বিতর্ক ও জল্পনা!!

 বিতর্ক ও জল্পনা!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

যার নিযুক্তি বহু বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল,তার আকস্মিক পদত্যাগ জন্ম দিল অপার রহস্যের।সময়মতো লোকসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে নির্বাচনি নির্ঘন্ট ঘোষণার জন্য হাতে আর সময় নেই। রাত ফুরোলেই ভোটের ঢাকে কাঠি পড়বে।এই রকম পরিস্থিতির মধ্যেই আচমকা দেশের নির্বাচন কমিশনারের পদ ছেড়ে দিলেন অরুণ গোয়েল।পাঞ্জাব ক্যাডারের এই আইএএস শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিতি আছে।

কংগ্রেস জমানায় উপেক্ষিত এই অফিসারকে বিজেপি শাসনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালনের মূল দায়িত্ব ছিল এই অফিসারের উপরই। এর আগে তিনি ভারী শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। মোদি তাকে কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্কৃতি সচিবের দায়িত্বও দিয়েছিলেন।আবার তিনিই আচমকা এই পদে স্বেচ্ছা অবসর নেওয়ার ২দিনের মধ্যেই দেশের নির্বাচন কমিশনার পদে নিযুক্তিও পেয়েছিলেন।যা নিয়ে পরবর্তী সময়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়।যদিও সুপ্রিম কোর্টে গোয়েলের নিযুক্তি সম্পর্কিত এই মামলাটি খারিজ হয়ে গিয়েছিল।সেই গোয়েল আচমকা গত শনিবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনারের পদ থেকে ইস্তফা দেন।এমন একটা সময়ে এই পদত্যাগ, যখন আর সপ্তাহখানেকের মধ্যেই দেশের ভোটের নির্ঘন্ট ঘোষিত হওয়ার কথা।অথচ ২০২৭ পর্যন্ত তার কাজের মেয়াদ ছিল।তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, তিনসদস্যক ভারতের নির্বাচন কমিশনে গত ফেব্রুয়ারীতে একজন ইসি মেয়াদ পূর্ণ করে অব্যাহতিদেয় এখন গোয়েল সরে দাঁড়ানোয় তিন সদস্যের কমিশনে একমাত্র সদস্য রয়েছেন

সিইসি রাজীব কুমার।এই অবস্থায় কেন এই রহস্যময় পদত্যাগ এবং একমাত্র মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের উপস্থিতিতে কীভাবে এখন ভোটের নির্ঘন্ট প্রকাশ করা হবে তা নিয়ে বিস্তর চমক সৃষ্টি হয়েছে। এখন শূন্য দুই নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ কীভাবে হবে তা নিয়েও রহস্য বাড়ছে। কারণ এতদিন নির্বাচন কমিশনারের নিযুক্তি দিতেন প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী নেতা এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। সম্প্রতি আইন পরিবর্তন করে কেন্দ্রীয় সরকার স্থির করেছে দেশের নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করবেন প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার কোন একজন শীর্ষ মন্ত্রী এবং লোকসভার বিরোধী দলনেতা।স্বাভাবিক কারণেই লোকসভা নির্বাচনের মুখে নতুন দুইজন নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ কী রকম হতে চলেছে তা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই সব মহলে বেশ আগ্রহ তৈরি হয়েছে।এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অরুণ গোয়েলের পদত্যাগের কারণ। কেননা বর্তমান মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের মেয়াদ আগামী ২৫ সালের ফেব্রুয়ারীতে শেষ হওয়ার কথা।সেক্ষেত্রে পরবর্তী সিইসি হতেন অরুণ গোয়েল।এখানে দেখা দিয়েছে জল্পনা।যদিও পদত্যাগপত্রে গোয়েল ব্যক্তিগত কারণের কথাই উল্লেখ করেছেন।কিন্তু রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ এই পদত্যাগের পেছনে রাজনৈতিক চাপ কিংবা প্রশাসনিক মতবিরোধের তত্ত্বকে বড় করে দেখছেন।কারণ সর্বশেষ গোয়েল তার দায়িত্ব পালন করার জন্য পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনি পরিস্থিতি দেখতে কলকাতায় এসেছিলেন। কিন্তু সেখানে নির্বাচনি পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকের মধ্যেই মাঝপথে তিনি আলোচনা ছেড়ে বেরিয়ে যান।পরবর্তী সময়ে দিল্লীতেও কমিশনের বৈঠকে যোগ দেননি। এখানেই রহস্য ও জল্পনা ডালপালা বিস্তার করছে। এক্ষেত্রে অরুণ গোয়েলের লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার তত্ত্ব সামনে আসছে। আবার এমনটাও প্রচার হচ্ছে যে, সরকারের সঙ্গে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যা গোয়েলের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। ঘটনা হল, পদত্যাগের দুই দিন অতিক্রান্ত হলেও এখনো রহস্যের জট কাটেনি।ভোটের প্রাক্কালে গোয়েলের এই আকস্মিক পদত্যাগ নির্বাচন কমিশনের জন্য যে বড় ধাক্কা তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

কারণ বর্তমানে গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়ার দায়িত্ব একাই সামলাতে হচ্ছে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে। অরুণগোয়েলের পদত্যাগ এবং উদ্ভূত পরিস্থিতির পেছনে রাজনৈতিক কারণ লুকিয়ে থাকতে পারে বলে অনেকে মনে করলেও ভোটের মুখে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ২ টি শূন্যপদ পূরণ করে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীর মাধ্যমে সার্চ কমিটি এই সংক্রান্ত প্যানেল তৈরি করে যথাসম্ভব পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করবে এটা বলাই বাহুল্য। কিন্তু যে কারণে এত বিতর্ক ও রহস্য দানা বাঁধছে তা জনসমক্ষে প্রকাশ পাওয়াটাও সুস্থ গণতান্ত্রিক পরিবেশ পরিমণ্ডলের জন্যও জরুরি।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.