বিদেশি রিপোর্টই অস্ত্র!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

আনমফুল অ্যাক্টিভিটি অ্যান্ড প্রিভেনশন অ্যাক্ট অর্থাৎ বেআইনি প্রতিরোধী আইন, প্রয়োগ হল দেশের একটি সংবাদমাধ্যম ও এর সঙ্গে যুক্ত বেশকিছু সাংবাদিকের বিরুদ্ধে। এই আইনের অধীনে দিল্লীর একটি নিউজ পোর্টালের অফিস সহ প্রায় ৩০টি পৃথক পৃথক স্থানে একযোগে অভিযান চালায় পুলিশ। মঙ্গলবারের এই অভিযানে বেশকিছু সাংবাদিক সহ মোট ৪৭ জনের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়।

তাদের বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইস এবং কিছু নথি পরীক্ষা করার জন্য বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অভিযুক্তদের মধ্যে নিউজ পোর্টালের সম্পাদক ও এক সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়। শুধু সাংবাদিক কিংবা নিউজ পোর্টালের অফিসেই নয়, মঙ্গলবার দিল্লী পুলিশের স্পেশাল সেল দেশবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে যাদের বাড়িঘরে হানা দিয়েছে, তল্লাশি চালিয়েছে, কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করেছে সেই দলে বেশ ক’জন বিখ্যাত সাংবাদিক ছাড়াও ইতিহাসবিদ, সমাজকর্মী, ধারাভাষ্যকর, লেখক ও লেখিকা, কৌতুকাভিনেতা এবং গ্রাফিক্স ডিজাইনারও রয়েছেন। দিল্লী, গুরগাঁও, গাজিয়াবাদ, মুম্বাই একসাথে এতগুলো স্থানে সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বাড়িতে পুলিশি কড়া নাড়ার ঘটনা নিঃসন্দেহে নজির। তার চেয়েও বিরল ঘটনা হল সন্ত্রাসবিরোধী এবং দেশবিরোধী আইনের মতো কঠোরতম ধারায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার ঘটনা।সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা তথা ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ভারতের অবস্থান একেবারেই নীচের সারিতে। জি ২০ তালিকাভুক্ত যে দেশগুে রয়েছে, তাতে ভারতের সংবাদমাধ্যমের স্থান নিচে।এ বছর ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের যে সূচক প্রকাশিত হয়েছে তাকে ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১৬১ নম্বরে। অথচ ২০ স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের সূচকের তালিকায় ভারতের অবস্থান এতটা নিম্নমুখী ছিল না।আর দিন যত যাচ্ছে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীন অবস্থান ততই দুর্বল ও নড়বড়ে হচ্ছে।দিল্লীর এক নিউজ পোর্টালে পুলিশি হানাদারি এবং সঙ্গে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ভারতের অবস্থান- এই দুইয়ের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজা হয়তো কাঙ্ক্ষিত নয়।কিন্তু এর প্রাসঙ্গিকতা এসে গেলো একাধিক কিছু কারণে। কারণ সমালোচকরা বলছেন, অল্প কিছুদিন আগেই গুজরাট হিংসার উপর বিবিসির তথ্যচিত্র ভারতে নিষিদ্ধ ঘোষণার পর মুম্বাই ও দিল্লীতে একযোগে বিবিসির অফিসে আয়কর হানা হয়েছিল।ঠিক তেমনি গত আগস্টে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল নিউইয়র্ক টাইমস।যাতে বলা হয়েছিল,এ গ্লোবাল ওয়েব অব চাইনিজ প্রোপাগাণ্ডা লিডস টু এ ইউ.এস.। এই রিপোর্টের সূত্র ধরেই মঙ্গলবার কাকভোরে একের পর এক সাংবাদিকের বাড়িতে কেন্দ্রীয় এজেন্সির হানাদারি শুরু হয়।

