এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

রাজ্যসভায় সম্প্রতি বিতর্কে জড়িয়েছেন চেয়ারম্যান তথা উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়।বিতর্কের সূত্রপাত সমাজবাদী পার্টির সাংসদ জয়া বচ্চনকে সম্বোধন নিয়ে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে যায় যে পুরো বিরোধী জোটকে ওয়াকআউট করতে হয়।সংসদের বাইরে গিয়ে চেয়ারম্যানের ক্ষমা চাওয়ার দাবি তোলা হয়।এমনকী তার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার সপক্ষে সই সংগ্রহ অভিযানও চলে।কিন্তু এরই মধ্যে সংসদ অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি হয়ে যায়।ফলে এই বিতর্কের আপাতত ইতি হয়।সংসদের উচ্চকক্ষ বা আপার হাউস হল রাজ্যসভা।এই সভায় যারা সদস্য তারা সরাসরি জনপ্রতিনিধি নন।তাই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিশিষ্ট জনদের এই সভার সদস্য হবার জন্য মনোনীত করে। যদিও তাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন সংশ্লিষ্ট রাজ্যের বিধায়করা।এছাড়া কয়েকজন সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য রাষ্ট্রপতি তদের মনোনীত করেন।রাজ্যসভার মেয়াদ শেষ হয় না। কিন্তু সদস্যরা ৬ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। সংবিধানে এজন্য রাজ্যসভাকে আপার হাউস বলে।এবং এই হাউসের চেয়ারম্যান স্বয়ং দেশের উপরাষ্ট্রপতি।সুতরাং রাজ্যসভার অধিবেশনে বিভিন্ন আলোচনা মনোগ্রাহী, উচ্চমার্গের হবে তাই আশা করে সবাই।কিন্তু ইদানীংকালে দেখা যাচ্ছে রাজ্যসভা যেন লোকসভাকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি জয়া বচ্চন এবং চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডা চরম আকার ধারণ করে। ফলস্বরূপ গোটা বিরোধী শিবির ওয়াকআউট করে। জয়ার পাশে দাঁড়ান সকলেই।
জয়া বচ্চন পাঁচবারের সাংসদ।তাই সংসদ সম্পর্কে তিনি বেশ অভিজ্ঞ বলা যায়। অন্যদিকে চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড় বছর দুয়েক হল দেশের উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন।এর আগে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসাবে তার মেয়াদকাল ছিল বিতর্কে ভরা।রাজ্যসভার চেয়ারম্যান দেশের উপরাষ্ট্রপতি।অর্থাৎ দেশের সংবিধানিক পদাধিকারী হিসাবে তিনি দেশের ২ নম্বর নাগরিক।এহেন দেশের ২ নম্বর নাগরিক যখন রাজ্যসভায় অধিবেশন চালাতে গিয়ে কোন সদস্যের সাথে বচসায় জড়িয়ে পড়েন তা তার পদের সাথে খাপ খায় না, মানানসই নয়।জগদীপ ধনকড় যখন থেকেই রাজ্যসভায় দায়িত্ব সামলেছেন সে সময় থেকেই রাজ্যসভায় প্রায়শই বাকবিতণ্ডা লেগেই রয়েছে। এর আগে এই চেয়ার সামলেছেন বেঙ্কাইয়া নাইডু, ড. হামিদ আনসারি, ভৈরো সিং শেখাওয়াত, কৃষ্ণকান্ত, কে আর নারায়ণনের মতো গুণী ব্যক্তিত্বরা।তাদের সময়ে সামান্য বিষয়ে সদস্যদের সাথে বাকবিতণ্ডা- কেউ মনে করতে পারছে না।
লোকসভার স্পীকার কিংবা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান তাদের কাজ হল সভার কাজ সুচারুভাবে সম্পন্ন করা। এককথায় তারা শাসক প্যানেলের লোক হয়ে নির্বাচিত হলেও চেয়ারে বসার পর তারা নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সভার কাজ পরিচালনা করবেন এটাই প্রত্যাশিত। তারা অনেকটা ক্রিকেট মাঠের আম্পায়ার কিংবা ফুটবল মাঠের রেফারির ভূমিকায় থাকবেন।কিন্তু জগদীপ ধনকড়ের ক্ষেত্রে সেটা দেখা যাচ্ছে না,তিনিই যেন সরকারের রক্ষাকর্তা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন।বিরোধীরা সরকারকে আক্রমণ করলে তিনি হস্তক্ষেপ করছেন। বিতর্ক করছেন, তর্ক করছেন। এতে শাসক- বিরোধীতে তরজা হচ্ছে না,যেন চেয়ারম্যান-বিরোধীতে তরজা হচ্ছে-এই চিত্র এখন হামেশাই রাজ্যসভায় পরিলক্ষিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক জয়া বচ্চনের সাথে তার বিতর্কে তেমনটা দেখা গেছে।অথচ এক্ষেত্রে তার সামান্য নমনীয় হস্তক্ষেপেই ইস্যুটি শেষ হয়ে যেত।কিন্তু চেয়ারম্যান বিষয়টিকে অযথা বাড়তে দেন।আর এতে রাজ্যসভা একেবারে উত্তাল হয়ে ওঠে। এমনকী রাজ্যসভার বাইরে গিয়ে জয়া বচ্চন তাকে ক্ষমা চাইবারও দাবি তোলেন। বিরোধীরা এই ইস্যুতে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার জন্য এককাট্টা।একটি চিঠি তৈরি হয়। এতে ৮৭ জন বিরোধী সদস্য সই ও করেন। বিষয়টি নিয়ে কী এত জলঘোলার দরকার কী ছিল?
শুধু জয়া বচ্চনের ইস্যুতেই নয়, প্রতিটি ঘটনায় তিনি রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন।তর্ক জুড়ে দেন ডেরেক ও ব্রায়ান, সাগরিকা ঘোষ, সঞ্জয় সিং, রাঘব চাড্ডাদের সাথে। এতে কি তার সম্মান বাড়ছে না সম্মানহানি হচ্ছে? চেয়ারম্যান কি ভুলে গেছেন তিনি দেশের সম্মাননীয় মহামহিম উপরাষ্ট্রপতি।
সব মিলিয়ে বলা যায়, এই ইস্যু আপাতত ঠান্ডাঘরে গেলেও সংসদের পরবর্তী অধিবেশনে বিষয়টি নিয়ে ফের সরগরম হবে-বিরোধীরা তা জানিয়ে রেখেছেন। ততদিনে যদিও রাজ্যসভায় গরিষ্ঠ হয়ে যাবে শাসক দল। কিন্তু জগদীপ ধনকড়ের মেয়াদকাল রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হিসাবে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে কিনা তা তাকেই স্থির করতে হবে। না বিতর্ক তার চিরসঙ্গী হয়েই থাকবে?

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

11 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

11 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

1 day ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

2 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

2 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

2 days ago