেকে সংবাদ প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, শান্তিসভায় শান্তি, শৃঙ্খলা,সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধকে রক্ষা করে ত্রিপুরাকে দেশের মধ্যে সুনামের শিরোপা পরাতে ফলাফলের পর শান্তির পরিবেশ বজায় রাখতে শান্তিসভায় আহ্বান রাখলেন রাজ্য মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক আইএস কিরণ গিত্যে। মঙ্গলবার মোহনপুর বিধানসভা কেন্দ্রের ফকিরামুড়া স্কুলের মাঠে কেন্দ্রের ৩৭ ও ৩৮ বুথে মোহনপুর মহকুমা প্রশাসনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় শান্তিসভা। সভায় প্রশাসনিক আধিকারিক থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদেরও মুখে উঠে আসে সন্ত্রাস কিংবা প্রতিহিংসাকে কেউ প্রশ্রয় দিতে চান না এবং ঘৃণাও করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত পশ্চিম ত্রিপুরার ডিএম দেবপ্রিয় বর্ধন, লেম্বুছড়াস্থিত কৃষি কলেজের প্রিন্সিপাল টি কে মাইতি, মোহনপুর মহকুমা শাসক সুব্রত ভট্টাচার্য এবং হলিক্রস কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ফাদার সহ প্রত্যেকেই তাদের ভাষণে শান্তি সম্প্রীতির বিষয়টির উপর জোর দেন। স্বাগত ভাষণে মোহনপুর মহকুমাশাসক মহকুমার সর্বত্র শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় সকলের সহযোগিতা চাইলেন। কৃষি কলেজের প্রিন্সিপাল টি কে মাইতি নিজের বাসস্থানের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ এবং কর্মসূত্রে ত্রিপুরা রাজ্যের নির্বাচনোত্তর পরিবেশের তুলনা টেনে বুঝিয়ে দিলেন, প্রতিহিংসা কোনও কিছুরই সমাধান নয়। বলেন, জয় পরাজয় থাকবেই। ভালোবাসার মধ্য দিয়ে একে অপরকে টেনে আনুন। এদিন রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের সবাই নিজেদের মতো শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা ও সহযোগিতার আশ্বাস দিলেন। কংগ্রেস দলের প্রতিনিধি মদন লাল সাহার বক্তব্যে উঠে আসে সমাজসেবক তকমা ও রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, স্বাধীনতার ৭৫ বছর হলেও গণতন্ত্রের যে মূল উৎস রাজনৈতিক নির্বাচন, সেই উৎসবের পর শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করার বার্তা নিয়ে প্রশাসনের আসতে হচ্ছে। কেন আজও প্রশাসনকে শান্তির বার্তা নিয়ে আমাদের কাছে যেতে হচ্ছে। এটা সভ্য সমাজ কিংবা সুনাগরিকের দেশ হিসাবে কিংবা রাজ্য হিসাবে লজ্জার নয় কি! বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সমাজসেবকদের তালিকায় মঞ্চ আলোকিত হয়ে থাকে। রাজনৈতিক নেতা মদন লাল সাহা বলেন, আমরা যখন রাজনীতির অঙ্গনে যাই, তখন আমরা আমাদের সমাজসেবক তকমাটার দায়িত্বের কথা ভুলে যাই। নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে প্রতিহিংসার পথে পা রাখি। এই অবস্থার জন্য আগামী প্রজন্ম রাজনীতিকে সমালোচনার কাঠগড়ার আসামি হিসাবে দেখে। তাই প্রতিহিংসার আগুন না জ্বালিয়ে সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে সবাই মিলে একসাথে কাজ করতে আহ্বান রাখেন। এদিন মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক কিরণ গিত্যে জয় পরাজয় নিয়ে নিজের ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরলেন। বলেন তিনি দুবার অকৃতকার্য হওয়ার পর তিনবারের মাথায় আইএএস হয়েছেন। বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, যারা ফেল করবে, তারা মানুষের পাশে থেকে কাজ করলে অবশ্যই পুনরায় সাফল্য পাবে। অনুষ্ঠান আগাগোড়াই ছিল আবেগময়।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.