চিনের টাকায় বেআইনিভাবে এই নিউজ পোর্টাল চলছে এই অভিযোগের ভিত্তিতে একাধিকবার ওই অফিসে হানাদারি হয়।ইনকাম ট্যাক্স রেইড হয় সংস্থার দপ্তরে। তারপরই এই বছর আগষ্টে যে প্রকাশিত প্রতিবেদনের উপর ভর করে দিল্লী পুলিশ এবং ইডির তেড়েফুঁড়ে ময়দানে নাম তা হলো, মার্কিন এক ধনকুবের চিনের অর্থ এই নিউজ পোর্টালে ঢালছে। চিনের হয়ে প্রচারের জন্য বিদেশ থেকে তহবিল গ্রহণের অভিযোগও রয়েছে এই অনলাইন পোর্টালের বিরুদ্ধে। যে কাগজটি এই প্রতিবেদন ছেপেছে তার অনেক আগে থেকেই পুলিশের দাবি এই নিউজ পোর্টালটি একটি বিপজ্জনক ওয়েব মিডিয়া। লক্ষণীয় হল, এই পোর্টালের এক সাংবাদিক সাম্প্রতিক অতীতে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দিয়ে দাবি করেন তার ফোন পেগাসাস স্পাইওয়ার দিয়ে হ্যাক করা হয়েছে।আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে টানা লিখে গেছেন তিনি। হিন্ডেন বার্গও সেই সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করেছে আদানির কীর্তি ফাঁসে। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হল সাংসদ পদ ফিরে পেয়ে যেদিন রাহুল গান্ধী লোকসভায় পা রাখলেন, সেদিন প্রথমে সংসদে এবং পরে সংসদের বাইরে চিনের সঙ্গে রাহুলের ঘনিষ্ঠতা এবং দেশবিরোধী কার্যকলাপ নিয়ে সরব হলেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে।তিনি তার অভিযোগের প্রমাণ দিতে গিয়ে দুবে ওই একই পত্রিকার একটি প্রতিবেদনের আশ্রয় নিয়েছিলেন।বিস্ময়কর ঘটনা হল,কখনও রাহুলের সঙ্গে চিন ঘনিষ্ঠতা,কখনও চিনের অর্থে নিউজ পোর্টাল পরিচালনার অভিযোগ সব ক্ষেত্রেই শাসকশক্তি ওই পত্রিকার প্রতিবেদনের সাহায্য নিয়ে তাকেই ধ্রুব সত্য বলে পুলিশ লেলিয়ে দেওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকলেও ওই সংবাদপত্রই যখন করোনাকালে ভারত সরকার প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা চেপে যাচ্ছে অভিযোগ তুলে প্রতিবেদন প্রকা করে তখন ওই সংবাদপত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং সেই সংবাদপত্রের সঙ্গে বিরোধী শক্তির যোগসূত্রের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছিল শাসকেরা। এখানেই স্বাধীন মিডিয়া নিয়ে সরকারের মাথা ব্যথা এবং ভীতির কারণ স্পষ্ট উঠছে। প্রশ্ন করলেই যদি রাজরোষ হয় এবং ক্ষমতার পক্ষে ভজনকীর্তন করলেই যদি পছন্দের মিডিয়া হয় তাহলে তা গণতন্ত্রের জন্য সমূহ বিপদ। ইতিমধ্যেই নিউজ পোর্টাল ইস্যুতে দেশের বিভিন্ন মিডিয়া সংগঠন সহ এডি গিল্ড তাদের উৎকণ্ঠার পাশাপাশি এ কথাও স্পষ্ট করেছে, আইন নিশ্চয়ই আইনের পথে চলবে।কিন্তু মিডিয়ার কণ্ঠরোধের কোনও অপকৌশল কোনওভাবেই বাঞ্ছনীয় নয়। মনে রাখতে হবে গণতন্ত্রের অন্যতম মাপদন্ড স্বাধীনতা।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

কুম্ভ থেকে ফেরার পথে দুর্ঘটনার কবলে জেএমএম সাংসদ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-কুম্ভ থেকে পুণ্যস্নান সেরে ফিরছিলেন। ফেরার পথেই পথ দুর্ঘটনার কবলে পড়লেন ঝাড়খণ্ড মুক্তি…

4 hours ago

শ্রম দপ্তরে এক করণিকের বিরুদ্ধে অর্থ লুঠের অভিযোগ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-সুশাসনে আর্থিক দুর্নীতি জাঁকিয়ে বসেছে। সরকারী এবং সরকার অধিগৃহীত বিভিন্ন দপ্তরে যেন অর্থ…

6 hours ago

চার বছর ধরে আটকে থাকা পদোন্নতি মিললো দুই ঘণ্টায়!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-চার বছর ধরে পদোন্নতি ফাইলবন্দি। যদিও ইউজিসির নির্দেশিকায় ২০২২ এর ২১ এপ্রিল থেকেই…

7 hours ago

খুব বেশি দূরে নয়, যখন আসাম আদর্শ হবে: মোদি।।

অনলাইন প্রতিনিধি :-উত্তর পূর্ব ভারত মঙ্গলবার ভবিষ্যতের একটি নতুন যাত্রা শুরু করছে।আসামের অবিশ্বাস্য সম্ভাবনা ও…

7 hours ago

সাসপেন্ড ১২ জন আপ বিধায়ক!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-নতুন সরকার গড়ার পরেই ‘আপের শেষ দেখে নেওয়ার’ হুঁশিয়ারি দিয়েছিল পদ্ম শিবির এবার…

1 day ago

শিখ দাঙ্গায় প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ সজ্জন কুমারের যাবজ্জীবন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইন্দিরা গান্ধী হত্যা পরবর্তী তে ১৯৮৪-এর শিখ ধর্মাবলম্বী বাবা যশবন্ত সিং ও ছেলে…

1 day ago